‘যখন তার কাছে বল থাকত না, তখন সে মা দিবসে আদমের চেয়েও নিজেকে একা মনে করত’—ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন মেক্সিকান লেখক হুয়ান ভিলোরো।

অনেক বছর আগে বুয়েন্স এইরেসের ধূলিমাখা পথ থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন একজন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। খুব সরল কোনো পথ নয়, বরং আঁকাবাঁকা ও চড়াই-উতরাইয়ে ভরা। সেই পথ ধরে ম্যারাডোনা নামের সেই ছেলে কোথায় পৌঁছাতে চেয়েছিলেন, শুরুতে তা হয়তো তিনি নিজেও জানতেন না। তবে তিনি যা জানতেন, সেটা হলো এই চলার পথে যা কিছু আসবে, সবকিছুকেই দৃঢ়তার সঙ্গে বরণ করে নিতে হবে। আর এভাবে নিতে নিতে তিনি হয়ে উঠবেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার।

শুধু ফুটবলার পরিচয়ে ম্যারাডোনাকে আটকে রাখার সুযোগ নেই। কারণ, শেষ পর্যন্ত ফুটবলারের চেয়েও বড় কিছু হয়ে উঠেছিলেন তিনি। হয়ে ওঠেছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বর্ণিল চরিত্রগুলোর একটি। এমন বর্ণিল চরিত্র যাকে কাঠামোয় ধরে রাখা কঠিন। এত কিছুর সন্নিবেশ কীভাবে একজন মানুষের মধ্যে থাকতে পারে, সে-ও এক পরম আশ্চর্যের বিষয়। তবে যেসব শিল্পী সেই বর্ণিল চরিত্রটিকে সার্থকভাবে তুলে আনতে পেরেছিলেন, সার্বিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক এমির কুস্তোরিকা তাঁদের অন্যতম। হয়তো বন্ধু ছিলেন বলেই এতটা সৎ ও নিখুঁতভাবে ম্যারাডোনাকে পর্দায় হাজির করতে পেরেছিলেন কুস্তোরিকা।

আরও পড়ুনইনসাইড এজ: ক্রিকেটের অন্ধকার অন্দরমহলে যা ঘটে২৪ মার্চ ২০২৫

ম্যারাডোনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মতোই এই প্রামাণ্যচিত্র খানিকটা খাপছাড়া ও এলোমেলো। তবে কুস্তোরিকার অন্য কাজগুলো দেখলে বিষয়টা মোটেই অপরিকল্পিত বা উদ্দেশ্যহীন মনে হবে না। অনৈক্যের এই ঐক্য কুস্তোরিকার অন্য চলচ্চিত্রগুলোতে বেশ প্রবল। পাশাপাশি এটিকে ম্যারাডোনার চরিত্রের প্রতীকী প্রকাশ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।

এই প্রামাণ্যচিত্র শুরু হয় বুয়েনস এইরেসের একটি কনসার্টের দৃশ্য দিয়ে। এরপর ভয়েস ওভারে শোনা যায় কুস্তোরিকার কণ্ঠ। তিনি বলেন, ‘ডিয়েগো খুব সহজেই আমার প্রথম সিনেমার নায়ক হতে পারত।’ এভাবেই মূলত শুরু হয় প্রামাণ্যচিত্রটি। একই সঙ্গে একজন নায়ক এবং প্রতি নায়কের গল্প। আরও সহজভাবে বললে পরিচালক কুস্তোরিকার একজন বন্ধুর গল্প।

বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে ম্যারাডোনা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র অন য

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রমজীবী নারী সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অবহেলিত

নারী হওয়ার কারণে মজুরি বৈষম্য, কাজের নিরাপত্তাহীনতার সমস্যাসহ বিশেষভাবে যৌন হয়রানির বিষয়টি যুক্ত হয়।

বাংলাদেশে শ্রমজীবী নারীর অনুপাত দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর দুটি বড় কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে– একজন ব্যক্তির আয় দিয়ে একটি পরিবার চলবে– এমন অবস্থা বর্তমান সময়ে নেই। এর ফলে ওই পরিবারের নারী সদস্যকে আয়-রোজগারের পথ খুঁজতে হচ্ছে। খুঁজতে গিয়ে এ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যারা শ্রমজীবী, তাদের যে কাজের সুযোগ থাকে, পোশাক খাত এর মধ্যে অন্যতম।
গার্মেন্টস প্রাতিষ্ঠানিক খাত। এ ছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবেও অনেক ধরনের কাজ রয়েছে। এর মধ্যে মুদি দোকান, মাটি কাটা, গৃহকর্মী থেকে শুরু করে নানা ধরনের কাজ হতে পারে। কোনোটাই স্থায়ী নয়। এগুলোর কোনো নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও নিরাপত্তা নেই। কাজ করতে হয় খুব নাজুক ও অনিশ্চিত অবস্থায়। তবুও জীবিকার তাগিদে এসব কাজ নারীকে করতে হয়। দ্বিতীয় কারণ হলো, অনেক পরিবার ভেঙে যায়। স্বামী কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করে না। বিয়ে করে ছেড়ে দেয়; চলে যায় কিংবা স্বামী থাকা সত্ত্বেও কোনো দায়িত্ব নেয় না সংসার ও সন্তানের। তখন নারীকে বাধ্য হয়ে কাজে নামতে হয়। আবার আত্মসম্মানবোধ ও পরিচয়ের তাগিদ থেকেও একজন নারী নিজের একটি কর্মজীবন তৈরি করেন। 
এসব কারণে আমাদের দেশে নারী শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি; যা সরকারি হিসাবে যথাযথভাবে উঠে আসে না। শ্রমিক হিসেবে তাঁর স্বীকৃতিও এখন পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে আসে না। না আসার ফলে বাংলাদেশে তাদের আয়-রোজগারের নির্দিষ্টতার কোনো বিধিমালা নেই। 
ঈদের আগে গার্মেন্ট শ্রমিকরা তাদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন করেছে। গত কয়েক মাসে বারকয়েক দেখা গেছে, তারা বকেয়া পরিশোধের জন্য রাস্তায় এসেছে। এটি হলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সব থেকে সংগঠিত শ্রমিকদের অবস্থান। সেখানে নারীরা তাদের মজুরি বাকি, অসম্মানজনক অবস্থাসহ সব দাবি জানাচ্ছে। 
সরকারে পরিবর্তন এলেও, এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন আসেনি। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সমস্যা। অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার জায়গা আরও বেশি। যেদিন কাজ করবেন, সেদিন তাঁর আয় হবে। যদি তাঁর কোনো অসুখ-বিসুখ হয়, সন্তানের দায়িত্ব নেওয়া ও তাঁর কোনো সমস্যা হলে সেদিন কাজে যেতে পারেন না নারী। কাজ না করলে তাঁর সেদিনের আয়ও নেই। আয় না হলে তাঁর প্রাত্যহিক ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ের কোনো পথ থাকে না। ফলে শ্রমজীবী নারীরা আমাদের দেশে সংখ্যার দিক থেকে গরিষ্ঠ হলেও তারা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। তাদের কোনো মতামত ও কর্মকাণ্ডের ফলে কোনো আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। সরকার পরিবর্তনের পরও তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। নারীরা আরও বেশি বঞ্চিত ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নারী হওয়ার কারণে মজুরি বৈষম্য, কাজের নিরাপত্তাহীনতার সমস্যাসহ বিশেষভাবে যৌন হয়রানির বিষয়টি যুক্ত হয়। গত বছরখানেকের পত্রিকা ঘেঁটে দেখা যাবে, শ্রমজীবী নারী ধর্ষিত, খুন ও নিগৃহীত হওয়ার খবর ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সরকারের কাছেও এর সঠিক কোনো হিসাব নাই। যেসব শ্রমজীবী নারী ধর্ষণ ও খুনের শিকার হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগ কর্মক্ষেত্রে যাওয়া-আসার পথে কিংবা নিজ বাড়িতে। 
এ পরিস্থিতিগুলো মোকাবিলা করে শ্রমজীবী নারী টিকে আছেন। তাদের টিকে থাকার মধ্য দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের অস্তিত্ব টিকে থাকা নির্ভর করে। এটি নারী জীবনের একটা যুদ্ধ; যার মধ্য দিয়ে নারী তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজের আগুনে পাঁচজন দগ্ধ
  • ‘এবং বই’ বুক রিভিউ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত
  • দাউদ হায়দার: কবির দেশ ছাড়ার কষ্ট
  • ছিনতাইকারী টান দেয় ভ্যানিটি ব্যাগ, নারীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় প্রাইভেটকার
  • নারীকে গাড়ির সঙ্গে টেনে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা
  • চলন্ত প্রাইভেটকারে ছিনতাইকারী এসে ছোঁ মেরে টান দিল ব্যাগ, টেনে নিয়ে গেল নারীকে
  • বঙ্গীয় সংস্কৃতি বিদেশে, বাঙালি একাত্ম
  • শিশুর জন্য গ্রোথ হরমোন কেন, কখন
  • পুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা
  • শ্রমজীবী নারী সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অবহেলিত