নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে ডাকা বৈশ্বিক ধর্মঘটে সংহতি জানিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। একইসঙ্গে আজ সোমবার দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতা। পাশাপাশি ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে কাজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গাজাবাসীর সমর্থনে আজ সোমবার রাজধানী ঢাকায় সংহতি সমাবেশ, বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন। এনসিপি কর্মসূচি ঘোষণা না করলেও দলটির নেতারাও সংহতি জানিয়েছেন সোমবারের বৈশ্বিক ধর্মঘটে।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আজ সোমবার দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতা। এই ডাকের প্রতি সংহতি জানিয়ে এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগে আজ ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, আইইউবিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিসহ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে আজ ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছে। 

‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম আজ সোমবার বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে সংহতি সমাবেশের আহ্বান জানিয়েছে। তারা আজ বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংহতি ও বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এ কর্মসূচি সফলের আহ্বান জানিয়ে নিজেদের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তায় আজ সারাদেশে ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলনের’ দুই সংগঠক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ ও এ বি যুবায়েরও এ কর্মসূচি সফল করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে আজ বিকেল ৫টার দিকে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিক্ষোভ করবে জামায়াত। ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। 

প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। একই সঙ্গে ইসরায়েলের হামলায় হতাহত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে আজ বিশ্বব্যাপী কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। ছাত্রদল তাদের কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে মুখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান এবং দুপুর ১২টায় প্রতিটি শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মিছিল বের করে শহরের প্রাণকেন্দ্রে সম্মিলিত বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। 

ফিলিস্তিন দখলকারী ও গণহত্যাকারী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলকে থামাতে বৈশ্বিক জিহাদ অনিবার্য হয়ে পড়েছে জানিয়ে হেফাজতে আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান গতকাল যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা পৃথিবীর সব নৃশংসতার সীমা ছাড়িয়েছে।

এর প্রতিবাদে বাদ জোহর সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে হেফাজত। বৈশ্বিক ধর্মঘটের সমর্থনে গতকাল রাত ৯টায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে মিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন। 
এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন, দলমতনির্বিশেষে সারাদেশের ছাত্র জনতার একসঙ্গে রাজপথে নেমে ইসরায়েলি খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত। কোনো দল নয়, বাংলাদেশের পতাকা হাতে রাজপথে নেমে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইউন ভ র স ট ইসর য় ল গণহত য ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় গণহত্যা বন্ধে সারাবিশ্বে ‘ নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’

গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠন নিউইয়র্ক হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন এবং ডক্টর্স অ্যাগেইনস্ট জেনোসাইড। আজ সোমবার নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় কর্মীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন। কর্মসূচির নাম ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’। 
একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দিয়েছে ‘দ্য ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস ইন প্যালেস্টাইন’। ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপস’, অর্থাৎ ‘গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ ও স্কুল বন্ধ’ নামে আজ সোমবার বিশ্বজুড়ে এ অবরোধ পালনের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে নারী-শিশুর দেহ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আরও ভবন। গত ২৩ মার্চ ১৫ চিকিৎসাকর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ভুল স্বীকার করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। 
‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির ব্যাপারে হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন তাদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে লিখেছে, গাজায় গণহত্যা বন্ধে আমরা বৈশ্বিক ধর্মঘটের আহ্বান জানাচ্ছি। এই উদ্দেশ্য সফল করতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল বন্ধ থাকবে। পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের দিকে ইঙ্গিত করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ব এখন নবজাতক ও মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অনেক সচেতন। অথচ গাজাবাসী জীবন ধারণের মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে। মার্কিন বোমার আঘাতে হাসপাতাল গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। অগণিত মা ও শিশু সাধারণ যত্নের অভাবে এবং বিস্ফোরণের আঘাতে মৃত্যুবরণ করছে।
এর মধ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফর যেন আগুনে আরও ঘি ঢেলে দিয়েছে। ট্রাম্পের নতুন ঘোষিত শুল্ক নিয়ে সমঝোতার পাশাপাশি ইরান ও হামাস বিষয়ে আলোচনা করতে আজ ওয়াশিংটন যাওয়ার কথা রয়েছে নেতানিয়াহুর।
নেতানিয়াহুর সফর নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, নেতানিয়াহুকে ফেরারি যুদ্ধাপরাধী বলে রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। সেই অপরাধী আবার একই দিনে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করতে যাচ্ছেন।

ধর্মঘটে অংশগ্রহণের জন্য জোরালো আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, গাজার জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে সবাই রাস্তায় নেমে আসুন। জায়নবাদীদের যুদ্ধাপরাধের অবসান ঘটান। মার্কিন সহযোগিতা বন্ধ করুন। আর সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনুন। পুরো একটা জনগোষ্ঠী যখন অনাহারে থেকে বোমার আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে, আমরা তখন হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। রাস্তায় নামুন, আওয়াজ তুলুন, প্রতিবাদ করুন!

গতকাল রোববার ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার ফিলিস্তিনজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট পালন করা হবে। গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও ন্যায়বিচারের পক্ষে কাজ করা লোকজনকে সমর্থন জানিয়ে এ ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। 
গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনটি ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা ও অপরাধকে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। 
ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনে নির্বিচার গুলি চালিয়ে বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ করে শিশু ও নারীদের হত্যাকাণ্ড এবং ফিলিস্তিনিদের নিজ বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত করার লক্ষ্যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। বিবৃতিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের অবসান ঘটাতে এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ইসরায়েলের জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।

গাজায় ছিন্নভিন্ন নারী-শিশুর দেহ 
গতকাল রোববার ভোরে গাজার খান ইউনিসের একটি আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বোমা হামলায় সেখানে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে নারী-শিশুর মরদেহ। ওই হামলা থেকে বেঁচে ফেরা খান ইউনিসের বাসিন্দা জামাল আল-মধুন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ ঘরগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেল। আমরা ধ্বংসস্তূপ থেকে আটজনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। তাদের সবাই নারী ও শিশু। একজন পুরুষও নেই। এই নিরীহ নারী-শিশু সবার মরদেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। 
গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শনিবার রাতভর ইসরায়েলি হামলায় ২১ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের বর্বর হামলায় অন্তত ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৮ জন আহত হয়েছেন।  
গত ২৩ মার্চ গাজায় ১৫ জন জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীকে হত্যার ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের ভুল স্বীকার করেছে। তারা শুরুতে দাবি করেছিল, অন্ধকারে হেডলাইট বা ফ্ল্যাশলাইট ছাড়া গাড়িবহরের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তারা গুলি চালিয়েছিল।   
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজার বিভিন্ন অংশে হামলার মাত্রা বড় আকারে বাড়িয়েছে ইসরায়েল, যার বড় একটি অংশ দক্ষিণ গাজার রাফা শহরকে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে। কার্যত নিশ্চিহ্নের পথে রয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ শহরটি। সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফিলিস্তিনেও একদিন ‘জুলাই’ আসবে
  • গাজায় নৃশংস হত্যার প্রতিবাদ বাসদের
  • ৬ দাবিসহ মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে মার্চ করবে আজাদ ফিলিস্তিন
  • গাজায় গণহত্যা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবাদের ঝড় 
  • নোয়াখালীতে শিক্ষার্থী-জনতার বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ
  • গাজার জন্য ঢাকার শোবিজ তারকাদের মন কাঁদছে 
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ
  • গাজায় ইসরায়লি হামলার প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ
  • গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে দেশে দেশে বিক্ষোভ
  • গাজায় গণহত্যা বন্ধে সারাবিশ্বে ‘ নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’