ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলা এবং ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থী ও অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের দমনপীড়ন বন্ধের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয় সময় শনিবার ওয়াশিংটন ডিসির রাস্তায় জড়ো হয় এসব মানুষ। খবর আনাদোলু এজেন্সির।

বিপুল মানুষের এই সমাবেশে সমর্থন জানিয়েছে তিনশোর বেশি সংগঠন। প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্ট, দ্য পিপলস ফোরাম, ইহুদি ভয়েস ফর পিস এবং অ্যানসার কোয়ালিশনসহ বেশ কয়েকটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ এই বিক্ষোভের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।

এদিন বিক্ষোভকারীরা ৩ নম্বর স্ট্রিট এনডব্লিউ ও পেনসিলভেনিয়া অ্যাভিনিউ এনডব্লিউয়ের চৌরাস্তায় সমবেত হয়। পরে তারা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) সদর দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মিছিল করে। এ সময় ফিলিস্তিনি কর্মী মাহমুদ খলিল ও তুর্কি শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্কসহ আটক ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের মুক্তির আহ্বান জানায়।

বিক্ষোভকারীরা গাজায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার প্রদর্শন করে এবং শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও নির্বাসিত করার নিন্দা জানায়।

প্রসঙ্গত, গত মাসে ইসরায়েলের তীব্র বিমান ও স্থল হামলার মধ্য দিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। এর পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন মরক্কোর বিক্ষোভকারীরা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এ যুদ্ধে ৫০ হাজার ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ১ লাখ ১৫ হাজার জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ত হয় ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় গণহত্যা বন্ধে সারাবিশ্বে ‘ নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’

গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠন নিউইয়র্ক হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন এবং ডক্টর্স অ্যাগেইনস্ট জেনোসাইড। আজ সোমবার নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় কর্মীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন। কর্মসূচির নাম ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’। 
একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দিয়েছে ‘দ্য ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস ইন প্যালেস্টাইন’। ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপস’, অর্থাৎ ‘গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ ও স্কুল বন্ধ’ নামে আজ সোমবার বিশ্বজুড়ে এ অবরোধ পালনের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে নারী-শিশুর দেহ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আরও ভবন। গত ২৩ মার্চ ১৫ চিকিৎসাকর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। 
‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির ব্যাপারে হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন তাদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে লিখেছে, গাজায় গণহত্যা বন্ধে আমরা বৈশ্বিক ধর্মঘটের আহ্বান জানাচ্ছি। এই উদ্দেশ্য সফল করতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল বন্ধ থাকবে। পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের দিকে ইঙ্গিত করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ব এখন নবজাতক ও মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অনেক সচেতন। অথচ গাজাবাসী জীবন ধারণের মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে। মার্কিন বোমার আঘাতে হাসপাতাল গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। অগণিত মা ও শিশু সাধারণ যত্নের অভাবে এবং বিস্ফোরণের আঘাতে মৃত্যুবরণ করছে।
এর মধ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফর যেন আগুনে আরও ঘি ঢেলে দিয়েছে। ট্রাম্পের নতুন ঘোষিত শুল্ক নিয়ে সমঝোতার পাশাপাশি ইরান ও হামাস বিষয়ে আলোচনা করতে আজ ওয়াশিংটন যাওয়ার কথা রয়েছে নেতানিয়াহুর।
নেতানিয়াহুর সফর নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, নেতানিয়াহুকে ফেরারি যুদ্ধাপরাধী বলে রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। সেই অপরাধী আবার একই দিনে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করতে যাচ্ছেন।

ধর্মঘটে অংশগ্রহণের জন্য জোরালো আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, গাজার জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে সবাই রাস্তায় নেমে আসুন। জায়নবাদীদের যুদ্ধাপরাধের অবসান ঘটান। মার্কিন সহযোগিতা বন্ধ করুন। আর সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনুন। পুরো একটা জনগোষ্ঠী যখন অনাহারে থেকে বোমার আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে, আমরা তখন হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। রাস্তায় নামুন, আওয়াজ তুলুন, প্রতিবাদ করুন!

গতকাল রোববার ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার ফিলিস্তিনজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট পালন করা হবে। গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও ন্যায়বিচারের পক্ষে কাজ করা লোকজনকে সমর্থন জানিয়ে এ ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। 
গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনটি ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা ও অপরাধকে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। 
ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনে নির্বিচার গুলি চালিয়ে বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ করে শিশু ও নারীদের হত্যাকাণ্ড এবং ফিলিস্তিনিদের নিজ বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত করার লক্ষ্যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। বিবৃতিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের অবসান ঘটাতে এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ইসরায়েলের জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।

গাজায় ছিন্নভিন্ন নারী-শিশুর দেহ 
গতকাল রোববার ভোরে গাজার খান ইউনিসের একটি আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বোমা হামলায় সেখানে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে নারী-শিশুর মরদেহ। ওই হামলা থেকে বেঁচে ফেরা খান ইউনিসের বাসিন্দা জামাল আল-মধুন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ ঘরগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেল। আমরা ধ্বংসস্তূপ থেকে আটজনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। তাদের সবাই নারী ও শিশু। একজন পুরুষও নেই। এই নিরীহ নারী-শিশু সবার মরদেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। 
গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শনিবার রাতভর ইসরায়েলি হামলায় ২১ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের বর্বর হামলায় অন্তত ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৮ জন আহত হয়েছেন।  
গত ২৩ মার্চ গাজায় ১৫ জন জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীকে হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের ভুল স্বীকার করেছে। তারা শুরুতে দাবি করেছিল, অন্ধকারে হেডলাইট বা ফ্ল্যাশলাইট ছাড়া গাড়িবহরের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তারা গুলি চালিয়েছিল।   
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজার বিভিন্ন অংশে হামলার মাত্রা বড় আকারে বাড়িয়েছে ইসরায়েল, যার বড় একটি অংশ দক্ষিণ গাজার রাফা শহরকে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে। কার্যত নিশ্চিহ্নের পথে রয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ শহরটি। সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় নৃশংস হত্যার প্রতিবাদ বাসদের
  • ৬ দাবিসহ মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে মার্চ করবে আজাদ ফিলিস্তিন
  • গাজায় গণহত্যা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবাদের ঝড় 
  • নোয়াখালীতে শিক্ষার্থী-জনতার বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ
  • গাজার জন্য ঢাকার শোবিজ তারকাদের মন কাঁদছে 
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ
  • গাজায় ইসরায়লি হামলার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ
  • গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে দেশে দেশে বিক্ষোভ
  • গাজায় গণহত্যা বন্ধে সারাবিশ্বে ‘ নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’