সাম্প্রতিক ঈদুল ফিতরের ছুটির সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শুধু ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনার যেই চিত্র রবিবার সমকাল তুলিয়া ধরিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। রাজধানীর দুইটি এবং ঢাকার বাহিরের আট বিভাগীয় শহরের বিশেষায়িত আটটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করিয়া সমকাল জানাইয়াছে, ঈদের ছুটির এই চার দিবসে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ৩২ শতাংশের অধিক ছিলেন ব্যাটারিচালিত রিকশার যাত্রী, যাহা একই সময়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহতদের প্রায় সমান। বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সংগৃহীত তথ্য বলিতেছে, গত ঈদুল আজহায় সড়কে সর্বাধিক দুর্ঘটনার কারণ ছিল মোটরসাইকেল; ৫১ শতাংশের অধিক। এইবারের ঈদুল ফিতরে দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে মোটরসাইকেলের স্থান আশঙ্কাজনকভাবে দখল করিয়াছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্লেখ্য, প্রতিবেদন অনুযায়ী, উক্ত সময়ে হাসপাতালে আগত ২৫.
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, শুধু ঈদের অবকাশ নহে, ইদানীং মূল সড়কগুলিতে অধিকাংশ সময়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটিতে দেখা যায়। যাহার ফলে সড়কে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হইতেছে। তাঁহার আশঙ্কা, এই সকল বাহন নিয়ন্ত্রণে না আনা হইলে দুর্ঘটনার হার আরও বৃদ্ধি পাইবে। তৎসহিত বৃদ্ধি পাইবে নিহত ও আহতের সংখ্যা।
দেশের কোনো মহাসড়কে ত্রিচক্রযান চলিতে পারিবে না– এই বিধান বহু পূর্বেই জারি করা হইয়াছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বিধানটি বরাবরই উপেক্ষিত। মহাসড়ক পুলিশও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিষয়টি দেখিয়াও না দেখিবার ভান করে। ফলশ্রুতিতে, একদা বিভিন্ন মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানের ক্ষেত্রে শুধু সিএনজি অটোরিকশা চলিলেও ইদানীং ব্যাটারিচালিত রিকশাও চলমান অজস্র। এই বিষয়টি কাহারও অজানা নহে, প্রচলিত রিকশার সহিত নিছক একটি ইঞ্জিন সংযুক্ত করিয়াই নাম দেওয়া হইয়াছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। ইহাতে না রহিয়াছে মানসম্মত গতি হ্রাসের ব্যবস্থা, না রহিয়াছে সড়কের ধরন অনুযায়ী নকশা। এককথায়, চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সৃষ্ট এক প্রকার যান এই ব্যাটারিচালিত রিকশা। অভিজ্ঞতা বলে, এই তথাকথিত যান্ত্রিক বাহনে একনাগাড়ে কয়েক মাস চলিলে যে কাহারও পৃষ্ঠপ্রদাহ চরমে উঠিবে। উহার সহিত সংশ্লিষ্ট চালকেরও শরীরের ঘটিবে সর্বনাশ। এতৎসত্ত্বেও এই যান লইয়া আমাদের নীতিনির্ধারকগণের নিদ্রাভঙ্গ হইতেছে না।
অনস্বীকার্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সম্পর্কিত প্রধানত সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণে দেশে সাম্প্রতিক বৎসরগুলিতে বেকারত্ব ক্রমবর্ধমান। উহারই প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষ নিরুপায় হইয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা চালনাকে পেশারূপে গ্রহণ করিয়াছে। শুধু আইনগত পদক্ষেপ এই প্রকট সমস্যার সমাধান দিতে পারিবে না।
বহু পূর্ব হইতে নির্বাহী আদেশ তো বটেই, উচ্চ আদালতেরও নির্দেশ– মহাসড়ক, তৎসহিত ঢাকার ন্যায় নগরীসমূহের মূল সড়কে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলিতে পারিবে না। আমাদের জানামতে, এহেন রিকশাচালকদের সমিতির নেতৃবৃন্দও সরকারের উক্ত সিদ্ধান্তের সহিত ঐকমত্য পোষণ করিয়াছিলেন। অতএব পুলিশের সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহ ইচ্ছা করিলেই উক্ত নিয়মটি বলবৎ করিতে পারে। ইহাতে একদিকে দুর্ঘটনার হার যদ্রূপ হ্রাস পাইতে পারে, তদ্রূপ মহাসড়ক ও নগরীর মূল সড়কগুলিতে যানজটও সহনীয় পর্যায়ে আনয়ন করা যায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সমকালে সংবাদ প্রকাশের পর লম্বাশিয়া পাহাড়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করল প্রশাসন
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের লম্বাশিয়া পাহাড় ধ্বংস করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। লম্বাশিয়া পাহাড়টি বালু প্রকৃতির, যার ফলে এ পাহাড় ঘেঁষে যাওয়া সাতগরিয়া ছড়ার পানির পথ পরিবর্তন করে দেয় বালুখেকোরা। আস্তে আস্তে ভেঙে পড়ে পাহাড়। শ্যালো মেশিন দিয়ে উত্তোলন করা হয় বালু। এভাবেই চলছে দেড় যুগ ধরে।
এ ছড়ায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে এক কিলোমিটারজুড়ে পাহাড়ের ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে। রোববার দৈনিক সমকালে ‘লম্বাশিয়া পাহাড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চলছেই’ শিরোনাম সংবাদ প্রকাশ হয়। এ সংবাদ প্রকাশের এক দিন পর রোববার দুপুরে লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় অবৈধভাবে উত্তোলিত বালুর ঢিবি নষ্ট করে দেওয়া হয়। বালু উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত অবৈধভাবে মজুদ করা পানি কেটে বের করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বালু পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত রাস্তা কেটে গর্ত তৈরি করে দেওয়া হয়, রাস্তার মাঝে পিলার পুঁতে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া হয়।
লোহাগাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুন লায়েল ও সহকারী বন সংরক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। সঙ্গে ছিলেন চুনতির রেঞ্জ অফিসার মো. আবীর হাসান, সাতগড় বিটের বিট অফিসার মহসিন আলী ইমরানসহ থানা পুলিশ ও বনবিভাগের সদস্যরা।
২০২৩ সলের ২৪ ডিসেম্বর দৈনিক সমকালে ‘অবৈধ বালু উত্তোলন চলছেই, কিলোমিটার জুড়ে ক্ষতচিহৃ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই সংবাদ প্রকাশের পরও বনবিভাগ ও প্রশাসন রাস্তায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। তখনই বন্ধ হয়ে যায় অবৈধ বালু উত্তোলন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আরেক দল দূর্বৃত্ত কাঁটাতার তুলে আবারও অবৈধ বালু উত্তোলন করে।