মা ও শিশুমৃত্যুর উচ্চহার, করণীয় কী
Published: 7th, April 2025 GMT
আজ ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। ১৯৫০ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জেনেভায় প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্যসভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংস্থাটি যাত্রা শুরু করে। ওই সভাতেই প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালনের সিদ্ধান্ত আসে।
এবারের স্বাস্থ্য দিবসের স্লোগান হচ্ছে, ‘মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে সুস্বাস্থ্যের সূচনা ও আশায় ভরপুর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করি’। বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে স্বাস্থ্য বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বড় বাধা হচ্ছে মাতৃমৃত্যুর উচ্চহার। এর পরপরই আরেকটি বড় বাধা হচ্ছে নবজাতক ও শিশুমৃত্যুর উচ্চহার। মাতৃমৃত্যু, নবজাতকের মৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হচ্ছে প্রতিরোধযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা। সরকারকে এ জনস্বাস্থ্য সমস্যাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
কাজটি বেশ জটিল। সম্প্রতি প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক অনুমান হচ্ছে, সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ নারী গর্ভধারণ বা সন্তান প্রসবজনিত জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন, ২০ লাখের বেশি নবজাতক শিশু জন্মের এক মাসের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে এবং আরও ২০ লাখ শিশু মায়ের গর্ভেই মারা যায়। মোটাদাগে বলা যায়, প্রতি ৭ সেকেন্ডে একটি প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু ঘটে এ পৃথিবীতে।
বর্তমান প্রবণতা দেখে বলা যায়, প্রতি পাঁচটি দেশের মধ্যে চারটি (বাংলাদেশসহ) এ বিষয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অসফল। একইভাবে প্রতি তিনটি দেশের মধ্যে একটি দেশ শিশুমৃত্যু কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অসফল। বাংলাদেশ আরেকটু চেষ্টা করলে সফল হতে পারবে।
মা ও শিশুর মৃত্যু কমাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় কী বলা আছে? বিশ্বের প্রতিটি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি এক লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ৭০–এর নিচে নামিয়ে আনবে। নবজাতক শিশুর (জন্ম থেকে ২৭ দিন পর্যন্ত) মৃত্যু প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মে ১২–তে নামিয়ে আনা এবং ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মে ২৫–এ নামিয়ে আনা।
একটি বলিষ্ঠ রাজনৈতিক অঙ্গীকার, বৈষম্য বিলোপের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও তা বাস্তবায়নে অব্যাহত দৃঢ়তা মা ও শিশুর প্রতিরোধযোগ্য অকালমৃত্যুকে থামাতে পারেবাংলাদেশের কী অবস্থাবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত সর্বসাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ২০২৩ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল প্রতি ১ লাখ জীবিত জন্মে ১১৫ জন। ২০০০ সালের তুলনায় মাতৃমৃত্যুর হার ২০২৩ সালে ৭৯ শতাংশ কমেছে।
বিশ্বজুড়ে মাতৃস্বাস্থ্যের অবনতি ও মৃত্যুর সবচেয়ে বড় সরাসরি কারণ হচ্ছে রক্তপাত। অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে গর্ভধারণজনিত উচ্চ রক্তচাপ, সংক্রমণ, অনিরাপদ গর্ভপাতের জটিলতা প্রভৃতি। ধাত্রীস্বাস্থ্যবিষয়ক পরোক্ষ কারণগুলো বিশ্বব্যাপী মাতৃমৃত্যুর দ্বিতীয় বড় কারণ। পরোক্ষ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অসংক্রামক রোগ, যেমন আগে থেকে উচ্চ রক্তচাপে ভোগা, ডায়াবেটিস, অন্যান্য স্ত্রীরোগের সংক্রমণ, পরজীবী সংক্রমণ প্রভৃতি। তৃতীয় বড় কারণ হচ্ছে গর্ভধারণজনিত উচ্চ রক্তচাপ, যে রোগের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে অনেক মা ভুগে থাকেন। অন্যান্য অসংক্রামক রোগের মধ্যে রয়েছে অ্যাজমা, হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা, মৃগীরোগ, হিমোগ্লোবিনের অস্বাভাবিকতা, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা প্রভৃতি।
শিশুমৃত্যুর বৈজ্ঞানিক অনুমানের জন্য গঠিত জাতিসংঘ আন্তসংস্থা পরিচালিত এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর মাতৃগর্ভে ৬৩ হাজার শিশু মৃত্যুবরণ করে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুবরণ করে এক লাখের বেশি। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বয়স ২৮ দিনের কম। এ পরিসংখ্যান দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। যদি আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হয়, তবে প্রতিবছর অন্তত ২৮ হাজার নবজাতকের মৃত্যু ঠেকাতে হবে। নবজাতকের এ মৃত্যু যেসব প্রতিরোধযোগ্য কারণে ঘটে, তার মধ্যে রয়েছে সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া, বাচ্চা জন্মের সময় জটিলতা এবং সেপসিস ও নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণ। এটা মানুষের বেঁচে থাকার ও বেড়ে ওঠার মৌলিক চাহিদাকে লঙ্ঘন করে। যদি আমরা স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বিশেষ করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করি, নিরাপদ সন্তান প্রসবের জন্য প্রশিক্ষিত ধাত্রী ও অন্যান্য স্বাস্থ্য পেশাজীবীর সংখ্যা আরও বাড়াই, তাহলে পরিস্থিতির অবশ্যই উন্নতি হবে।
এগুলো এমন সব রোগ ও স্বাস্থ্য সমস্যা, যার প্রতিটির চিকিৎসা ও প্রতিবিধান রয়েছে। কিন্তু আমাদের মতো অগোছালো স্বাস্থ্যব্যবস্থার দেশে মা ও শিশুরা এ চিকিৎসার আওতার বাইরে থেকে যায়। নানা আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণে এগুলোর ব্যবস্থা দেশে থাকলেও এক বিরাটসংখ্যক মানুষ এর নাগাল পাচ্ছে না। স্বাস্থ্যের সামাজিক নির্ধারকগুলো এর জন্য দায়ী।
শিক্ষার সুযোগের অভাব, শ্রেণি–জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গবৈষম্য, ক্ষতিকর ও বৈষম্যপূর্ণ সামাজিক রীতি-অভ্যাস-আচরণ, যেগুলো নারীদের বঞ্চিত করে, এ ধরনের কারণগুলো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী ও শিশুকে চিকিৎসা নিতে বাধা দেয়। একটি বলিষ্ঠ রাজনৈতিক অঙ্গীকার, বৈষম্য বিলোপের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও তা বাস্তবায়নে অব্যাহত দৃঢ়তা মা ও শিশুর প্রতিরোধযোগ্য অকালমৃত্যুকে থামাতে পারে।
● মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য সমিতির নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য সমস য জ ব ত জন ম র জন ত ক ব যবস থ স ক রমণ ক রণগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘সুবিধাজনক সময়ে ঢাকা সফর করবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী’
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফর পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব এম জসীম উদ্দিনের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এ বিষয়টি আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৈঠককালে উভয় পক্ষই গঠনমূলক আলোচনা করেন। বৈঠকে তারা গত ১৭ এপ্রিল ঢাকায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় ষষ্ঠ দফা সভা সফলভাবে সমাপ্তিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার দিকে এটিকে তারা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরেন।
আরো পড়ুন:
বল ঘুরল, বাংলাদেশ হাসল
এপ্রিলের ২৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২২৭ কোটি ডলার
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচিত বিষয়গুলো সম্পর্কে উভয়পক্ষের অব্যাহত পর্যবেক্ষণ ও গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের হাইকমিশনার আঞ্চলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিবকে অবহিত করেছেন। তিনি নির্দিষ্ট পণ্য ও ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-পাকিস্তান ব্যবসায়িক ফোরামের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের চলমান সফর সম্পর্কেও পররাষ্ট্র সচিবকে অবহিত করেন।
উভয়পক্ষই আশা প্রকাশ করেছে, পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা সফরের কথা ছিল। তবে কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানে উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় সেই সফর স্থগিত হয়ে যায়।
এর আগে গত রবিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি চাই। আমরা জানি যে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিন সংঘাতয় সম্পর্ক চলছে। আমরা চাই না এখানে কোনো সংঘাত সৃষ্টি হোক, এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিপদের কারণ হোক।
ভারত-পাকিস্তান দুদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বিদ্যমান। আমরা চাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তারা এই সমস্যার সমাধান করুক। আমরা দেখেছি, দু-একটা দেশ থেকে ইতোমধ্যেই মধ্যস্থতারও প্রস্তাব এসেছে। এখন আলাপ-আলোচনা হোক, মধ্যস্থতা হোক, যেভাবেই হোক এই সংকটের সমাধান হোক।
ঢাকা/হাসান/সাইফ