ফু-ওয়াং ফুডসের আর্থিক প্রতিবেদনে নিরীক্ষকের আপত্তি
Published: 7th, April 2025 GMT
পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডসের আর্থিক প্রতিবেদনে বিভিন্ন প্রতারণার কথা উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষক। কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় এ আপত্তি জানানো হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানিটির আর্থিক হিসেবে ৫৮.
আরো পড়ুন:
সহযোগিতা বাড়াতে ডিএসই-সিএসই-পিএসএক্সের সমঝোতা স্মারক
আইপিওর খসড়া সুপারিশ জমা দিয়েছে পুঁজিবাজার টাস্কফোর্সের
কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসেবে ৯.১৩ কোটি টাকার মজুদ পণ্য দেখিয়েছে। তবে, সরেজমিনে কারখানা পরিদর্শনে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। বিশেষ করে ৩৪০ আইটেমের মধ্যে ১০৪টি আইটেম কাঁচামাল, বিক্রয়যোগ্য পণ্য ও প্যাকিং জিনিসের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।
কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য অগ্রিম ৩.২১ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে আর্থিক হিসাবে উল্লেখ করেছে ফু-ওয়াং ফুডস কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে, ২.৮৮ কোটি টাকা পূর্বের বছরের। এ অর্থের বিষয়ে কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট সঠিক জবাব দিতে পারেনি নিরীক্ষককে। এমনকি কাঁচামাল সরবরাহকারীদের তালিকাও নেই। যাতে ওই অগ্রিম অর্থের বিষয়টি অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, কোম্পানির ১০৭.২২ কোটি টাকার ঋণাত্মক সংরক্ষিত মুনাফা (রিটেইন আর্নিংস) রয়েছে। এর মধ্যে, ৯৯ লাখ টাকার লোকসান ইনকাম স্টেটমেন্টের পরিবর্তে রিটেইন আর্নিংসে সমন্বয় করা হয়েছিল। এই লোকসান যদি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইনকাম স্টেটমেন্টে দেখানো হতো, তাহলে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) কমে দাঁড়াত ০.০৯ টাকা। তবে, কোম্পানিটি সেটা না করে ইপিএস বাড়িয়ে দেখিয়েছে।
আর্থিক হিসেবে কাঁচামাল সরবরাহকারীরা ১৭.৮৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, নিরীক্ষক এ বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ে পাওনাদারদের চিঠি দিলেও ২৭ জনের মধ্যে ১১ জনের পাওনার বিষয়ে সত্যতা পেয়েছে। আর কোম্পানির হিসেবের সঙ্গে ২.১৯ কোটি টাকার অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।
ঢাকা/এনটি/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আর থ ক হ স ব র আর থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
বাড়তি সুদের চাপে কৃষিঋণে পতন
দেশীয় উৎপাদন উৎসাহিত করতে অনেক আগে থেকেই কৃষি এবং রপ্তানির জন্য ঋণের সুদহার কম ছিল। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহার বেঁধে দিত। তবে গত বছরের মে মাস থেকে সব ধরনের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে কৃষিঋণের সুদ অনেক বেড়েছে। বাড়তি সুদের চাপে কৃষিঋণ বিতরণে পতন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কৃষিতে ব্যাংকগুলোর ২২ হাজার ১২৬ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ১ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ কম। কৃষিঋণে এখন সুদহার ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ।
গত মে মাসের আগ পর্যন্ত সব সময়ই কৃষিঋণের সুদহার কম ছিল। এমনকি ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ আরোপের সময়ও কৃষিতে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ সুদহার ছিল। এখন পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হয়েছে।
সাধারণভাবে ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি কম হলেও আগের চেয়ে কমতে দেখা যায় না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, বড় শিল্পসহ সব খাতে সামান্য হলেও ঋণ বেড়েছে। তবে দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার অন্যতম উপাদান কৃষিতে ঋণ বিতরণ কমে গেছে। অবশ্য তারল্য সংকটের কারণে বর্তমানে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি কম। গত জানুয়ারি পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশে নেমেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে যা সর্বনিম্ন। কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। কৃষিঋণ বিতরণে এগিয়ে থাকা সরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ে ঈদের আগে বৈঠক হয়েছে। শিগগিরই বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, কৃষিঋণ বিতরণ কমার কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। এর অন্যতম হলো– বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের ঋণের বড় একটি অংশ ক্ষুদ্র ঋণদান প্রতিষ্ঠান ও এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। তবে গত মে মাসের সব ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষমতা ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে তাদের মার্জিন কমায় আগ্রহ কমেছে। তিনি বলেন, অবশ্য চলতি অর্থবছর প্রতিটি ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার অন্তত অর্ধেক নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করতে বলা হয়েছে। বাকি অর্ধেক এনজিও লিংকেজে বিতরণ করতে পারবে। বাস্তবতা হলো অনেক বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের কোনো সুযোগই নেই। আবার এনজিওগুলোও আগের মতো আগ্রহ না থাকায় কমে থাকতে পারে। এ ছাড়া আগের মতো যেনতেন কৃষিঋণ বিতরণের সুযোগ বন্ধ হয়েছে। আবার বেশির ভাগ ব্যাংকে তারল্য সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ঋণ বিতরণ কমে থাকতে পারে। এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
চলতি অর্থবছর কৃষি খাতে ৩৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বছর শেষে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। গত অর্থবছর ৩৫ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩৭ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা বিতরণ হয়। কোনো ব্যাংক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে অনর্জিত অংশ এক বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কমন ফান্ডে (বিবিএডিসিএফ) জমা রাখতে হয়। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো মাত্র ২ শতাংশ সুদ পায়। মূলত শাস্তি হিসেবেই ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অনেক কম সুদে এ অর্থ রাখা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, কৃষিতে ঋণ বিতরণ কমলেও চলতি অর্থবছর আদায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মোট ২৪ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদায় বেড়েছে ১ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত ফেব্রুয়ারি শেষে কৃষিঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই মাস শেষে যা ছিল ৫৫ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা।
আইএমএফের পরামর্শে ১৯৮৯ সালে সুদহার নির্ধারণের ক্ষমতা প্রথম ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে খাত ধরে ধরে সুদহার ঠিক করা হতো। বৈশ্বিক মন্দা পরবর্তী ২০০৯ সালে সুদহারের সীমা আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মন্দা-পরবর্তী ২০১১ সালের মার্চে তিনটি খাত ছাড়া সব ক্ষেত্রে সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়া হয়। এরপর সুদহার বাড়তে বাড়তে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশে উঠেছিল। ওই সময়ও প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণে সর্বোচ্চ সুদহারের সীমা ছিল ৭ শতাংশ। কৃষি ও মেয়াদি শিল্পঋণে ১৩ শতাংশ এবং চাল, গম, ভোজ্যতেল, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর ও চিনি আমদানি অর্থায়নে সর্বোচ্চ সীমা ছিল ১২ শতাংশ।