সপ্তাহের প্রথম দিনেই এশিয়ার শেয়ার বাজারে বড় ধস, কমেছে তেলের দাম
Published: 7th, April 2025 GMT
নতুন সপ্তাহে শেয়ার বাজার খুলতে খুলতেই আজ এশিয়ায় বড় ধরনের ধস হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর বৃহস্পতি ও শুক্রবারের ধারাবাহিকতায় আজও এই পতন। সেই সঙ্গে কমেছে জ্বালানি তেলের দাম।
বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, আজ সকালে জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচকের পতন হয়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ; হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচকের পতন হয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। সেই সঙ্গে হংকংয়ের শেয়ার বাজারে নিবন্ধিত যুক্তরাজ্যের ব্যাংক এইচএসবিসি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডেরও পতন হয়েছে।
তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরেও শেয়ারের দাম কমেছে। তাইওয়ানে কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ এবং সিঙ্গাপুরে কমেছে প্রায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
সেই সঙ্গে বিশ্ব বাজারে তেলের দামও কমেছে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের ঘরে এবং ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৩ ডলারে নেমে এসেছে।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটের স্টক মার্কেট ফিউচার্স সূচকও অনেকটা পড়ে গেছে। অর্থাৎ আজ সেখানেও বাজারে লেনদেন চালু হওয়ার পর সূচকের বড় দরপতন হবে।
আগামী ৯ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকর, যদিও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন খোদ আমেরিকানরাই। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে যখন সমালোচনায় মুখর গোটা বিশ্ব, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাতে বিচলিত নন, শেয়ার সূচকের পতনে পাত্তা না দিয়ে তাঁর উত্তর ‘ওষুধে কাজ দিচ্ছে।’
শেয়ার বাজারের টালমাটাল পরিস্থিতির দায় নিতে চান না ট্রাম্প। রোববার (যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময়) এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘শেয়ার বাজারের কী হবে, আমি সেটা বলতে পারব না; কিন্তু আমাদের দেশ অনেক শক্তিশালী।
শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন না এবং করতেও চান না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘আমি চাই না, বিশ্বের কোনো শেয়ার বাজারে ধস নামুক, কোথাও কোনো ক্ষতি হোক। কিন্তু বিষয়টি হলো, কখনো কখনো কিছু জিনিস ঠিক করার জন্য ওষুধ দিতে হয়; আমি সেটাই করেছি।’
এই প্রসঙ্গে আরও এক বার সাবেক জো বাইডেন সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন ট্রাম্প। বলেছেন, ‘‘এত বছর ধরে অন্যান্য দেশ আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করে এসেছে। আমাদের মূর্খ নেতৃত্ব তাদের সেই আচরণ করতে দিয়েছে।’ তাঁর সেই এক কথা: যুক্তরাষ্ট্রকে আবার ‘মহান’ বানাব।
গত ২ এপ্রিল বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে ১০ শতাংশ বেজলাইন বা ন্যূনতম শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে বিশ্বের যে ৬০টি দেশ তাঁর ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সবচেয়ে খারাপ আচরণ করেছে, তাদের ওপর পৃথকভাবে শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি; সেই তালিকায় বাংলাদেশও আছে। তাদের হিসাবে যে দেশ যত শুল্ক আরোপ করছে, তাদের ওপর ঠিক তার অর্ধেক হারে শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিতর্কিত হৃদয়কে বাঁচাতে একাট্টা কেন ক্রিকেটাররা
বার্সেলোনার বিপক্ষে কোপা দেল রে ফাইনালের আগে রেফারি পরিবর্তনের দাবি তুলেছে রিয়াল মাদ্রিদ। অনুশীলন ও সংবাদ সম্মেলন বয়কট করেছে। ম্যাচ বয়কট করতে পারে এমন গুঞ্জনও বের হয়েছিল। রিয়ালের দুঃখে ব্যথিত হয়ে বার্সাও অনুশীলন বয়কট করলে কী ভালোই না দেখাত!
রিয়ালের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সা সেটা না পারলেও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) মোহামেডানের জন্য ব্যথিত হয়েছে আবাহনী। শুক্রবার তাওহীদ হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা মওকুফ করতে একাট্টা হয়ে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে হাজির হয়েছিলেন ডিপিএলে বিভিন্ন ক্লাবে খেলা ক্রিকেটাররা। সেখানে সামনের কাতারে সরব উপস্থিতি ছিল আবাহনীর উইকেটরক্ষক ব্যাটার মোহাম্মদ মিঠুনের। অর্থাৎ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের ক্রিকেটার মিঠুনও চান হৃদয় দোষ করলেও সাজা না দেওয়া হোক!
মোহামেডানের হয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে শারীরিক কারণে শেষ করতে না পারা তামিম ইকবালের ডাকে শুধু মিঠুন নয় লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের সৌম্য সরকার, শরিফুল ইসলাম এসেছিলেন বিসিবি’তে। সুপার লিগে উঠতে না পারা ধানমন্ডি ক্লাবের নুরুল হাসান সোহান ও ফজলে মাহমুদ রাব্বি, জিয়াউর রহমানসহ অনেকে ছিলেন। এছাড়া নৈতিক সমর্থন দিয়ে রিয়াদ, মুস্তাফিজসহ অনেককে বিসিবির ঘুরে যেতে দেখা যায়।
ইতিবাচক দিক হলো, তারা কেউ দাবি করেননি তাওহীদ হৃদয় দোষী নন। আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ারের সঙ্গে বাজে আচরণ করে হৃদয় দোষ করেছেন, এটা তারা মানেন। হৃদয়কে দেওয়া দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়নি। তামিমের মাধ্যমে তাদের প্রশ্ন- এক দোষে দু’বার সাজা কেন? এই প্রশ্নকে অযৌক্তিক বলার উপায় নেই। আম্পায়ারের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করা, পরে আম্পায়ারিং নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রশ্ন তোলা ও মুখ খোলার হুমকি দেওয়া এবং শেষে ম্যাচ রেফারির সঙ্গেও গরম দেখানোয় তাকে দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
হৃদয় এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা ভোগ করেছেন। এরপর মোহামেডানের লিখিত আবেদন এবং ‘গোপন চাপে’ বাকি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে ম্যাচ খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। আবেদন করে নিষেধাজ্ঞা কমানো দোষের নয়। কিন্তু সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হয়নি। যে কারণে টেকনিক্যাল কমিটি থেকে এনামুল হক মনি পদত্যাগ করেন। যার সঙ্গে হৃদয়ের বিতণ্ডা সেই আইসিসির এলিট প্যানেলের আম্পায়ার ইবনে সৈকতও পদত্যাগ করেছেন।
এরপর নতুন টেকিনিক্যাল কমিটির চেয়ারে বসে হৃদয়ের পাওনা এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা বহাল করেন বিসিবির পরিচালক ও বিকেএসপির সাবেক কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম। এই ফাহিমকে স্যার বলে সম্বোধন করেন মুশফিক, সাকিবরা। বিকেএসপির সাবেক ছাত্র হিসেবে হৃদয়ও সম্ভবত একই সম্বোধনই করে থাকবেন। ওই হিসেবে- আজ গাজী গ্রুপের বিপক্ষে হৃদয়ের খেলতে পারার কথা নয়। কিন্তু হৃদয় খেলছেন ও দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
অথচ আলোচনা ছিল- আম্পায়ার সৈকতকে বিসিবি অনুরোধ করেছে তার পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করা জন্য। যদিও আপাতত পদত্যাগ প্রত্যাহার না করার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন সৈকত। হৃদয়ের অপ্রীতিকর আচরণে ব্যথিত হয়ে নৈতিকতার প্রশ্নে- ডিপিএলের বিভিন্ন লিগে খেলা এই ক্রিকেটারদের সৈকতকে চাকরিতে ফেরানোর প্রশ্নে একাট্টা হওয়ার কথা ছিল।
তামিমের নেতৃত্বে ক্রিকেটাররা করেছেন উল্টোটা। ‘শেষ’ হয়ে যাওয়া বিষয়কে নতুন করে শুধু বিতর্কিত করেননি বিতর্কের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। ভিন্ন ভিন্ন দলে খেলা ক্রিকেটারদের এক জায়গায় করে বিসিবির ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা এক বছর স্থগিত করা হয়েছে। ওই চাপে নতজানু হয়েছে বিসিবি। নৈতিক পরাজয় মেনে নিয়েছে। এখন হৃদয় আগামী বছরের ডিপিএলে যদি খেলন তবেই এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা ভোগ করবেন।
প্রশ্ন হলো- হৃদয়ের সাজা কমাতে বা স্থগিত করতে মোহামেডান আন্দোলন, অবস্থান কর্মসূচি দিতেই পারে। আবাহনী, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ কিংবা ধানমন্ডির ক্রিকেটাররা কেন আসবেন? হৃদয় দোষ করেছেন এ নিয়ে তো তাদের সন্দেহ নেই। হৃদয়ের সাজা পাওয়া উচিত এটা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়নি। তারপরও একাট্টা কেন তারা? লাভ কী তাদের? এভাবে জোটবদ্ধ হয়ে তারাও কী পরিবর্তিতে ‘অনৈতিক সুবিধা’ পাওয়ার আশায় ‘বিসিবি ঘেরাও কর্মসূচির’ ব্যালট বাক্সে একটা করে ভোট দিয়ে রাখলেন?