সরকারকে দীর্ঘদিন রাখার আলাপ অগ্রহণযোগ্য
Published: 6th, April 2025 GMT
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা গুছিয়ে চলতে শুরু করেছে বললে ভুল হবে না। আট মাস অতিক্রান্ত; এর মধ্যে গুছিয়ে ওঠা স্বাভাবিকও। সময় বরং বেশি নিয়ে ফেলেছে। এই সরকারের অবশ্য নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই। ড. ইউনূস শুরুতে বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক আলোচনা’তেই স্থির হবে, কতদিন তারা থাকবেন। এর মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের এক ধরনের রোডম্যাপও দিয়েছেন তিনি। সে অনুযায়ী আগামী বছর জুনের পর কোনোভাবেই এ সরকারের থাকার কথা নয়। ইতোমধ্যে অবশ্য চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বেশি করে সামনে এসেছে। পাশাপাশি সরকার প্রশাসনকে কিছুটা গুছিয়ে নিয়েছে বলেও প্রতীয়মান।
সরকারের গুছিয়ে চলার একটা প্রমাণ– গেল রমজান ও ঈদ ভালোভাবে ‘ম্যানেজ’ করতে পারা। নিত্যপণ্যের দাম থেকে ঈদযাত্রা– সবখানেই পারফরম্যান্স ভালো। ঈদের আগ দিয়ে রেমিট্যান্স প্রাপ্তি উঠেছে নতুন উচ্চতায়। তাতে গ্রামাঞ্চল এবার ছিল বেশি উৎসবমুখর। ঈদের পর ক’দিন আমিও একটি ‘রেমিট্যান্স পল্লি’ দেখেছিলাম। দেখেছি, রমজানে পণ্যবাজার সহনীয় থাকা নিয়ে মানুষজন সন্তুষ্ট। প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিবর্তনে অখুশি ভারতকে মোকাবিলায় তাঁর সরকারের ভূমিকাসহ বিভিন্ন কাজ নিয়ে মানুষের প্রশংসাই দেখলাম বেশি। সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মন্দ নয়। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অপরাধ বাড়ার খবরে তারা একই সঙ্গে বিচলিত। এ অবস্থায় নির্বাচিত সরকার এলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে বলে দু-তিনজন মত দিলেন। তাদের একজন আবার বললেন ‘ইউনূস সরকার’কে দীর্ঘদিন রেখে দেওয়ার কথা!
ঈদের আগ দিয়ে এমন আলাপ কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনেও তোলা হয়েছে। হাসিনা সরকারের পতন-পরবর্তী জটিল পরিস্থিতিতে ড.
ঈদের ছুটির পর সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপ আবার শুরু হওয়ার কথা। নির্দিষ্ট সময়ে এ প্রক্রিয়া শেষ করে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই চার্টার’ প্রকাশের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। কতখানি সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করবে আর কতখানি নির্বাচিত সরকার– সেটাও এরই মধ্যে স্থির হবে। ‘অধিকতর সংস্কার’ করতে না হলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন– এটাও ড. ইউনূসের ঘোষণা। নভেম্বর-ডিসেম্বর নির্বাচনের উপযুক্ত সময় বটে; যদিও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় জুনে ইতোপূর্বে নির্বাচন হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তীকালে তেমন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও নির্বাচন বেশি দূরে ঠেলে দেওয়ার সুযোগ নেই। ১৮ মাসের মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সহায়তা জুগিয়ে ব্যারাকে ফিরতে চায় সেনাবাহিনী– এটাও বাস্তবতা। উন্নয়ন সহযোগীরাও সুনির্দিষ্ট মেয়াদের জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার চাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও চান সুস্পষ্ট নীতিগত নির্দেশনা, যা আসতে পারে নির্বাচিত সরকার থেকেই। কর্মসংস্থান ও আয় পরিস্থিতি খারাপ– এটা অন্তর্বর্তী সরকারও গোপন করছে না। রমজান ও ঈদে ‘চাহিদার চাপ’ কম থাকাতেও পরিস্থিতি ইতিবাচক ছিল বলে মত রয়েছে।
সন্দেহ নেই, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সরকার আন্তরিক। সময় লাগলেও মনোবলহীন পুলিশকে তারা সক্রিয় করে তুলেছে। সেনাসদস্যরাও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলোয় সক্রিয়। ‘মব ভায়োলেন্স’ কমে এসেছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সরকার স্বাভাবিক রাখতে পেরেছে এ পর্যন্ত। কৃষি উৎপাদনে সংকট দৃশ্যমান নয়। ‘অতি উৎপাদনের সংকট’ বরং কিছু ক্ষেত্রে দৃশ্যমান। সংকটগ্রস্ত ব্যাংকগুলো রক্ষায় সচেষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফ মিশন এসেছে প্রতিশ্রুত ঋণের কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়ন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে।
চীনে আলোচিত সফরের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রত্যাশিত বৈঠকও হয়ে গেছে প্রধান উপদেষ্টার। তাতে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা সহজ হওয়ার আশা দু’দিক থেকেই বেড়েছে। আমেরিকার ‘পাল্টা শুল্কনীতি’তে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও এটা প্রতিযোগী দেশগুলোর ক্ষেত্রেও কমবেশি প্রযোজ্য। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন সহকর্মীদের সঙ্গে। এসব মিলিয়ে সরকারের মধ্যে গুছিয়ে ওঠার পাশাপাশি তৎপর হওয়ার প্রবণতা স্পষ্ট। তার কঠোর সমর্থকরাও এতে উজ্জীবিত। এ অবস্থায় তাদের ভেতর থেকেই উঠেছে ইউনূস সরকারকে দীর্ঘদিন রেখে দিয়ে দেশ পুনর্গঠনের দাবি।
‘দীর্ঘদিন’ মানে কতদিন? আগামী বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের দু’বছর পূর্ণ হবে। এর আগে এক-এগারোর সরকার প্রায় দু’বছর ক্ষমতায় ছিল। সেই সময় অতিক্রম করেও ইউনূস সরকারকে রেখে দেওয়ার দাবি কোনো কোনো মহল থেকে উঠছে। তাদের মত, বিচারসহ ‘প্রয়োজনীয় সব সংস্কার’ সেরে নির্বাচন দিয়ে তবেই বিদায় নিক সরকার। তাতে একটা ‘কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ’ মিলবে। প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে এ বিষয়ে স্বভাবতই কোনো বক্তব্য মেলেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ সময়সীমা থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ কি রয়েছে? নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা যাচাই এবং জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্পও কি আছে– এসব প্রশ্ন নতুন করে সামনে আসার কথা নয়। কিন্তু মহলবিশেষের কারণে এসব বিষয়ে নতুন করে আলোচনায় যেতে হচ্ছে অনিচ্ছুকদের। ইসি অবশ্য ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে নিয়েই গ্রহণ করছে তার প্রস্তুতি। সংস্কার আলোচনাও চলমান। বিচার প্রক্রিয়ায় গতি সঞ্চারের দাবি বাড়ছে। এর কোনোটাই তো নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার কথা নয়।
শেষ কথা, জনগণই দেশের মালিক ও গণতন্ত্রের রক্ষক। নির্বাচনসহ সব গণতান্ত্রিক অধিকারই তার প্রাপ্য। তবে সবকিছু একযোগে অর্জনের চেষ্টায় সব ভণ্ডুল হওয়ার শঙ্কাতেও জনগণ নিশ্চয় থাকতে চাইবে না। একটা নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে ইউনূস সরকার কিছু ব্যতিক্রমী কাজে তার ‘পদচ্ছাপ’ রেখে যাচ্ছে, সন্দেহ নেই। এ অবস্থায় অধিকতর সংস্কারের ব্যাপারে ঐকমত্য হলে ২০২৬ সালের মধ্যভাগ পর্যন্তও সময় নেওয়া যেতে পারে। নির্বাচন ব্যবস্থার পাশাপাশি পুলিশ ও বিচার বিভাগ সংস্কারে স্পষ্ট কিছু অগ্রগতি হলেও সেটা কম প্রাপ্তি হবে না। অবশিষ্ট সংস্কার সাধনে জনগণের লড়াইও থাকবে অব্যাহত। গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজ তো দু-চার বছরে শেষ হওয়ার নয়। রক্তক্ষয়ী আন্দোলন আর সংস্কারের মাধ্যমে অর্জন করা গেলেও সেটি রক্ষার কাজে কিন্তু বিরাম নেই। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় রাজনৈতিক পশ্চাদপসরণও কি আমরা দেখি না? তাদেরও নতুন করে কি দাঁড়াতে হচ্ছে না গণতন্ত্রের সপক্ষে?
হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলামিস্ট
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ইউন স সরক র পর স থ ত ড স ম বর র জন ত ক সরক র র সরক র ক এ অবস থ ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনী ট্রেনের ট্র্যাক ঠিক করতে যা করা দরকার
এ মুহূর্তে দেশে কোনো রাজনৈতিক সংকট নেই; যা দেখছি তা অতীতের জঞ্জাল পরিষ্কার করে ভবিষ্যৎ যাত্রার চ্যালেঞ্জ। নিশানা: একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। এই সাধারণ ঐকমত্য (যদি তা ঠিক ধরে নেই) ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের একই সঙ্গে কারণ এবং ফলাফল।
তা সত্ত্বেও অতি সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, মরিয়া হওয়া পতিত শক্তির ভয়াবহ অপতথ্যের প্রচারাভিযানের প্রভাবে অংশীজনের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস। যেন চলমান সংস্কার পূর্ণ না হলে নির্বাচন হবেই না; আবার দ্রুত নির্বাচন হলে সংস্কারপ্রক্রিয়া মাঠেই মারা যাবে। একেই বলে উভয়সংকট!
এ অবস্থায় প্রতিনিয়ত কথার বাহাসে একটা প্রশ্ন বেমালুম এড়িয়ে যাচ্ছি আমরা—জুলাই-আগস্ট বিপ্লব না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের আলোচনাটি পর্যন্ত সম্ভব হতো কি, সর্বজনাব...?
জনগণের নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করবে, এ নিয়ে তো তর্কের অবকাশ নেই; সেই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে, ফ্যাসিবাদী শাসনে পচে যাওয়া প্রতিষ্ঠান ঠিকঠাক করাটাও তো জরুরি ছিল। এতেও হয়তো কারও দ্বিমত নেই, তবে অবশ্যই পতিত আওয়ামী লীগ ও তার দোসরেরা ছাড়া।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার যেমন বলছে না নির্বাচন দেওয়া হবে না, বিএনপিসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোও তো নীতিগতভাবে সংস্কারের বিরোধিতা করছে না। শুধু কিছু রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর, সামাজিক মাধ্যমের অতিকথন এবং আড্ডার উর্বর আলোচনা চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সমাজে ধূম্রজাল সৃষ্টি এবং সুশীল সমাজকে বিভ্রান্ত ও রাজনৈতিক মনকে উতলা করতে পেরেছে।
দেখুন, এই যে সন্দেহের রাজনৈতিক আবহ, অস্বীকার করা যাবে না, এর একটি ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা (লিগ্যাসি) আছে। আসলে ক্ষমতাসীনদের প্রতিশ্রুতি ভাঙার বেদনায় আহত এক জাতি আমরা। রাজনীতিকদের অনেকেই কেন জানি যৌক্তিক ও দূরদর্শী; কিন্তু জনসেবার সরল পথ অনুসরণ করতে দ্বিধান্বিত থাকেন। হতে পারে পুরোনো মানসিকতা অথবা নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কে কিছুটা হীনম্মন্যতা থেকে, আন্দোলন-সংগ্রাম ও রাজনৈতিক দর–কষাকষির জায়গায় আমরা আলোচনার টেবিলে নিজেদের শক্তিমত্তা খুব একটা দেখাতে পেরেছি বলে মনে পড়ছে না।
যখনই সংলাপে বসেছি, তখন ফলাফল শূন্যই হয়েছে বেশি। যে কারণে ২০২৪-এর পর্যন্ত নানা সময়ে ঘটেছে সহিংস পরিবর্তন এবং ১৯৯৫,২০০৬, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ব্যর্থ সংলাপ।
রাজনৈতিক ময়দান হোক আর আলোচনার টেবিল হোক, বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তরণের উদ্যোগ সফল পরিণতি না পাওয়ার অন্যতম সাধারণ কারণ একটি ন্যূনতম রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং গ্রহণযোগ্য চুক্তিতে পৌঁছার ব্যর্থতা। সুতরাং কার্যকর সংস্কার ও প্রকৃত সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হলে সেটাই করতে হবে আজ, যা অতীতে সম্ভব হয়নি এবং সেটিই হবে এক নতুন দৃষ্টান্ত।রাজনৈতিক ময়দান হোক আর আলোচনার টেবিল হোক, বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তরণের উদ্যোগ সফল পরিণতি না পাওয়ার অন্যতম সাধারণ কারণ একটি ন্যূনতম রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং গ্রহণযোগ্য চুক্তিতে পৌঁছার ব্যর্থতা। সুতরাং কার্যকর সংস্কার ও প্রকৃত সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হলে সেটাই করতে হবে আজ, যা অতীতে সম্ভব হয়নি এবং সেটিই হবে এক নতুন দৃষ্টান্ত। যা মানুষ সোজাসাপটা ক্রেইগকে বুঝবে এবং বিশ্বাস করতে পারবে। অতীতে না পারা সেই রাজনৈতিক চুক্তিকেই এবার সফল করতে হবে। এবং সে জন্য দরকার হবে খোলামনের জাতীয় সংলাপ।
কেন, ভাই? সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্টের ওপর তাদের মতামত তো দিয়েই দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। ঠিক, কিন্তু ওই ফিডব্যাক মূলত একপক্ষীয় প্রতিক্রিয়া, সাংকেতিক ভাষায় লিখিত রিপোর্টের বক্তব্যের মতোই। অংশীজনের চিন্তার দূরত্বও জাতির জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়।
এখনকার বাস্তবতায় একটি সত্যিকারের দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় এবং মুখোমুখি প্রাণবন্ত আলোচনা ব্যতীত কমিশনগুলোর সুপারিশ এবং অংশীজনের সুচিন্তিত মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্যের দলিল প্রস্তুত করা প্রায় অসম্ভব। তাই অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার ও অবশ্যম্ভাবী নির্বাচন নিয়ে শতধাবিভক্তি বা জাতীয় হতাশা তৈরির আগেই একটি সর্বজনীন অংশীজনের সংলাপ আয়োজন করা যেতে পারে ৷
আরও পড়ুনবিএনপি ও এনসিপির মধ্যে কেন এই বাক্যুদ্ধ ১১ ঘণ্টা আগেসপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত বড় বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন বা কিছু কিছু দেশে বিপ্লবোত্তর জাতীয় কনভেনশনের আলোকে একটি জাতীয় সম্মেলনের উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। কেউ বলতে পারেন, ওরকম কোনো আয়োজন না করলেই বা ক্ষতি কী? এর উত্তর হচ্ছে: তাতে শতাব্দীর অনন্য সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে, দেশ থেকে যেতে পারে নেতৃস্থানীয়দের আত্মম্ভরিতায় ভরা হাসিনা আমলের সংস্কৃতির বৃত্তেই।
আমরা যদি জাতীয় সংলাপ ও সমঝোতার পথ বেছে নিই, সেখানে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন অধিবেশনে তর্ক-বিতর্ক হতে পারে প্রাসঙ্গিক জাতীয় ইস্যুগুলো নিয়ে। সেই সংলাপের ভিত্তি হতে পারে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের অলিখিত ঘোষণাপত্র, যা রচিত হতে পারে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক সংগ্রামের উদ্দেশ্য ও জন-আকাঙ্ক্ষার আলোকে।
সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণগুলো সেখানে ভালোভাবে উপস্থাপিত হতে পারবে। রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের প্রতিনিধিদের দ্বারা ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রণীত একটি সামাজিক চুক্তির দলিলে সই করা যেতে পারে শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলনে।
যেটা হতে পারে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার সনদ, যে দলিল জাতি হিসেবে আমাদের সভ্যতা ও অধিকতর যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারে। এতে করে সংস্কার এবং জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন নিয়ে রাজনৈতিক মালিকানায় কোনো ঘাটতি থাকবে না। রাজনৈতিক নেতৃত্বও এই এক্সারসাইজ করে সমৃদ্ধ হতে পারে।
এরপর অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আর কোনো বাধাই থাকে না। তবে ন্যায় ও নৈতিকতার স্বার্থে বলে রাখি, একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্তে ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক বা গণতন্ত্র হত্যাকারী দল ও গোষ্ঠীর গণবিরোধী ও দেশবিরোধী রাজনীতির কোনো বৈধতা নেই।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষায় যে ‘নির্বাচনী ট্রেন’ ইতিমধ্যে চালু হয়েছে এবং চলতে থাকবে, তাকে সঠিকভাবে গন্তব্যের দিকে পৌঁছুতে সাহায্য করতে পারে মসৃণ রাজনৈতিক ট্র্যাক।
একটি সফল জাতীয় সংলাপ সেই পথ এবং যাত্রাকে আরও নির্বিঘ্ন করতে পারে। আমাদের সম্মিলিত ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব নেওয়া এবং সে অনুযায়ী কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া, এখন জীবিত প্রজন্মের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
খাজা মাঈন উদ্দিন সাংবাদিক
( লেখকের মতামত নিজস্ব)