হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো মাথায় রঙিন লম্বা টুপি পরে বাঁশিতে সুর তুলে ৪৫ বছর ধরে ‘ঘটিগরম’ চানাচুর বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন যশোরের আবুল হোসেন।

‘ও কী গাড়িয়াল ভাই’, ‘মনে বড় আশা ছিল’, ‘প্রাণ সখী রে...’ এমন অসংখ্য গানের সুর তুলে আবুল হোসেন হাটে-বাজারে ধোঁয়া ওঠা ঘটিগরম চানাচুর বিক্রি করেন।

যশোর সদর উপজেলার এড়েন্দা গ্রামের বাসিন্দা আবুল। তাঁর বাবা কালু মিয়া ছিলেন কৃষক। বাবার পেশায় না গিয়ে তিনি হলেন চানাচুর বিক্রেতা। স্ত্রী, তিন মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ছেলে রুটি-বিস্কুট তৈরির কারখানায় কাজ করেন। ছোট ছেলে ইমারত নির্মাণ কারিগরের সহযোগী। স্ত্রী কয়েক বছর ধরে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী।

আবুল হোসেন জানালেন, দৈনিক ২০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার হয় তাঁর। এ দিয়েই সংসার চলে। জীবনে বড় কোনো প্রত্যাশা নেই ষাটোর্ধ্ব আবুল হোসেনের। বাকি জীবনটা কাজ করে কাটিয়ে দিতে পারলেই খুশি তিনি। বাবার রেখে যাওয়া ৭ শতাংশ জমির ওপর তাঁর বসতবাড়ি। সেখানেই পরিবার নিয়ে বাস।

নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে আবুল হোসেন বলেন, ৪৫ বছর আগে বিয়ে করেছেন। তখন কোনো কাজ ছিল না। সংসারে অভাব-অনটন। বাবার কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা নিয়ে রঙিন পোশাক তৈরি করে সং সেজে ঘটিগরম চানাচুর বিক্রির সরঞ্জাম কিনে রাস্তায় নামেন। প্রথম দিন ১০০ টাকা বিক্রি হয়। প্রায় অর্ধেক লাভ হয়েছিল। সেই থেকে এই ব্যবসাতেই আছেন তিনি।

গতকাল রোববার রাতে আবুল হোসেনকে দেখা গেল যশোর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে বাঁশিতে গানের সুর তুলছেন। সেই সুর শুনে অনেকে ভিড় করছেন তাঁর কাছে। তাঁদের অনেকেই তাঁর কাছ থেকে কিনে নিচ্ছেন গরম–গরম ‘ঘটিগরম’ চানাচুর।

সেখানে কথা হয় যশোর শহরের কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ মিকাইল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি, তখন থেকেই আবুল হোসেন চাচার ঘটিগরমের ভক্ত। সঙ্গে তাঁর বাঁশির সুরেরও ভক্ত আমি। তাঁর ঘটিগরম অন্যদের চেয়ে স্বাদে ভিন্ন। তিনি ভালো মানের চিড়ার সঙ্গে বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ দেন। এতেই এটা খেতে এত সুস্বাদু হয়। ১৫ বছর ধরে আমি তাঁর কাছ থেকে এই ঘটিগরমের স্বাদ নিচ্ছি।’

কথায় কথায় আবুল হোসেন বলেন, ‘তখন সবকিছুর দাম কম ছিল। শান্তি ছিল। এখন সবকিছুর দাম বেশি। শান্তি নাই। এখন মাসেও এক কেজি গরুর মাংস কেনা যাচ্ছে না।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে কেএফসি রেস্টুরেন্ট ও বাটার শোরুমে ভাঙচুর

ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান দাবি করে সিলেট নগরীতে কেএফসি রেস্টুরেন্ট ও জুতার কোম্পানি বাটার কয়েকটি শোরুমে ভাঙচুর করা হয়েছে। সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকালে নগরীর মিরবক্সটুলায় অবস্থিত কেএফসি রেস্টুরেন্ট এবং দরগাগেইট, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার এলাকার বাটার শোরুমে ভাঙচুর করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল ৩টার দিকে নগরীর মিরবক্সটুলায় অবস্থিত কেএফসি রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। এ সময় রেস্টুরেন্টের ভিতরে থাকা ইসরায়েলি বিভিন্ন কোমল পানীয় নষ্ট করা হয়। এ ঘটনার পর রেস্টুরেন্টটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। আরেকদল বিক্ষুব্ধ জনতা নগরীর দরগাগেইট এলাকায় জুতার কোম্পানি বাটার একটি শোরুমে ভাঙচুর চালায়। একই সময়ে বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার এলাকায়ও বাটার দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনা সদস্যলা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়।

এর আগে নগরীর বিভিন্ন জায়গা থেকে দলে দলে বিক্ষুব্ধ জনতা মিরবক্সটুলায় অবস্থিত কেএফসি রেস্টুরেন্টের সামনে এসে জড়ো হয়।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক জানান, কেএফসিতে হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। 
 

ঢাকা/নুর/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ