শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সোমেস্বরী, কর্ণঝোড়া ও ঢেউফা নদীতে যত্রতত্র দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে বালু উত্তোলনের মচ্ছব চলছে।
নির্বিচারে বালু তোলার কারণে নদীর তীর ভেঙে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। বালুবাহী ভারী যানবাহন চলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তাঘাট। ইতোমধ্যে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে গারো পাহাড়ের হারিয়াকোনা, বাবেলাকোনা, রাঙ্গাজান, খরামোড়াসহ সীমান্তের অনেক সড়ক। শয়তান বাজারের মেঘাদল এলাকায় সোমেস্বরী নদীর ওপর কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর পাটাতন ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সেতুটি। তা ছাড়া রাতভর বালু তোলার মেশিনের শব্দে পরিবেশের পাশাপাশি পাহাড়ের জীব-বৈচিত্র্য হুমকির মুখে রয়েছে। মানুষও ঘুমাতে পারছে না।
গভীর রাতে বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলেমিশে চলছে চোরাকারবারি ও মাদক কারবারিদের রমরমা ব্যবসা। স্থানীয়দের দাবি এসব কর্মকাণ্ডের হোতা ‘বালু মাসুদ’ ও তাঁর সিন্ডিকেট। তাঁর নেতৃত্বেই চলছে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তের অবৈধ ব্যবসা।
অভিযোগ রয়েছে, জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বালু মাসুদ লাখ লাখ টাকার অবৈধ বালু ব্যবসা করে আসছেন।
জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল রাতে সংবাদকর্মীরা শয়তান বাজার এলাকায় খবর সংগ্রহ করতে গেলে হামলার শিকার হন। প্রেস ক্লাবের কার্যকরী সভাপতি রফিক মজিদের দাবি, বালু মাসুদের নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা হয় এবং গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় একটি মামলা করেছেন তারা। দুই দিন আগে বালু মাসুদকে গ্রেপ্তারের দাবিতে শ্রীবরদী পৌর শহরেও ছাত্র-জনতার ব্যানারে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার রাতে শ্রীবরদী সীমান্ত থেকে বালু মাসুদকে আটক করে র‍্যাব-১৪। গতকাল রোববার সকালে তাঁকে শ্রীবরদী থানায় সোপর্দ করে র‍্যাব। পুলিশ তাঁকে দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে।
বালু মাসুদের গ্রেপ্তারের খবর জানাজানি হলে ছাত্র-জনতার ব্যানারে রোববার সকালে কালেক্টরেট চত্বরে মানববন্ধন করা হয়। কর্মসূচিতে অংশ নেন ছাত্র-জনতা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও পরিবেশবাদী সংগঠনের দুই শতাধিক নেতাকর্মী।
মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন শ্রীবরদীর বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শাহাদাত হোসেন জিকু। তাঁর ভাষ্য– সোমেশ্বরী, ঢেউফা ও কর্ণঝোড়া নদীতে কোনো বালুমহাল নেই। এখান থেকে এক ইঞ্চি বালু উত্তোলন করলেও সেটা অবৈধ। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে বালুখেকোরা প্রশাসনের নাকের ডগায় ২৪ ঘণ্টা বালু উত্তোলন করছে। প্রতিদিন অন্তত শতাধিক ট্রাক বালু দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে। এক ট্রাক বালু ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন তারা। বালু উত্তোলনের কারণে শব্দ দূষণে এলাকার মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি আদিবাসী এক নারী প্রতিবাদ করায় তাঁকে মেরে আহত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসক, পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কারণে আইনের আওতায় আসে না বালু দস্যুরা, বালু উত্তোলন বন্ধ হয় না, আমরা তা জানতে চাই।’ তাঁর দাবি, এভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও স্থানীয় উচ্চবিত্তরা সরাসরি জড়িত। ব্যারিস্টার শাহাদাত হোসেন জিকু বলেন, ‘আমরা বালু উত্তোলন সত্যিকার অর্থে বন্ধ করার দাবি জানাই। সেই সঙ্গে বালু মাসুদসহ যারা জড়িত তাদের আইনের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হোক।’
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে সুলতান মাহমুদ, শাকিল, ইসমাইল, শাকিল হাসান, মনিরুজ্জামান মনির, সাজ্জাদ হোসেন, মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
শ্রীবরদী থানার ওসি আনোয়ার জাহিদ বলেন, রোববার সকালে বালু ব্যবসায়ী মাসুদকে থানায় হস্তান্তর করেছে র‍্যাব। দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে কাররাগারে পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ র বরদ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

রংপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ আহত ২০

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রংপুরের বদরগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা শহরের শহীদ মিনারের সামনে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোনো মুহূর্তে আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বদরগঞ্জ বাজারে দোকান ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টিনের ব্যবসা করছেন জাহিদুল ইসলাম। গত মাসে হঠাৎ জাহিদুল ইসলামকে দোকান ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন দোকান মালিক ইতিয়াক বাবু। ২০২৮ সাল পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ থাকলেও জাহিদুল ইসলাম দোকানের জামানত বাবদ দেওয়া ৩৫ লাখ টাকা ফেরতের শর্তে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু দোকান মালিক জামানতের ওই ৩৫ লাখ টাকা দিতে অসম্মতি এবং দোকান নিজে না ছেড়ে দিলে জোর করে ছাড়িয়ে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। এরই প্রেক্ষিতে দোকান মালিক ইতিয়াক বাবু দলবল নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় দোকানঘর ভাঙচুরসহ লুটপাট করেন। 

এ সময় ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম প্রতিবাদ করলে তাকেও বেধড়ক মারপিট করে আহত করেন। বর্তমানে জাহিদুল ইসলাম বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ঘটনায় ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলামের পক্ষ নেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক। জামানতের টাকা না দিয়ে ভাড়াটিয়াকে মারধর এবং দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বদরগঞ্জ শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন আয়োজন করে বিএনপির শহিদুল হক মানিক গ্রুপ। মানববন্ধনের সময় অতর্কিত হামলা চালায় সাবেক এমপি রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য ও বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার গ্রুপ। এর সঙ্গে যোগ দেন বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কোভিদ মানিক। হামলা চালিয়ে তারা মানববন্ধনের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং মাইক ভাঙচুর করেন। 

এতে মানববন্ধনকারী মানিক গ্রুপের লোকজন লোকজন বাধা দিলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত হন। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শফিকুল ইসলাম, লাভলু হাজী, ময়নাল উদ্দিনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে বদরগঞ্জ থানার ওসি এ কে এম আতিকুর রহমান জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগ, প্রত্যাহার দাবি
  • ভারতে ওয়াক্‌ফ বিল পাসের নিন্দা জানাল ছাত্রশিবির
  • রংপুরে ফরম পূরণ করেও প্রবেশপত্র পায়নি ৭৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী, মানববন্ধন
  • ভোলায় ‘নিরপরাধ’ ব্যক্তিদের আটকের অভিযোগ তুলে কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধে বিএনপির মানববন্ধন
  • রংপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ আহত ২০