পদ্মার বুকে ডুবোচর, ব্যাহত হচ্ছে নৌযান চলাচল
Published: 7th, April 2025 GMT
মানিকগঞ্জে পদ্মা নদীর হরিরামপুর উপজেলার অংশে অসংখ্য ডুবোচর জেগে উঠেছে। কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন থেকে ধূলশুরা ইউনিয়নের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় পদ্মা নদীর মাঝে জেগে উঠেছে বড় আকৃতির চর। পানি কমে যাওয়ায় জেগে ওঠা এসব চর এলাকা দিয়ে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, প্রায় পঞ্চাশ দশক থেকে পদ্মা নদী ভাঙনে এ উপজেলা দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। উপজেলা সদর থেকে পদ্মা নদীর ওপারে তিনটি ইউনিয়ন আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ দুর্গম চরাঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। উপজেলা সদরের সাথে চরাঞ্চলবাসীর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ইঞ্জিনচালিত নৌকা।
উপজেলার বাহাদুরপুর, আন্ধামানিক ও ধুলশুড়া খেয়াঘাট থেকে চরাঞ্চলের লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের সেলিমপুর, হরিণাঘাট, সুতালড়ী ও আজিমনগরের হাতিঘাটা এলাকায় প্রায় ৫০টি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ যাতায়াত করে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শতশত মানুষ ট্রলারে যাতায়াত করে। কিন্তু প্রতিবছরই শীত মৌসুমের শুরুতেই নদীর নাব্য সংকট দেখা দেয়। নদীর বুকে অসংখ্য ডুবোচরসহ বড় বড় চর জেগে ওঠায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ, বাল্কহেডসহ অন্যান্য নৌযানগুলোও অনেক সময় আটকা পড়ে যায়।
সেলিমপুর এলাকার নওজেশ মোল্লা বলেন, “এমনিতেই উপজেলা ও জেলা শহর থেকে চরাঞ্চলের মানুষের পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে। তারমধ্যে ডুবোচর জেগে ওঠায় নৌযানগুলো ঠিকমতো চলতে পারছে না। কয়েক কিলোমিটার ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে চরাঞ্চলের রোগীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে।”
আন্ধারমানিক খেয়াঘাটের মাঝি হাশেম বলেন, “প্রতি বছর আমাদের এই পয়েন্ট ডুবোচর জেগে ওঠায় চরাঞ্চলে আমাদের ট্রলার চালাতে সমস্যা হয়। অনেক এরিয়া ঘুরে যেতে হয়। এতে আমাদের সময় অপচয়ের পাশাপাশি তেল খরচ অনেক বেশি লাগে। আমাদের ইজারাদারদের টাকা কিন্তু ঠিকই দেওয়া লাগে। এ সমস্য দূর করতে নদীর মাঝ দিয়ে খনন করা জরুরি।”
আজিমনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওলাদ হোসেন চৌধুরী বিপ্লব বলেন, “নাব্য সংকটে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন আমাদের সদর এলাকা থেকে দুর্গম চরাঞ্চলে যাতায়াত করতে হয়। নদীতে ডুবোচর জেগে ওঠায় অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। অনেক সময় ট্রলার ডুবোচরে আটকেও যায়। তাই পরিকল্পিতভাবে সঠিক উপায়ে নদীর মাঝ দিয়ে ড্রেজিং করে নৌপথ সচল করা জরুরি।”
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান খান বলেন, “মানিকগঞ্জ জেলায় পদ্মা নদীর অংশ প্রায় ৩০ কিলোমিটার যাহা হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলার পার্শ্ব দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রতিনিয়ত পদ্মা নদীতে প্রচুর পরিমাণ সেডিমেন্ট অর্থাৎ পলি জমা পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর বা চর পড়ছে। ফলশ্রুতিতে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে। মানিকগঞ্জের অংশে নদী ভাঙন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে জরিপ কাজ চলমান রয়েছে এবং একটি প্রকল্প গ্রহণের জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ডুবোচর বা চর অপসারণের জন্য যেন ড্রেজিংয়ের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হবে।”
ঢাকা/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ন কগঞ জ আম দ র র এল ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগ, প্রত্যাহার দাবি
সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম মুন্নার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে। এ মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (৬ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা।
জানা গেছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উস্কানিতে বর্তমান সরকারকে উৎখাত, জনসাধারণের শান্তি বিনষ্ট ও সরকারি সম্পদের ক্ষতি সাধনের লক্ষ্যে গত ১২ মার্চ বিক্ষোভ মিছিল এবং দেশীয় অস্ত্রদ্বারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এতে ৭৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১২৫ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় গত ৫ এপ্রিল নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মী মর্মে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ প্রহরায় ওইদিনই আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
মুন্নাকে গ্রেপ্তার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করেন মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মামলার এজাহারে উল্লেখিত ঘটনার দিন ক্যাম্পাসেই ছিলেন মুন্না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বৃহত্তর খুলনা বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলেও উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে তাকে। অভিযুক্তের ফেসবুকেও ওইদিনের ইফতার সংক্রান্ত একাধিক পোস্ট ও ছবি রয়েছে।
মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মূখ্য সংগঠক ও গবি আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ আহমদ সালেহীন বলেন, “আন্দোলনের শুরু থেকেই মুন্না আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। মুন্নার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত মব সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। আগামীতে কারো বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার পূর্বে যেন সঠিক সাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করা হয়, সেটা পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এর পরিমাণ ভয়াবহ হবে।”
আইন বিভাগের প্রভাষক লিমন হোসেন বলেন, “এজাহারে উল্লেখিত ঘটনার দিন মুন্না ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিল এবং একটি ইফতার ও দোয়া মাহফিলেও অংশ নিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শতশত শিক্ষার্থী এবং আইন বিভাগের সব শিক্ষকদের পক্ষ থেকে মুন্নার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ দেশের সব মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায় এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয় সেই দাবি জানাই। আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে অনতিবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে মুন্না যেন দ্রুত শিক্ষা-কার্যক্রমে ফিরতে পারে, সেই দাবি জানাচ্ছি।”
এদিকে সার্বিক বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হুমায়ুন কবীর মোল্লা বলেন, “ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়- এই মর্মে অভিযুক্তের যদি কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ থাকে, তিনি তাহলে আদালতে প্রমাণ পেশ করুক। আমাদের কাছেও কাগজপত্র দিলে আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।”
ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী