৯ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করা হবে
Published: 7th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছ থেকে বিনিয়োগের নিবন্ধন নিল স্টারলিংক। গত ২৯ মার্চ এই নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। অবশ্য ইন্টারনেট-সেবা দিতে স্টারলিংককে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (বিটিআরসি) কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।
রাজধানীর ইস্কাটনে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গতকাল রোববার বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ স্টারলিংককে নিবন্ধন দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের (স্টারলিংক) ৯০ দিনের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তার পরিপ্রেক্ষিতেই ২৯ মার্চ স্টারলিংককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিডা থেকে নিবন্ধন নেওয়া বাধ্যতামূলক। সেই নিবন্ধনই স্টারলিংককে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গত ২৯ মার্চ স্টারলিংককে নিবন্ধন দেয়। সেবা চালু করতে নিতে হবে বিটিআরসির লাইসেন্স।বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা স্পেসএক্সের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট-সেবা দেয় স্টারলিংক। তাদের ওয়েবসাইটে কোন দেশে তাদের সেবা রয়েছে, তা উল্লেখ করে একটি মানচিত্র পাওয়া যায়। তাতে বলা আছে, চলতি বছর বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরু হওয়ার কথা।
তিন বছর ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করার আগ্রহ দেখাচ্ছে স্টারলিংক। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে স্টারলিংকের প্রযুক্তি এনে পরীক্ষা করা হয়। তৎকালীন মন্ত্রীদের সঙ্গে স্টারলিংকের বৈঠকও হয়েছিল। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, স্টারলিংকের সেবার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রযুক্তিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় এবং ফল ইতিবাচক ছিল।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের বাজারে স্টারলিংকের প্রবেশের ক্ষেত্র আরও ত্বরান্বিত হয়। ২০২৪ সালের অক্টোবরে স্টারলিংকের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করে।
ইলন মাস্কের সঙ্গে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ভিডিও কলে স্টারলিংক প্রসঙ্গে আলোচনা করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির একটি দল বাংলাদেশে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট-সেবা বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চালুর নির্দেশনা দিয়েছেন।
এদিকে গত মাসেও রাজধানীর একটি হোটেলে স্টারলিংকের পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয়। এ সময় ২৩০ এমবিপিএস (মেগাবিট পার সেকেন্ড) ডাউনলোড গতি পাওয়া গেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ২৪ মার্চ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢাকায় স্টারলিংকের গতির তথ্য জানিয়ে একটি পোস্ট দেন। এই পরীক্ষামূলক ব্যবহারের সংযোগের সার্ভার ছিল সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে। গ্রাহকের অবস্থান দেখায় মালয়েশিয়ায়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং তখন জানিয়েছিল, পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে স্টারলিংক তার বিদেশি স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড গেটওয়ে ব্যবহার করলেও বাংলাদেশে বাণিজ্যিক সেবাদানের সময় নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) নীতিমালা মেনে স্থানীয় ব্রডব্যান্ড গেটওয়ে বা ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ব্যবহার করবে।
বিটিআরসি থেকে স্টারলিংককে এনজিএসও নির্দেশিকা মেনে লাইসেন্স নিতে হবে। ২৬ মার্চ এই নির্দেশিকা অনুমোদন দেওয়া হয়। নির্দেশিকায় আড়ি পাতার সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় সরকার চাইলে ইন্টারনেট বন্ধ করতে পারে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান গতকাল জানান, এনজিএসও লাইসেন্সের জন্য স্টারলিংকের গতকাল আবেদন করার কথা। নিয়ম মেনে আবেদন করলে অনুমোদন দেওয়া হবে। এতে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা করার জন্য কোনো বাধা থাকবে না।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.
এদিকে বিডা জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের ভেন্যু রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ৯ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে স্টারলিংকের ইন্টারনেট-সেবা ব্যবহার করা হবে। সেখানে উপস্থিত সব অংশগ্রহণকারী সেটি ব্যবহার করতে পারবেন। এ ছাড়া স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করে সম্মেলনের সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
স্টারলিংকে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পাওয়া যায়। তবে এর খরচ অন্যান্য ইন্টারনেট-সেবার চেয়ে বেশি। যদিও দেশভেদে তাদের সেবার দামের পার্থক্য রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় চলতি বছর ভুটানে প্রথম স্টারলিংকের সেবা চালু হয়। বাংলাদেশ ছাড়া ভারতেও স্টারলিংকের সেবা চালুর কার্যক্রম এগোচ্ছে। সে দেশে ইতিমধ্যে দুটি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্টারলিংকের চুক্তি হয়েছে।
প্রযুক্তি খাতের ব্যক্তিরা বলছেন, স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে দুর্গম এলাকায় খুব সহজে উচ্চগতির ইন্টারনেট-সেবা পাওয়া যাবে। ফলে ইন্টারনেট-সেবার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের পার্থক্য ঘুচে যাবে। গ্রামে বসেই উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিংসহ ইন্টারনেটভিত্তিক কাজ করতে পারবেন তরুণেরা। দুর্যোগের পর দ্রুত যোগাযোগ প্রতিস্থাপনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে স্টারলিংক।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ব ট আরস গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
২৫৪ কোটি টাকার সেদ্ধ চাল কিনবে সরকার
দেশের খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-১১ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল কেনার উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এতে মোট ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ৫০.৮০ টাকা।
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার উদ্দেশে খাদ্য মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উৎস থেকে চাল সংগ্রহ করে থাকে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস হতে ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির’ অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল এবং জি টু জি পদ্ধতিতে মায়ানমার থেকে ১ লাখ, পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার এবং ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ মেট্রিক টন আতপ চালসহ মোট ৭ লাখ মেট্রিক টন চাল কেনার চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির লক্ষ্যে চুক্তির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। চুক্তির বিপরীতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৬ মেট্রিক টন এবং জি টু জি ভিত্তিতে ২ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ২ লাখ ৪৩ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন এবং জি টু জি ভিত্তিতে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৩৯ মেট্রিক টন চাল সরকারি সংরক্ষণাগারে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এবং জি টু জি পদ্ধতিতে আরো চাল আমদানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সূত্র জানায়, চাল আমদানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক চাল ক্রয়ের জন্য গত ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে মোট ১২ সরবরাহকারী দরপত্র দলিল সংগ্রহ করলেও মোট ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। প্রতিষ্ঠান ৫টি উৎস দেশ হিসেবে ভারত থেকে এই চাল সরবরাহ করবে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রা.লি. প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ৪১৬.৪৪ ডলার উল্লেখ করায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির নাম সুপারিশ করে যা উৎস দেশগুলোর গড় দর (৪৪৪.৯১ মার্কিন ডলার) অপেক্ষা (৪৪৪,৯১-৪১৬,৪৪)=২৮.৪৭ মার্কিন ডলার কম। এ ছাড়া মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রা.লি. কর্তৃক প্রদত্ত দর বাংলাদেশের বন্দর পর্যন্ত প্রতি মেট্রিক টন ৪১৬.৪৪ মার্কিন ডলার, যা বাজার দর যাচাই কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম হওয়ায় উক্ত দর গ্রহণের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করে। মহাপরিচালক, খাদ্য অধিদপ্তর উক্ত সুপারিশের সাথে একমত পোষণ করে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে ক্রয় প্রস্তাব পাঠায়।
হিসাব অনুযায়ী, প্রতি মেট্রিক টন ৪১৬.৪৪ মার্কিন ডলার (প্রতি কেজি ৫০.৮০ টাকা) হিসেবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল কেনার জন্য প্রয়োজন হবে দুই কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার; অর্থাৎ গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডলারের বিনিময় হার প্রতি মার্কিন ডলার ১২২ টাকা (সম্ভাব্য) হিসেবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। এই টাকা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চাল ক্রয় খাত থেকে মেটানো হবে।
এই ক্রয় উপলক্ষে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সিডি ভ্যাট সরকার কর্তৃক বহন করতে হবে। এ-সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ