আজ ৭ এপ্রিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে দিবসটি উদ্‌যাপিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য—জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত। যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্য-সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। বছরের প্রতিটি ঋতু আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগের প্রকোপও বেড়ে যায়। বিশেষভাবে শিশুদের ক্ষেত্রে এই সময়ে বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা.

মো. সাইফুল্লাহ বলেন, ‘যেহেতু শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে, তাই এই সময়ে তারাই বিভিন্ন রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শীত থেকে গরমে গেলে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগগুলো বেশি দেখা দেয়, আর গরম থেকে শীতের দিকে গেলে ভাইরাসজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ে। তাই ঋতু পরিবর্তনের সময় আমাদের সচেতন ও প্রস্তুতি থাকা দরকার।’

শীত থেকে গরম: যে রোগগুলোর প্রকোপ বাড়ে

শীত শেষে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলে আমাদের শরীর নতুন আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সময় নেয়। এ সময় বেশ কিছু রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। যেমন—

ডায়রিয়া ও হিট স্ট্রোক: শীতের তুলনায় গরমে পানি ও খাবারের দ্রুত দূষণ হয়, যা ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া প্রচণ্ড গরমে শরীর অতিরিক্ত ঘাম ঝরিয়ে পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে, যা হিটস্ট্রোকের কারণ হতে পারে।

টাইফয়েড: দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করলে টাইফয়েড হয়।

ত্বকের সমস্যা: অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্রতার কারণে ঘামাচি, ছত্রাকজনিত সংক্রমণ ও ত্বকের অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়তে পারে।

গরম থেকে শীত: যে রোগগুলোর প্রকোপ বাড়ে

গরমের পর শরীর শীতের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সময় নেয়, ফলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় নিম্নলিখিত রোগগুলোর ঝুঁকি বাড়ে—ঠান্ডা ও ফ্লু: ঠান্ডা আবহাওয়ায় ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস বেশি সক্রিয় হয়, ফলে সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও জ্বর দেখা দেয়।

নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস: শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ফুসফুসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

ডেঙ্গু: যদিও ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণত বর্ষাকালে বেশি থাকে, তবে বছরের শেষভাগে কিছু এলাকায় সংক্রমণ চলমান থাকতে পারে, বিশেষ করে যদি বৃষ্টিপাত হয় ও মশার বংশবিস্তার অব্যাহত থাকে।

ঋতু পরিবর্তনের সময় সুস্থ থাকার উপায়

ডা. মো. সাইফুল্লাহর মতে, ঋতু পরিবর্তনের সময় যে রোগগুলো বেশি দেখা দেয়, সেগুলোর প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই বেশি ভালো। এতে ভোগান্তি কমে। তাই এই সময়ে বেশ কিছু সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরি। যেমন—

পর্যাপ্ত পানি পান: পানিশূন্যতা রোধে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা ভালো।

স্বাস্থ্যকর খাবার: এই সময়ে মৌসুমি ফল ও শাকসবজি বেশি খেতে হবে, যাতে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এগুলো রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা: হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং রান্নার আগে ও খাওয়ার আগে সঠিক নিয়ম মেনে হাত ধোয়া জরুরি।

সঠিক পোশাক পরিধান: শীত থেকে গরমে গেলে হালকা ও বাতাস চলাচলযোগ্য কাপড় পরা ভালো, আর গরম থেকে শীতে গেলে উষ্ণ পোশাক পরতে হবে।

পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম: শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। সেই সঙ্গে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ: যেকোনো ধরনের অসুস্থতা অনুভব করলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

প্রসঙ্গত বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া সম্ভব, যা দ্রুত ও সহজ সমাধান দিতে পারে। এমনই একটি প্ল্যাটফর্ম ‘সুখী’, যেখানে বিশেষ মূল্য মাত্র ২০ টাকা ফি দিয়ে অনলাইনে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে পারেন। এ ছাড়া রয়েছে যেকোনো রোগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ, হোম ল্যাব টেস্ট সার্ভিস, বাসায় ওষুধ সরবরাহসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবার সমাধান। আর ঘরে বসেই এমন সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় আগ্রহীদের সময় ও ভোগান্তি দুটোই কমায়।

তাই ঋতু পরিবর্তনের সময়ে বা যেকোনো অসুস্থতায় সুখী (Shukhee)-র ওয়েবসাইটে অথবা অ্যাপ থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র সময় এই সময়

এছাড়াও পড়ুন:

ঈশ্বরদীর দাদাপুরে জমির বিরোধে সংঘর্ষে দু’পক্ষে ১০ জন হাসপাতালে

পাবনার ঈশ্বরদীতে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের দাদাপুর গ্রামে বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার সকালে এ ঘটনায় থানায় মামলা নথিভূক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঈশরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম।

পুলিশ জানায়, রোববার বিকেলে উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের দাদাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে হন দাদাপুর গ্রামের রাসেল হোসেনের স্ত্রী মনিরা খাতুন, শাহিন হোসেনের ছেলে সিয়াম হোসেন, মিনারুল ইসলামের ছেলে পারভেজ, নাছির মণ্ডলের ছেলে রায়হান মণ্ডল, সজিব হোসেনের স্ত্রী স্বর্ণা খাতুন, সাইদুল মণ্ডলের মেয়ে তুবা খাতুন, মৃত মন্টু মণ্ডলের ছেলে শাহিন মণ্ডলসহ অন্তত ১০ জন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জমি-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ওই এলাকার সেলিম মন্ডল ও তার পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে আলম মাঝি ও তার অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ চলছিল।এ নিয়ে আদালতে একটি মামলায় কয়েকদিন আগে সেলিম মণ্ডলের পক্ষে রায় হয়। গতকাল রোববার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে সেলিম মণ্ডল প্রতিপক্ষদের বিষয়টি অবগত করে ওই জমি চাষ করতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে প্রথমে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষই লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত ১০ জন গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে মনিরা, স্বর্ণা ও রায়হানসহ মোট চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

এ ঘটনায় ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম শহীদ জানান, খবর পেয়ে এলাকায় পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আজ সোমবার আহতদের মধ্যে সেলিম মণ্ডল বাদী হয়ে ২০-২৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। তবে এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ