ঢাকায় শুরু হয়েছে চারদিনের বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই সম্মেলন শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০ দেশের বিনিয়োগকারীসহ ছয় শতাধিক প্রতিনিধি এতে অংশ নিচ্ছেন। পাশাপাশি দেশেরও ২ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
সম্মেলনের উদ্বোধনীতে বাংলাদেশ স্টার্টআপ কানেক্ট-২০২৫ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে কি-নোট স্পিকার ছিলেন কনস্টেলেশন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান তানভীর আলী।
সেশনে শেয়ারট্রিপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও সাদিয়া হকের সঞ্চালনায় একটি উচ্চ স্তরের প্ল্যানারি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, আইসিটি বিভাগের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তাইয়্যেব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.
এর আগে গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে সম্মেলনের বিস্তারিত জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
তিনি জানান, প্রথম দিন দুটি ট্র্যাকে অনুষ্ঠান হবে। প্রথম ট্র্যাকে ৬০ জনের বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীকে নিয়ে একটি স্পেশাল ফ্লাইট চট্টগ্রাম যাবে। সেখান থেকে কোরিয়ান ইপিজেড ও মিরসরাইতে স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শন শেষে রাতে ফিরে আসবেন তারা।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও জানান, যারা যাচ্ছেন তারা হলেন; সেই সব উদ্যোক্তা যারা মনে করছেন, তাদের সেখানে একটি কারখানা স্থাপন করতে হবে। তাদের জায়গা-জমি লাগবে। তাদের জন্য আমরা কী ধরনের সাপোর্ট বা সিস্টেম তৈরি করতে পারি, তা তারা সরেজমিনে দেখবেন। অন্যদিকে, আজ সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টার্টআপ কানেক্ট নামে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি রয়েছে। সেখানে যেসব আরলি স্টেজ স্টার্টআপ এবং ভেঞ্চার বিনিয়োগকারী আসছেন তাদের মধ্যে ম্যাচ মেকিং ইভেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও প্যানেল হবে। সারাদিন স্টার্টআপ ইভেন্টকে ফোকাস করা হবে।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকালের দিকে বিনিয়োগকারীরা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে যেখানে জাপানি ইকোনমিক জোন রয়েছে সেখানে সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। তারা সেখানের কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে কী ধরনের কর্মকাণ্ড হচ্ছে- তা বুঝে তাদের বিনিয়োগের জন্য কতটুকু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা দেখবেন। দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বব্যাংক ও আইএলওর সঙ্গে কিছু অ্যানগেজমেন্ট রয়েছে। তাদের এফডিআই সম্পর্কিত কিছু ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। বুধবার (৯ এপ্রিল) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও সারাদিন একাধিক (৩-৪টা) প্যারালাল অনুষ্ঠান চলবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাষ্ট্রপতির সম্মতি, ওয়াক্ফ বিল আইনে পরিণত
ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিক্ষোভ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র আপত্তির মধ্যেই ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিলে সম্মতি দিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এর মধ্য দিয়ে বিতর্কিত বিলটি আইনে পরিণত হলো।
গত শনিবার আইন মন্ত্রণালয়ের নোটিশে বলা হয়, ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫ এবং মুসলমান ওয়াক্ফ (রহিতকরণ) বিল ২০২৫ দুটি বিলেই সম্মতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। পার্লামেন্টের বাজেট অধিবেশনে বিল দুটি পাস হয়।
গত বুধবার গভীর রাতে বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হয়। বিলের পক্ষে ২৮৮ আর বিপক্ষে ২৩২টি ভোট পড়ে। পরদিন উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিলটি ১২৮–৯৫ ভোটে পাস হয়।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল উত্থাপনের পরপরই এ নিয়ে লোকসভা অধিবেশন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এনডিএর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন লোকসভায় কংগ্রেসের উপনেতা গৌরব গগৈ। তিনি বলেন, এই বিল সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর ওপরে আঘাত। এর মাধ্যমে সরকার সংবিধান দুর্বল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মর্যাদাহানি, ভারতীয় সমাজকে বিভক্ত ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভোটাধিকারবঞ্চিত করতে চায়।
তবে ওয়াক্ফ বিল পাসের ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে মন্তব্য করেন বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, এটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপকারে আসবে, যারা নিজেদের চাওয়া ও সুবিধা উভয় থেকেই বঞ্চিত।
এই বিলের সমালোচনা করে গত বৃহস্পতিবার সকালে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী সংসদীয় দলের বৈঠকে বলেন, দেশকে বিজেপি ক্রমেই এক গভীর খাদের কিনারে দাঁড় করাচ্ছে। বারবার তারা সংবিধানের অমর্যাদা করছে।
লক্ষ্য ওয়াক্ফ সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ
দৃশ্যত ওয়াক্ফ সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ নিতেই এই বিল পাস করা হয়েছে। ওয়াক্ফ বিলের সবচেয়ে বিতর্কিত ধারাগুলোর একটি হলো, এখানে একজন অমুসলিমকে ওয়াক্ফ বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিতর্কিত ধারা অনুযায়ী রাজ্যগুলোর ওয়াক্ফ বোর্ডে নিজ নিজ রাজ্য সরকার অন্তত দুজন অমুসলিমকে নিয়োগ দিতে পারবে। একজন জেলা প্রশাসক (ডিসি) বিতর্কিত সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ হিসেবে নির্ধারণ বা সরকারের মালিকানায় হস্তান্তর করার ক্ষমতা পাবেন।
প্রসঙ্গত, ওয়াক্ফ সম্পত্তি হলো সেই স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, যা আল্লাহর নামে নিবেদিত। পুরোনো আইন অনুযায়ী, কোনো সম্পত্তি ওয়াক্ফ ঘোষণার একমাত্র অধিকারী ছিল ওয়াক্ফ বোর্ড। নতুন বিলে সেই অধিকার দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে।
ভারতে ওয়াক্ফ আইন প্রথম পাস করা হয় ১৯৫৪ সালে। ১৯৯৫ সালে সেটি সংশোধন করে ওয়াক্ফ বোর্ডের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। সেই থেকে বিজেপির অভিযোগ, ওয়াক্ফর বিপুল সম্পত্তি একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ভোগ করছে।
তীব্র প্রতিক্রিয়া
এদিকে ওয়াক্ফ বিল পাস হতে না হতেই সুপ্রিম কোর্টে এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি মুসলিম সংগঠন থেকে মামলা করা হয়। সেই সঙ্গে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ড জানিয়েছে, এই আইনের বিরুদ্ধে তারা দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করবে। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গসহ দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ হয়েছে।
পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে বিলটি পাস হওয়ার পর গত শুক্রবার বিরোধী দল কংগ্রেস জানায়, তারা সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করবে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই লোকসভার দলীয় নেতা মুহাম্মদ জাভেদ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। একই দিনে মামলা করেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) প্রধান ও লোকসভার সদস্য আসাউদ্দিন ওয়েইসি। তাঁরা দুজনেই ওয়াক্ফ বিল নিয়ে গঠিত সংসদের যৌথ কমিটির (জেডিসি) সদস্য ছিলেন।
জাভেদ তাঁর আবেদনে বলেন, হিন্দু ও শিখদের ধর্মীয় ট্রাস্ট স্বনিয়ন্ত্রিত, অথচ ওয়াক্ফে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। অমুসলিমদের সদস্য করা হচ্ছে। এই রীতি অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে কিন্তু নেই।
ওয়াক্ফ বিল সমর্থন করায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল জেডিইউতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুই দিনে পাঁচ নেতা তাঁর দল ত্যাগ করেছেন। ওই পাঁচ নেতার মধ্যে চারজন মুসলিম হলেও একজন হিন্দু। রাজু নায়ার নামে ওই হিন্দু নেতা তাঁর পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ‘দলের ভূমিকায় আমি হতাশ। এটি আরেকটি কালা আইন। মুসলিমদের ওপর অত্যাচার ও অবিচার এতে আরও বাড়বে।’