Prothomalo:
2025-04-07@14:45:02 GMT

আইনি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

Published: 7th, April 2025 GMT

শনিবার রংপুরে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগ পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।’ তাঁর এ মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা হলে সেটি আমাদের জন্য একটি ‘মাইলফলক’ হবে।

প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘পৃথক সচিবালয় বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। প্রস্তাবিত সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় বিচারিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।’ পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হলে এ রকম আরও অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হবে, সেটা অনেকেরই প্রত্যাশা।

রুলস অব বিজনেস অনুসারে, বিচার–কর্ম বিভাগসংক্রান্ত কাজগুলো প্রধানত সরকারের আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় সম্পাদন করে থাকে। আর কিছু অংশ করে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রি, যা কেবল সুপ্রিম কোর্টের দাপ্তরিক কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফলে বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগ তথা আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ থেকেই যায়।

স্বাধীনতার পর প্রতিটি সরকার পৃথক সচিবালয় স্থাপনের বদলে বিচার-কর্ম বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক বিষয়গুলো সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন বা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে; এমনকি মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরও এ বিষয়ে মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসেনি। একাধিক সাবেক প্রধান বিচারপতি বিচার-কর্ম বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন, এমনকি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করেছেন। কিন্তু তাঁরা সফল হননি ক্ষমতাসীনদের অনাগ্রহ ও অসহযোগিতার কারণে।

অন্তর্বর্তী সরকার অন্যান্য কমিশনের পাশাপাশি বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে বিচার বিভাগ সংস্কারেও একটি কমিশন গঠন করে। গত ৩১ জানুয়ারি সরকারের কাছে জমা দেওয়া কমিশনের প্রতিবেদনেও সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আইন বা অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ করা হয়েছে। 

‘অ্যালোকেশন অব বিজনেসে’ বিচার বিভাগের পৃথক্‌করণ ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসংক্রান্ত বিষয়গুলো সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের ওপর অর্পণ করতে হবে। বিচার-কর্ম বিভাগ ও বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালন করা ম্যাজিস্ট্রেটদের আর্থিক বিষয়াবলিকে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮৮(চ) অনুসারে ‘সংযুক্ত তহবিল’–এর ওপর দায়যুক্ত বলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়।

১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এটিকে পুরোপুরি নির্বাহী বিভাগের অধীনে নিয়ে নেওয়া হয়। সে সময় যাঁরা চতুর্থ সংশোধনীর কঠোর সমালোচনা করেছেন, তাঁরাও ক্ষমতায় এসে পুরোনো পথে হেঁটেছেন।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ১২ নম্বর নির্দেশনা অনুসারে বিচার বিভাগের বার্ষিক বাজেট প্রণয়নের ওপর নির্বাহী বিভাগের কোনো রকম কর্তৃত্ব থাকতে পারবে না। এতে বিচার বিভাগের বাজেটের প্রাক্কলন বিচার বিভাগ নিজেই প্রস্তুত করার, প্রাক্কলন অনুসারে সরকার বিচার বিভাগের জন্য তহবিল বরাদ্দ দেওয়া এবং তা ব্যয়ে সরকারের খবরদারি বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা কখনো ক্ষমতার পূর্ণ পৃথক্‌করণের লক্ষ্যের এতটা কাছাকাছি আসিনি। যদি এই সুযোগ কোনোভাবে নষ্ট হয়, তবে তা বিচার বিভাগের মর্যাদা, অখণ্ডতা এবং প্রাসঙ্গিকতার জন্য চরম ক্ষতিকর হবে।’

 সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় আলাদা কোনো বিষয় নয়; এটি বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। প্রধান বিচারপতির অভিপ্রায় অনুযায়ী যাতে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নেবে আশা করি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব চ র কর ম ব ভ গ ন শ চ ত কর স ব ধ নত সরক র র র জন য অন স র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

আইনি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

শনিবার রংপুরে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগ পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।’ তাঁর এ মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা হলে সেটি আমাদের জন্য একটি ‘মাইলফলক’ হবে।

প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘পৃথক সচিবালয় বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। প্রস্তাবিত সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় বিচারিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।’ পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হলে এ রকম আরও অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হবে, সেটা অনেকেরই প্রত্যাশা।

রুলস অব বিজনেস অনুসারে, বিচার–কর্ম বিভাগসংক্রান্ত কাজগুলো প্রধানত সরকারের আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় সম্পাদন করে থাকে। আর কিছু অংশ করে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রি, যা কেবল সুপ্রিম কোর্টের দাপ্তরিক কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফলে বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগ তথা আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ থেকেই যায়।

স্বাধীনতার পর প্রতিটি সরকার পৃথক সচিবালয় স্থাপনের বদলে বিচার-কর্ম বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক বিষয়গুলো সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন বা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে; এমনকি মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরও এ বিষয়ে মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসেনি। একাধিক সাবেক প্রধান বিচারপতি বিচার-কর্ম বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন, এমনকি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করেছেন। কিন্তু তাঁরা সফল হননি ক্ষমতাসীনদের অনাগ্রহ ও অসহযোগিতার কারণে।

অন্তর্বর্তী সরকার অন্যান্য কমিশনের পাশাপাশি বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে বিচার বিভাগ সংস্কারেও একটি কমিশন গঠন করে। গত ৩১ জানুয়ারি সরকারের কাছে জমা দেওয়া কমিশনের প্রতিবেদনেও সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আইন বা অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ করা হয়েছে। 

‘অ্যালোকেশন অব বিজনেসে’ বিচার বিভাগের পৃথক্‌করণ ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করাসংক্রান্ত বিষয়গুলো সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের ওপর অর্পণ করতে হবে। বিচার-কর্ম বিভাগ ও বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালন করা ম্যাজিস্ট্রেটদের আর্থিক বিষয়াবলিকে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮৮(চ) অনুসারে ‘সংযুক্ত তহবিল’–এর ওপর দায়যুক্ত বলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়।

১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এটিকে পুরোপুরি নির্বাহী বিভাগের অধীনে নিয়ে নেওয়া হয়। সে সময় যাঁরা চতুর্থ সংশোধনীর কঠোর সমালোচনা করেছেন, তাঁরাও ক্ষমতায় এসে পুরোনো পথে হেঁটেছেন।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ১২ নম্বর নির্দেশনা অনুসারে বিচার বিভাগের বার্ষিক বাজেট প্রণয়নের ওপর নির্বাহী বিভাগের কোনো রকম কর্তৃত্ব থাকতে পারবে না। এতে বিচার বিভাগের বাজেটের প্রাক্কলন বিচার বিভাগ নিজেই প্রস্তুত করার, প্রাক্কলন অনুসারে সরকার বিচার বিভাগের জন্য তহবিল বরাদ্দ দেওয়া এবং তা ব্যয়ে সরকারের খবরদারি বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা কখনো ক্ষমতার পূর্ণ পৃথক্‌করণের লক্ষ্যের এতটা কাছাকাছি আসিনি। যদি এই সুযোগ কোনোভাবে নষ্ট হয়, তবে তা বিচার বিভাগের মর্যাদা, অখণ্ডতা এবং প্রাসঙ্গিকতার জন্য চরম ক্ষতিকর হবে।’

 সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় আলাদা কোনো বিষয় নয়; এটি বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। প্রধান বিচারপতির অভিপ্রায় অনুযায়ী যাতে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নেবে আশা করি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ