বলিউডের বরেণ্য অভিনেতা বিনোদন খান্না। ছোট চরিত্র দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে মানুষের মুঠো মুঠো ভালোবাসা কুড়াতে থাকেন। তারপর প্রধান চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এরপর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এক জীবনে অর্থ, যশ-খ্যাতি সবই পেয়েছেন। দুঃখজনক ব্যাপার হলো— ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী ছিলেন এই তারকা শিল্পী।

রুপালি জগতের হলেও বিনোদ খান্না অত্যন্ত আধ্যাত্মিক মানুষ ছিলেন। তাই ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকা অবস্থায় প্রয়াত আধ্যাত্মিক গুরু ওশো রজনীশের অনুসারী হয়ে ওঠেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগনে অবস্থিত আধ্যাত্মিক গুরু রজনীশপুরমেও চলে যেতেন বিনোদ। আর এসব তথ্য জানিয়েছেন ওশো রজনীশের ব্যক্তিগত সহকারী মা আনন্দ শীলা।

সুইজারল্যান্ডের নাগরিক মা আনন্দ শীলা। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত রজনীশপুরম আশ্রম দেখাশোনা করেন তিনি। ফলে বিনোদ খান্নাকে কাছ থেকে দেখেছেন। পিঙ্কভিলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পঁচাত্তরের শীলা বলেন, “বিনোদ খান্নার স্টারডম আমাকে প্রভাবিত করেনি। তাকে অন্য সন্ন্যাসীদের মতোই দেখেছি।”

বিনোদন খান্নার সবকিছু থাকার পরও আশ্রমে কী খুঁজছিলেন? এ প্রশ্নের জবাবে শীলা বলেন, “আমি জানি, তার বাড়িতে সবকিছু ছিল। কিন্তু তিনি সুখী ছিলেন না। তার মধ্যে মদ্যপান করতেন। অসুখী এবং মদ্যপান— এ দুটো খুবই খারাপ ব্যাপার।”

বিনোদন ব্যক্তিগত জীবনে কেন অসুখী ছিলেন, তার খানিকটা ব্যাখ্যা দিয়ে শীলা বলেন, “পৃথিবীতে বৈবাহিক সমস্যা খুবই প্রচলিত ব্যাপার। এটি গড়তেও পারে, ভাঙতেও পারে। আমি যতটা বুঝতে পেরেছি, এটাই ছিল তার মূল সংগ্রাম।”

তবে বিনোদন খান্না যা খুঁজতে আশ্রমে যেতেন, সর্বশেষ তা পেয়েছিলেন কিনা তা জানেন না শীলা। তার ভাষায়— “এ বিষয়ে আমি কখনো বিনোদ খান্নার সঙ্গে কথা বলিনি।”

ষাটের দশকের শেষ লগ্নে রুপালি জগতে পা রাখেন বিনোদ খান্না। ১৯৭১ সালে গীতাঞ্জলি তালেয়ার খান্নার সঙ্গে প্রথম বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বিনোদ। এ সংসারে জন্ম নেয় অভিনেতা অক্ষয় ও রাহুল খান্না। ১৯৮৫ সালে গীতাঞ্জলির সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে বিনোদ খান্নার।

১৯৯০ সালে শিল্পপতি শরায়ুর কন্যা কবিতাকে বিয়ে করেন বিনোদ খান্না। এ সংসারে একটি কন্যা ও একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ দিন লড়াই করে ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল ৭০ বছর বয়সে মারা যান বিনোদ খান্না।

বিনোদন খান্না অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো— ম্যায় তুলসি তেরে আঙ্গন কি, কুরবানি, খুন পাসিনা, মেরে আপনে, চাঁদনি, সত্যমেব জয়তে, পারবারিশ, মুকাদ্দার কা সিকান্দার, মেরা গাঁও মেরা দেশ, অমর আকবর অ্যান্থনি প্রমুখ।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রজন শ

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতিতে মার্কিন তৎপরতা

বাংলাদেশের রাজনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশ্ব ও আঞ্চলিক রাজনীতি এবং কূটনীতির ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন ও সমীকরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেমন এ মুহূর্তে যে বিষয়টি আলোচনা ও বিশ্লেষণের দাবি রাখে সেটি হচ্ছে, প্রতিবেশী মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা ইস্যু। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক ও বৃহৎ পরাশক্তিগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে। তাদের সেই পারস্পরিক স্বার্থ ও সমীকরণ যেমন এক ধরনের বোঝাপড়া গড়ে তুলেছে, তেমনি একে অন্যের প্রতি সতর্ক অবস্থানও তৈরি করছে। কেননা, এখানে সব পক্ষের স্বার্থের হিসাব এক নয়। আছে বিভিন্ন পক্ষের নিজস্ব এজেন্ডা।

চীন-রাশিয়া ও কিছু ক্ষেত্রে ভারতের বলয়ে থাকা মিয়ানমার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তির আগ্রহ নতুন নয়; কিন্তু কোনোভাবেই তারা এখানে সুবিধা করতে পারছিল না। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও আরাকান আর্মির অগ্রগতি তাদের সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। তারা এখন মানবিক সাহায্যের কৌশলে এখানে তাদের কর্তৃত্ব, প্রভাব ও অবস্থান বাড়াতে চায়। 
আমরা দেখেছি, গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছিলেন। সেটা কতখানি রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তামূলক সফর; কতখানি মিয়ানমার বিষয়ে পশ্চিমা ছকের অংশ, তা ভবিষ্যতে আরও স্পষ্ট হবে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, সেই সফরে তিনি আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশকে। এ ক্ষেত্রে তাঁর যুক্তি ছিল, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য দখল ও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিলে তখন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে।  
সাদা চোখে এই সরল কৌশল সামনে রেখে গুতেরেস বলেছেন, জাতিসংঘের দাতা দেশগুলোও রাখাইন রাজ্যে তাদের সাহায্য সরবরাহের একটি নিরাপদ করিডোর চায়। সেখানে মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য করিডোরটি প্রয়োজন; যদিও তিনি কোনো সামরিক সাহায্যের বিষয়ে কিছু বলেননি। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, রাখাইনের জন্য করিডোর দিতে অন্তর্বর্তী সরকার নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে (সমকাল, ২৮ এপ্রিল ২০২৫)।

বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) তৎপরতা দৃশ্যমান না হলেও অজানা নয়। সীমান্তের বাইরে আরাকান আর্মি ও চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের যোদ্ধারা মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে উৎখাত করে মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় যুদ্ধরত। সেটা না হলেও আপাত তাদের লক্ষ্য আরাকান রাজ্যের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। 
মার্চ মাসে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা লে. জেনারেল জোয়েল ভাওয়েল বাংলাদেশ সফর করেন। যতদূর জানা যাচ্ছে, তাঁর সফরেরও অন্যতম ইস্যু ছিল মিয়ানমার পরিস্থিতি ও রাখাইনে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ-পরবর্তী হিসাব-নিকাশ। আরাকান আর্মি যাতে রাখাইন রাজ্য দখলে নিতে পারে, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করবে বলে শোনা যাচ্ছে। রাখাইন রাজ্যে অবাধ প্রবেশের মানবিক সহায়তা করিডোর সেই লক্ষ্যে ব্যবহৃত হতে পারে? নানা কথাই শোনা যাচ্ছে।

চলতি মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে আসেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন মার্কিন নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশে তারা বৈঠক করেন। সেখানে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, বাংলাদেশের মিডিয়ায় তেমন আলোকপাত হয়নি। যদি সামরিক সহায়তার আলোচনা থেকে থাকে, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে?    
আরও প্রশ্ন হচ্ছে, কোন কোন দেশ মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে? মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পাশের চিন রাজ্যটিও আরাকান আর্মি দখল করেছে। এ অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর নাম ‘চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’। এরা যৌথভাবে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এই চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলের এক সময়ের আলোচিত সন্ত্রাসী সংগঠন ‘কুকি চিন গোষ্ঠী’র যোগাযোগ থাকার সংবাদ বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় এসেছিল। 

এটা স্পষ্ট, আরাকান আর্মি ও চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এ দুই শক্তিকে সমর্থন দিয়ে মিয়ানমার সামরিক জান্তাকে উৎখাতে ইন্ধন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতও। তারাও আরাকান আর্মির রাখাইন রাজ্যের পূর্ণ দখল দেখতে চায়। তাদের স্বার্থ ভারতের মিজোরামের সঙ্গে থাইল্যান্ডের সংযোগ। বাংলাদেশে আত্মগোপনে থাকা আরসাপ্রধানের হঠাৎ গ্রেপ্তারের কারণ যা-ই হোক; এই অঙ্ক মেলানো যায়, জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আরসা ও আরাকান আর্মির সংযোগ ঘটিয়ে দেওয়া গেলে সেটা হবে রাখাইনের ‘গেম চেঞ্জার’। 

প্রশ্ন হচ্ছে, এসব হিসাব-নিকাশে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রসঙ্গটি কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে? বাংলাদেশের প্রধান এজেন্ডা সেটাই হওয়া উচিত। আরাকান আর্মির রাখাইন রাজ্য নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর যে কৌশলের কথা বলা হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে জান্তা সরকার চীন-রাশিয়ার সমর্থনে টিকে আছে। শুধু তাই নয়; বিদ্রোহীদের সঙ্গেও চীনের ঘনিষ্ঠ কৌশলগত যোগাযোগ আছে। চীন বঙ্গোপসাগর এলাকাজুড়ে কৌশলগত অবস্থান ও নিজেদের সামরিক প্রভাব বাড়াচ্ছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে চীন থেকে সাবমেরিন কেনা হয়েছিল। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়েই সমাধান চেয়ে এসেছে। বঙ্গোপসাগর ঘিরে এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া কি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে? এ কারণেই কি তাদের তিনটি যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশে ‘শুভেচ্ছা সফর’ করেছিল? 
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমার ও রাখাইন রাজ্যের ক্ষমতা কাঠামোর এই পরিবর্তনের পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর যুক্তিকে সমর্থন করা যেতে পারে। কিন্তু সীমান্ত খুলে দেওয়ার মাধ্যমে কোনো আঞ্চলিক প্রক্সি যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি সমীচীন হবে না।
    
ড. মঞ্জুরে খোদা: লেখক-গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ