ভারতের উড়িষ্যায় বাংলাদেশি পর্যটকবাহী বাস খালে পড়ে ননীবালা নাথ (৬০) নামে একজন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। গত শনিবার রাত আড়াইটার দিকে রাজ্যের উপকূলীয় শহর পুরী যাওয়ার পথে উত্তরাচকে ৬৫ জন বাংলাদেশি পর্যটক নিয়ে বাসটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। স্থানটি পুরী-ভুবনেশ্বর সীমান্তের কাছে এবং পুরী জেলার পিপিলি পুলিশের এখতিয়ারে পড়ে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, অপ্রশিক্ষিত সহকারীকে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ দিয়ে বাসচালক ঘুমাচ্ছিলেন। পরে বাসটি সড়ক বিভাজকে ধাক্কা খেয়ে উল্টে রাস্তার পাশে খালে পড়ে যায়। আহতদের ক্যাপিটাল হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সকাল ১১টার দিকে ১১ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন। এতে চার নারী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। 

পুলিশ জানিয়েছে, চালক ও সহকারী উভয়ই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আহত পর্যটক বরদা বৈদ্য বলেন, ‘আমরা পুরী যাচ্ছিলাম। চালক ক্লান্ত ছিলেন বলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তিনি তাঁর সহকারীকে বাস চালাতে দেন। সহকারী বাসটি চালানোর সময় সড়ক বিভাজকে ধাক্কা দেন। এতে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খালে পাড়ে যায়। সৌভাগ্যবশত খালে খুব বেশি পানি ছিল না। দুর্ঘটনার সময় বেশির ভাগ যাত্রী ঘুমাচ্ছিলেন।’

পিপিলি থানার ইনচার্জ সৌম্যেন্দু ত্রিপাঠী বলেন, পালিয়ে যাওয়া বাসচালক ও সহকারী শনাক্ত হয়েছে। তাদের শিগগির গ্রেপ্তার করা হবে। আমাদের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার ছিল পর্যটকদের উদ্ধার করে হাসপাতালে স্থানান্তর। উল্টে যাওয়া বাস থেকে যাত্রীদের উদ্ধারে স্থানীয়রা আমাদের সাহায্য করেছে। ননীবালার মৃত্যু হয় ক্যাপিটাল হাসপাতালে। 
বাসটিতে ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী পর্যটক বেশি ছিলেন। তবে কয়েকজন তরুণ সদস্যও ছিলেন। পুরী ভ্রমণের জন্য তারা কলকাতার একটি ট্রাভেল এজেন্সি থেকে দুটি বাসের ব্যবস্থা করেছিলেন। পর্যটকরা বাংলাদেশের বান্দরবান, ফরিদপুর, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাঙামাটি, সাতক্ষীরা ও নোয়াখালী অঞ্চল থেকে এসেছিলেন।
পরিবহনমন্ত্রী বিভূতি ভূষণ জেনা দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে পুরীর আঞ্চলিক পরিবহন অফিসকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার আহত যাত্রীদের সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশি পর্যটকদের পুরীতে পরিবহনের জন্য বিকল্প বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

বাংলাদেশ থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতিবছর পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে পূজা-অর্চনা করতে যান। মন্দিরটি বেলেপাথরের তৈরি। ১১৬১ খ্রিষ্টাব্দে পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। মন্দিরের চারটি দ্বার রয়েছে। উত্তর দ্বার, দক্ষিণ দ্বার, পূর্ব দ্বার ও পশ্চিম দ্বার। উত্তর দিকে হস্তীদ্বার, দক্ষিণে অশ্বদ্বার, পূর্বদিকে সিংহদ্বার ও পশ্চিমে ব্যাঘ্র দ্বার।
মন্দিরের গোপন কক্ষে সাতটি ঘর আছে। সেই ঘরগুলোই হলো রত্নভান্ডার। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত মন দ র সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যাথেন্সের অ্যাক্রোপলিস ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী

প্রাচীন ধর্ম, দর্শন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তীর্থস্থান গ্রিস। বিশ্বের পর্যটকদের কাছে অন্যতম পছন্দের স্থান গ্রিসের রাজধানী অ্যাথেন্সের অ্যাক্রোপলিস। গ্রিস ভ্রমণ করেছেন কিন্তু অ্যাক্রোপলিসে যাননি এমন পর্যটক পাওয়া দুষ্কর। অ্যাক্রোপলিস বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর মধ্যে একটি। অ্যাথেন্সে সবচেয়ে বেশি পর্যটনের আনাগোনা থাকে এখানে। প্রতিদিন ২৩ হাজারেরও বেশি পর্যটক অ্যাক্রোপলিসে ঘুরতে যান। 

সময়ের পরিক্রমায় পৃথিবীতে যতগুলো শহর প্রাচীন দর্শন ও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে, তাদের মধ্যে গ্রিসের রাজধানী অ্যাথেন্স অন্যতম। এ নগরীর ইলিসস উপত্যকায় চুনাপাথরের পাহাড়ের ওপর সগৌরবে আড়াই হাজার বছর ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে গ্রিক পুরাণের দেবী অ্যাথেনার সম্মানে নির্মিত পার্থেনন মন্দির, সঙ্গে আরও একাধিক স্থাপত্যকলা। রয়েছে গ্রিসের প্রাচীন শাসকদের স্মৃতিবিজড়িত অনেক ছোট ছোট স্থাপনা। যেখানে রয়েছে ধর্মীয় উপাসনালয়, নগরদুর্গসহ তৎকালীন রাজার বাসস্থান। একে প্রাচীন গ্রিসের দেব-দেবতার বাসস্থানও বলা হয়। এগুলোই বর্তমানে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। বোমাবর্ষণ থেকে ভূমিকম্প– বহু আঘাত গেছে এসব স্থাপনার ওপর দিয়ে। তবুও গ্রিসের সমৃদ্ধ ইতিহাসের স্মারক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এটি; যা দেখতে বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে যান পর্যটকরা।

অনেক ভিন্ন ভিন্ন স্থাপনার সমন্বয়ে গঠিত এ অঞ্চলকে ঐতিহাসিকরা অ্যাক্রোপলিস নামকরণ করেছেন। অ্যাক্রোপলিস এবং এর স্মৃতিস্তম্ভগুলো প্রাচীন ইতিহাসসমৃদ্ধ গ্রিসের সবচেয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ শহর হিসেবে অ্যাথেন্সকে উপস্থাপন করে।

নিঃসন্দেহে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অ্যাক্রোপলিসে এসে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক-দর্শনার্থী এর মহিমায় মুগ্ধ হন। পর্যটকদের চাপ সামাল দিতে গত বছর অ্যাক্রোপলিসে অতিরিক্ত জনসমাগমের জন্য প্রবেশ সীমিত করেছে দেশটির সরকার। গ্রিসের সংস্কৃতিমন্ত্রী লিনা মেনডোনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘অ্যাক্রোপলিসে প্রতিদিন ২৩ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী আসেন। গেটের প্রবেশ টিকিট বিক্রয়ের হিসাবে এ সংখ্যা নিরূপণ করা হয়।’ গত বছর পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রতিদিন ২৩ হাজার পর্যন্ত প্রবেশ সীমাবদ্ধ করেছে। 

অ্যাক্রোপলিসের উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ৬০০ ফুট এবং আয়তন ৩০ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। অ্যাক্রোপলিসের নির্মাণকাজ শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪৭ অব্দে। এখানকার পার্থেনন মন্দির নিয়ে গবেষণা এখনও চলছে। গবেষকদের ধারণা, এই মন্দির বানাতে ২২ হাজার টন মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। বিশাল আকৃতির ৫৮টি পিলার রয়েছে। পিলারে ব্যবহার করা হয়েছে ১৩ হাজার মার্বেলের টুকরা। মন্দিরের পিলারের ওপরের কারুকাজ করা একেকটি মার্বেলের ওজন ১০ টন। এখানে ছিল স্বর্ণনির্মিত ১২ মিটার উঁচু অ্যাথেনা দেবীর মূর্তি। প্রাচীন গ্রিক পুরাণ অনুসারে, অ্যাথেনা শিক্ষা, সংস্কৃতি, বীরত্ব, শক্তি, যুদ্ধ, জ্ঞান ও শহরের দেবী।

২০১৫ সালে একদল প্রকৌশলী অ্যাক্রোপলিসের কাঠামোগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন– আড়াই হাজার বছর আগের স্থপতিরা এর কাঠামোকে ভূমিকম্প সহনীয় করেই তৈরি করেছিলেন; যার কারণে অ্যাক্রোপলিস ও পার্থেননের কাঠামো এখনও অ্যাথেন্সের বুকে দাঁড়িয়ে আছে।

অ্যাক্রোপলিসের নিচেই রয়েছে দুটি প্রাচীন থিয়েটার ডায়োনিসাস ও হেরোডিয়ন। ২৪০০ বছরের পুরোনো ১৬ হাজার দর্শকাসনের ডায়োনিসাস থিয়েটারের বিশাল ধ্বংসাবশেষ। ১৮০০ বছরের পুরোনো ‘আউটডোর থিয়েটার’ হেরোডিয়নে ১ হাজার ২০০ দর্শকাসন ছিল। এর পাশের আরেকটি উঁচু পাহাড়ে রয়েছে দার্শনিক সক্রেটিসের কারাগার; যেখানে কেটেছে সক্রেটিসের জীবনের শেষ দিনগুলো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পেট্রাপোলে যেন ‘লকডাউন’, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দিশেহারা
  • ভারতে বাংলাদেশি পর্যটকবাহী বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ১৬
  • ওড়িশায় দুর্ঘটনার কবলে বাংলাদেশি পর্যটকবাহী বাস, নিহত ১ আহত ১৫
  • ওড়িশায় বাংলাদেশি পর্যটকবাহী বাস দুর্ঘটনায় একজন নিহত, আহত ১৫
  • সৈকতে জেগে ওঠা কংক্রিট-জিও ব্যাগ পর্যটকদের গলার কাঁটা
  • মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র যেন পর্যটন স্পট, দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়
  • অ্যাথেন্সের অ্যাক্রোপলিস ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী