গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে দেশে দেশে বিক্ষোভ
Published: 7th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। তারা গাজায় বর্বর হামলা এবং ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের নিন্দা জানিয়েছেন। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। খবর বিবিসি, আল জাজিরা ও আনাদোলু এজেন্সির।
যুক্তরাষ্ট্র
স্থানীয় সময় শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। ওই সমাবেশে তিনশোর বেশি সংগঠন সমর্থন জানায়। উপস্থিত বিক্ষোভকারীরা ৩ নম্বর স্ট্রিট এনডব্লিউ ও পেনসিলভেনিয়া অ্যাভিনিউ এনডব্লিউয়ের চৌরাস্তায় সমবেত হয়। পরে তারা ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) সদর দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মিছিল করে। এ সময় ফিলিস্তিনি কর্মী মাহমুদ খলিল ও তুর্কি শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্কসহ আটক ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের মুক্তির আহ্বান জানায়। প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্ট, দ্য পিপলস ফোরাম, ইহুদি ভয়েস ফর পিস এবং অ্যানসার কোয়ালিশনসহ বেশ কয়েকটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ এই বিক্ষোভের সহপৃষ্ঠপোষকতা করে। বিক্ষোভকারীরা গাজায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার প্রদর্শন করে। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার বা নির্বাসিত করার নিন্দা জানায়।
মরক্কো
গাজায় ইসরায়েলের চলমান বর্বরতার বিরুদ্ধে মরক্কোয় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল রোববার হাজারো বিক্ষোভকারী মরক্কোর রাস্তায় নেমে আসেন। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিগত কয়েক মাসের মধ্যে মরক্কোয় সবচেয়ে বড় বিক্ষোভগুলোর একটি হয় গতকাল। এদিন দেশটির রাজধানী রাবাতের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ঢল নামে।
বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পতাকা পদদলিত করেন। তাঁরা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হামাস নেতাদের ব্যানার বহন করেন। এ ছাড়া তাঁরা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ছবির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি যুক্ত করে বানানো ক্ষোভের পোস্টারও বহন করেন।
বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তা ছাড়া গাজা পুনর্গঠনের জন্য উপত্যকাটি থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আরব দেশগুলো এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। অধিকার গোষ্ঠীগুলো একে জাতিগত নির্মূলের পরিকল্পনা বলে অভিহিত করেছে। বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের ওপর দেশটির কর্তৃপক্ষের দমন–পীড়নেরও নিন্দা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে ফিলিস্তিনের ‘ওয়ার্ল্ড স্টপ ফর গাজা’ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় বিক্ষোভ করছেন ছাত্র-জনতা।
আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মেডিকেলের শিক্ষার্থী ও জনতা ঢাবির টিএসসিতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
বিক্ষোভে ছাত্র-জনতা ইসরায়েলি পণ্য বয়কট ও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে সবাইকে এক হয়ে লড়াই করার জন্য আহ্বান জানান। এ সময় তারা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘দুনিয়ার মুসলিম, এক হও লড়াই করো’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর.
ফিলিস্তিন
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আজ সোমবার ফিলিস্তিনজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনের জাতীয় ও ইসলামি শক্তিগুলো রোববার এক বিবৃতিতে এ ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধর্মঘট যেন একটি বৈশ্বিক প্রতিবাদে পরিণত হয়, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ অপরাধ, বেসামরিক মানুষ হত্যাসহ চলমান দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া যায়। বিশেষ করে নারী ও শিশুসহ নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যাকাণ্ড এবং ঘরবাড়ি ধ্বংস করে বাস্তুচ্যুত করার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সামনে আনতে হবে।
ইসরায়েলের আগ্রাসন থামাতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা জরুরি।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাজুড়ে একই রকম বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি ও ইসরায়েলের প্রতি নিন্দা জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মাসে ইসরায়েলের তীব্র বিমান ও স্থল হামলার মধ্য দিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। এর পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন মরক্কোর বিক্ষোভকারীরা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এ যুদ্ধে ৫০ হাজার ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ১ লাখ ১৫ হাজার জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল মরক ক গ জ য় ইসর য় ল ইসর য় ল র ত হয় ছ ন গণহত য চলম ন মরক ক
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা বললে সরকার পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির দোহাই দেয়
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তুললে সরকার পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ‘দোহাই’ দেয় বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। আজ শুক্রবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে এ কথা বলেছেন তিনি। ‘জুলাই, পিলখানা ও শাপলা গণহত্যার বিচার এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে’ এই সমাবেশের আয়োজন করে ইনকিলাব মঞ্চ।
আজ শাহবাগে এই উন্মুক্ত প্রান্তরে তাঁরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেটা ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে পূরণ হওয়ার কথা ছিল বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন সারজিস আলম। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যখনই তাদের কাছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তারা আমাদের পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির দোহাই দেয়।’ এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘যখন শাপলা চত্বর, পিলখানা এবং জুলাইয়ে হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কোথায় ছিল?’
তবে সারজিস আলম তাঁর বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নিয়ে এই অবস্থান ব্যক্তকারী হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা উপদেষ্টা কিংবা পশ্চিমা কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি।
এ সময় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে সারজিস বলেছেন, ‘এই জেনারেশনকে (প্রজন্ম) ভয় করুন। যদি এই জেনারেশনের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আবেগ নিয়ে খেলা করেন, তাহলে এই জেনারেশন সকল ক্ষমতার বিপক্ষে গিয়ে যে কাউকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারে।’
এই সমাবেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সহসমন্বয়ক মোসাদ্দেক ইবনে আলী বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে, তারা বিদেশি দূতাবাসগুলোর কাছে নিজেদের শির দাঁড়া বিক্রি করে দিয়েছে। দল গঠনের পর তারা দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়, কিন্তু কোথাও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা ছিল না। এই সরকারের ঘুড়িটা অন্তর্বর্তীকালের মধ্যে ঘুরলেও তার নাটাইটা বিদেশি কোনো দূতাবাসের হাতে রয়েছে।
সরকার কোন কোন বিচার করছে এবং সেটা কতখানি হয়েছে, তা স্পষ্ট করে বলার দাবি জানান এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তিনি বলেন, পৃথিবীতে অনেক ফ্যাসিবাদী দলকে চিরস্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের নজির আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সেই নিয়মেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
‘জুলাই, পিলখানা ও শাপলা গণহত্যার বিচার এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে’ সমাবেশে উপস্থিত দর্শকদের একাংশ। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে