রাজশাহীতে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের দুটি বাস দুর্ঘটনার কবলে, নিহত ৩,আহত ৪০
Published: 7th, April 2025 GMT
রাজশাহীর পবায় ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে দুটি বাসের ৩ জন নিহত ও অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত ১২টার দিকে উপজেলার খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত তিনজন হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোড়া পাখিয়া গ্রামের সাদিকুল ইসলামের ছেলে জুয়েল আহমেদ (৪০), বেলায়েত হোসেনের ছেলে নাসিম উদ্দিন (৪৫) ও জোবদুল হকের ছেলে মিজানুর রহমান। তাঁরা রানীহাটি ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী ছিলেন। আহত ৪০ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হাসপাতালের ৫, ৮ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ট্রাকের চালকও রয়েছেন। রাজশাহী নগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রানীহাটি ইউনিয়ন জামায়াতের ইসলামীর নেতা–কর্মীরা দুটি বাসে করে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী, আলী আহসান মুহাম্মদ মোজাহিদ ও কাদের মোল্লার কবর জিয়ারত এবং পদ্মা সেতু ও বাঘেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ ভ্রমণে যাচ্ছিলেন। গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বাস দুটি রওনা হয়। দুই বাসে ৯৫ জন যাত্রী ছিলেন। রাত ১২টার দিকে পবার খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে বাস দুটির সংঘর্ষ হয়। একটি বাস রাস্তা থেকে ছিটকে রাস্তার নিচে খাদে পড়ে যায়। আরেকটি বাস রাস্তার অন্য পাশে একটি দোকানে ঢুকে যায়। এই বাসের একটি অংশে আগুন ধরে যায়। পরে শুরুতে স্থানীয় লোকজন এসে বাসের যাত্রীদের উদ্ধার করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির আব্দুল আলীম আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতা–কর্মীরা শিক্ষা সফরে যাচ্ছিলেন। রাজশাহীতে তাঁরা দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তাঁদের তিন কর্মী মারা গেছেন। ৪০ জনের বেশি আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুর্ঘটনার খবর শুনে তাঁরা রাতেই রাজশাহীতে এসেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ইনব বগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
নবীজির (সা.) আদেশ ও সুপারিশের পার্থক্য
নবীজি (সা.) অনেক সময় সাধারণ অর্থে মতামত দিতেন, আদেশ হিসেবে নয়। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হতো নবীজির (সা.)সুপারিশ। নবীজির (সা.)আদেশ ও সুপারিশের মধ্যে পার্থক্য ছিল। আদেশ হলো, যা কার্যকর করা অপরিহার্য এবং ব্যতিক্রম করার উপায় নেই। তবে সুপারিশ হলো, কোনো বিষয়ে নবীজির (সা.)আগ্রহ। সুপারিশকৃত বিষয় পালন না করার স্বাধীনতা ব্যক্তির আছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাহাবিগণ নবীজির(সা.) সুপারিশও কবুল করে নিতেন।
উভয় অবস্থার উদাহরণ পেশ করছি:
ইবনে আবু হাদরাদের কাছে কা’ব ইবনে মালিকের কিছু পাওনা ছিল। মসজিদে তাদের দেখা হলে কা’ব তাঁর পাওনা দাবি করলেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে উভয়ের স্বর উঁচু হলো। নবীজি (সা.) ঘর থেকে তাদের কথা শুনলেন। তাঁর কক্ষের পর্দা উঠিয়ে ডাক দিলেন, ‘কা’ব।’ কা’ব (রা.) বললেন, ‘জ্বি, আল্লাহর রাসুল।’ নবীজি(সা.) বললেন, ‘তুমি তোমার পাওনা এইটুকু ছেড়ে দাও।’ ইশারা করে দেখালেন, অর্ধেক কমিয়ে দাও। কা’ব বললেন, ‘আমি তা-ই করছি, আল্লাহর রাসুল।’ এরপর নবীজি(সা.) ইবনে আবু হাদরাদকে বললেন, ‘যাও, এবার তার পাওনা আদায় করে দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৫৭; মুসলিম, হাদিস: ১,৫৫৮)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) এবং এক কুস্তিগিরের গল্প১০ এপ্রিল ২০২৫কা’ব (রা.)-এর কাছে নবীজি (সা.)তার পাওনা অর্ধেক কমিয়ে দেওয়ার যে অনুরোধ করেছেন, তা মূলত সুপারিশ ছিল; আদেশ নয়। কা’ব যদিও তক্ষুনি তার অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন, তবে সাড়া না দেওয়ার অধিকারও তার ছিল। কিন্তু তিনি নবীজির সুপারিশ কবুল করে নিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত উদাহরণটি ঠিক এর বিপরীত।
বারিরা (রা.) ছিলেন দাসী। তাকে মুক্ত করে দিলেন তার মালিক। কিন্তু তার স্বামী তখনও দাস। দাসত্ব থেকে মুক্ত হলে স্ত্রীর অধিকার থাকে বিয়ে বহাল রাখা বা না রাখার। বারিরা (রা.) তার বিবাহ ভেঙে দিলেন।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘বারিরার স্বামীকে মুগিস নামে ডাকা হতো। সেই দৃশ্য যেন আমি এখনো দেখছি যে, সে বারিরার পেছনে ঘুরছে আর কান্নামাখা অশ্রু তার দাঁড়ি বেয়ে ঝরছে।’ নবীজি (সা.) আব্বাসকে বললেন, ‘আব্বাস, বারিরার প্রতি মুগিসের ভালোবাসা আর মুগিসের প্রতি বারিরার অবজ্ঞা দেখে তোমার অবাক লাগছে না?’ নবীজি(সা.) বারিরাকে বললেন, ‘যদি তুমি তাকে ফিরিয়ে নিতে!’ বারিরা বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আপনি কি আদেশ করছেন?’ নবীজি(সা.) বলেন, ‘আমি শুধু সুপারিশ করছি।’ বারিরা বলেন, ‘তাকে আমার কোনো দরকার নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,২৮৩)
বারিরা (রা.) কিন্তু নবীজির(সা.) সুপারিশ কবুল করেননি। কারণ স্বামীর প্রতি তিনি বীতশ্রদ্ধ ছিলেন এবং তার সঙ্গে তিনি জীবন কাটাতে চাইছিলেন না।
এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, সাহাবিদের অন্তরে নবীজির(সা.) আদেশ ও সুপারিশের মধ্যকার ব্যবধান কত স্পষ্ট ছিল। এমনকি দাস-দাসীদের কাছেও তা ছিল পরিষ্কার।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) এবং এক ইহুদি ছেলের গল্প০৫ মার্চ ২০২৫