যেকোনো মূল্যে নদীটার প্রাণ বাঁচান
Published: 7th, April 2025 GMT
শুধু দখল ও দূষণ নয়, একটা নদীকে কতভাবে ‘হত্যা’ করা যায়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে যশোরের মুক্তেশ্বরী নদীটি। বেসরকারি আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটির একটি অংশ নির্মাণ করা হয়েছে নদীর জায়গা দখল করে। হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে যাতায়াতের জন্য যশোর শহরের পুলেরহাট এলাকায় মুক্তেশ্বরী নদীর দুই তীর কংক্রিট দিয়ে বাঁধাই করে একটি লোহার সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর নিচের অংশে থাকা কংক্রিট আর লোহার অবকাঠামোয় আটকে গেছে নদীর পানির প্রবাহ। এতে একদিকে পানি থাকলেও অন্য পাশ শুকিয়ে মাটি বেরিয়ে গেছে। এখন সেই মাটিও কেটে নেওয়া হচ্ছে।
অবৈধ সেই সেতু নদীর মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দিলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তাদের ভাষ্য, অস্থায়ীভাবে লোহার বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে সেতু নির্মাণ করার সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি আইনকানুনের ঊর্ধ্বে? প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সঙ্গে বেইলি সেতুর একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সেতুর কারণে কীভাবে মুক্তেশ্বরী নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ২০২০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোর কার্যালয় মুক্তেশ্বরী নদীর দখলদারদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় বলা হয়, ৯৭ ফুট প্রস্থ ও ২৪২ ফুট দৈর্ঘ্যের নদীর অংশে আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাততলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তালিকায় আরও কয়েকটি স্থাপনার উল্লেখ করা হয়েছিল।
প্রশ্ন হচ্ছে, তালিকা তৈরির পর চার বছর পেরিয়ে গেলেও কেন দখলদারদের হাত থেকে মুক্তেশ্বরীকে রক্ষা করা গেল না? পাউবো বলছে, দ্রুতই দখল উচ্ছেদের নোটিশ পাঠানো হবে। নোটিশ দিতেই যদি এত বছর পেরিয়ে যায়, তাহলে উচ্ছেদ করতে আরও কত বছর লেগে যাবে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় পরিবেশবাদীরা হাসপাতালটি নির্মাণের শুরু থেকে আন্দোলন করে এলেও জেলা প্রশাসন কিংবা পাউবো তাতে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। নদী রক্ষায় যারা অভিভাবক, তারাই যদি এমন গা–ছাড়া আচরণ করে, তাহলে নদী বাঁচবে কীভাবে।
ভৈরব নদের শাখা নদী মুক্তেশ্বরী চৌগাছা দিয়ে যশোর শহরে প্রবেশ করেছে। এই নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের বর্ষার পানি নিষ্কাশিত হয়। নদীটি ভবদহ বিলে গিয়ে মিশেছে। ফলে যশোরের পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে মুক্তেশ্বরী নদীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা মনে করি, মুক্তেশ্বরী নদীর ওপর অবৈধভাবে নির্মিত সেতু অবিলম্বে অপসারণ করে নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে হবে। আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ অন্য দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদীটাকে আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে। জেলা প্রশাসন ও পাউবোকেও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যেকোনো মূল্যে ধুঁকতে থাকা নদীটাকে বাঁচান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর ম ক ত শ বর
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ এ দেশে রাজনীতি করতে পারবে না: ভিপি নুর
গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরল হক নুর বলেছেন, “জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান শুধুমাত্র আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতন ঘটায়নি এ দেশের ছাত্রজনতা; ভারতীয় আগ্রাসন এবং আধিপত্যকেও উচ্ছেদ করেছে। কাজেই আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ঠিকানা হবে না।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ এ দেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো দেশে এই ধরণের জঘন্য গণহত্যা ও বর্বরতা চালানোর পর অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল রাজনীতি করতে পারেনি।”
শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে পঞ্চগড় জেলা শহরের চৌড়ঙ্গী মোড়ের মুক্তমঞ্চে জেলা গণঅধিকার পরিষদ অয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
ফ্যাসিবাদ নির্মূল না করে গণঅধিকার পরিষদ ঘরে ফিরবে না: নুর
আদালত চলতো হাসিনার নির্দেশে, রায় আসতো গণভবন থেকে: নুর
নূরুল হক নুর বলেন, “আমার দেশের মানুষ সীমান্তে মরে, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৬ বছর কোনো প্রতিবাদ করেনি। সরকারের মন্ত্রীরা বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্ক। এখন তারা জনগণের প্রতিরোধের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এতেই প্রমাণিত, আওয়ামী লীগ ছিল ভারতের দাস, গোলামি করা রাজননৈতিক দল। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে আমরা চাই, ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হবে, ন্যায্যতার সম্পর্ক হবে; গোলামির সম্পর্ক নয়।”
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর ভুলে গেলে চলবে না- তাদের সুবিধাবাজি, ভাওতাবাজি চিন্তাভাবনার কারণেই গত ১৬ বছর তাদের ডাকে জনগণ রাস্তায় নামেনি। ছাত্র-জনতা তরুণদের বিশ্বাস করেই বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণ করার জন্য বুক চেতিয়ে লড়াই করেছে এ দেশের জনগণ।”
তিনি আরো বলেন, “একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত যত আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে, প্রত্যেকটি আন্দোলনেই সাধারণ শ্রমিক, কৃষক, জনতা সংগ্রাম করেছে; এর ফল ভোগ করেছে ভাওতাবাজ ভণ্ড রাজনীতিবিদরা। আমরা বলতে চাই, আর ভাওতাবাজ ভণ্ড রাজনীতিবিদদের পেছনে ঘুরে দেশ, সমাজ, এলাকার ক্ষতি করা যাবে না। ভবিষ্যত নষ্ট করা যাবে না। এখন সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। সমাজকে পরিবর্তনের জন্য সাধারণ ছাত্র-জনতাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।”
নূরুল হক নুর বলেন, “আওয়ামী লীগের আমলে লুটপাট, দখলদারি, চাঁদাবাজি আর মাফিয়াদের রাজনীতি চলেছে। গণঅভ্যুত্থানের পরেও কিন্তু তার পরিবর্তন হয়নি। ট্রাক, টেম্পু, বাস স্ট্যান্ড থেকে আগে যেভাবে চাঁদা তোলা হত, এখনো তা বন্ধ হয়নি। আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেলেও কাঁচা বাজার, সবজি বাজার, সমিতি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস, মিল ফ্যাক্টরি থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। চাঁদাবাজ, দখলদারদের তো আমরা জীবন দিয়ে, বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হটিয়েছি, বিতারিত করেছি, তাহলে এখন চাঁদাবাজ, দখলদার কারা? আমরা একটা পরিবর্তনের রাজনীতির কথা বলি। বিভিন্ন রাজননৈতিক দলের নেতাদের বলি- আপনাদের স্বভাব-চরিত্র যদি আওয়ামী লীগের মতো হয়, জনগণ কিন্তু ভোটের মাঠে জবাব দেবে।”
পঞ্চগড় জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি মাহাফুজার রহমান সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর আসাদ, গণসংহতি আন্দোলনের পঞ্চগড়ের আহ্বায়ক সাজেদুর রহমান সাজু, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপার সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বিপ্লব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি।
ঢাকা/নাঈম/মাসুদ