Samakal:
2025-04-07@22:28:07 GMT

বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা

Published: 6th, April 2025 GMT

বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা

আমার কর্মক্ষেত্রের পাশে কিছু দিন ধরে এক রাখালকে দেখছি এক পাল মহিষ দেখভাল করছেন। কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে গেলাম। আলাপচারিতায় জানলাম, তাঁর বয়স ৫০ বছর, নাম মো. হেলাল। ছোট ১৪ এবং বড় ১৭টি মিলে ৩১টি  মহিষ দেখাশোনার জন্য তাঁর মালিক তাঁকে প্রতি মাসে ১৭ হাজার টাকা বেতন দেন; সেই সঙ্গে আছে তিনবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা। মহিষগুলোর স্থায়ী অবস্থান ছিল নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামে। সেখানে মহিষগুলোর মালিকের খামারবাড়ি। দীর্ঘদিন বৃষ্টি নেই। নতুন ঘাস গজাচ্ছে না। তা ছাড়া আগের মতো বিস্তীর্ণ গো-চারণভূমি এখন কোথাও নেই। দখল বা অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণের কারণে উন্মুক্ত স্থান শহরে যেমন কমেছে, তেমনি গ্রামেও। সবুজ ঘাসের অভাব তাই সর্বত্র। এ অবস্থা রাখাল হেলাল মালিকের নির্দেশে মহিষগুলো নিয়ে ঘাসের সন্ধানে নানা জায়গায় ঘুরছেন।  এখন মহিষগুলো নিয়ে তিনি আছেন নোয়াখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জালিয়াল গ্রামের গণি মিয়ার মোড়-সংলগ্ন খালি মাঠে। মাঠের এক প্রান্তেই আমার অফিস।
এর আগে এক মাস ছিলেন সদর উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের  চর রশীদ গ্রামে। এখন যেখানে আছেন সেই জালিয়াল গ্রামেও ঘাস প্রায় শেষ। তাই অচিরেই যাত্রা করতে হবে নতুন জায়গার সন্ধানে। আপাতত পৌরসভার একই ওয়ার্ডের টাকপুকুর পাড়ের উদ্দেশে রওনা হবেন বলে জানিয়েছেন হেলাল।

ঘাসের সন্ধানে মহিষের সঙ্গে রাখাল হেলালকেও পরিবার-পরিজন ছেড়ে যাযাবর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। চাকরিটা তাঁর সার্বক্ষণিক। বাঁধা শ্রম বললেও ভুল হবে না। কারণ ছুটিছাটার কোনো বালাই নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে হেলাল জানালেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৩০ লিটার দুধ পাওয়া যেত। পানি এবং ঘাসস্বল্পতার কারণে এখন দিনে দুধ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র সাড়ে ছয় লিটার।’
আমাদের অফিস সহকারী পলাশ জানাল, রাখাল দুই দিন তাকে বিনামূল্যে মহিষের দুধ খেতে দিয়েছে। প্রতিদিন আধা লিটার। তার মতে, তাজা দুধ খেতে অনেক সুস্বাদু। তবে দুধ কমে যাওয়াও হেলালের জন্য এক শঙ্কার কারণ। দুধ বেচে মালিকের যদি না পোষে, তবে হেলালকে তিনি রাখবেনই বা কেন! এই রাখালের চাকরি করেই হেলাল দুই মেয়েকে বড় করেছেন, বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলেকে স্কুলে পড়াতে পারছেন। চাকরিটা তার ভারী প্রয়োজন। তবে হেলাল চান না, তাঁর ছেলে এ পেশায় আসুক। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে হয়। তার সঙ্গে বোনাসে অনিশ্চয়তা। তাই তিনি তাঁর ছেলেকে এই পেশায় আনতে চান না। ইচ্ছা থাকলেও নিজে এ চাকরি ছাড়তে পারছেন না। বিকল্প কিছু নেই তাঁর সামনে।
আপাতত ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ নেই হেলালের। তাঁর বর্তমানই যেখানে ধূসর, ভবিষ্যতের চিন্তা করবেন কীভাবে? তাই আগামী দিনের ভার নিয়তির ওপর ছেড়ে দিয়ে বর্তমানের অনিশ্চয়তাই তাঁকে ভাবায় বেশি।

আপাতত তিনি চান বৃষ্টি। ঝমঝম করে বৃষ্টি। গরমে মানুষের যত কষ্ট হয়, মহিষের কষ্ট তার চেয়ে অনেক বেশি। যথেষ্ট বৃষ্টিপাত মহিষগুলোকে  স্বস্তি দিতে পারে; একই সঙ্গে কষ্ট লাঘব করতে পারে হেলালের। বৃষ্টি হলে সবুজ ঘাস গজাবে। হেলাল মহিষসহ ফিরে যেতে পারবেন মূল চাকরিস্থলে। এতে ঘটতে পারে পরিবারের সঙ্গে তাঁর সম্মিলন। 
তাই চলুন, বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা আমরাও করি।

মোহাম্মদ মুনতাসির আজিজ: সমাজকর্মী,নোয়াখালী 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চোখের সামনে যাকে পেয়েছি, তাকেই হত্যা করেছি: ইসরায়েলি সেনার স্বীকারোক্তি

‘যতদূর চোখ গেছে, চোখের সামনে যা কিছু পেয়েছে, ধ্বংস করা হয়েছে। যেখানেই কোনো ধরনের নড়াচড়া চোখে পড়েছে, গুলি করে তা স্তিমিত করে দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা যেনো আর কোনোদিনই এখানে ফিরতে না পারেন, সে ব্যবস্থাই করেছে সেনারা।’

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের গণহত্যার বিবরণ এটি। পরিচয় গোপন করে নিজেদের অপরাধের এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা।

শুধু তাই নয়, বাফার জোনকে (সংঘাতের প্রভাব এড়াতে বিশেষ অঞ্চল) ফিলিস্তিনিদের হত্যা করার ‘কিলিং জোনে’ পরিণত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের ট্যাঙ্ক স্কোয়াডে থাকা একজন সেনা কর্মকর্তা। ট্যাঙ্কগুলোর ৫০০ মিটারের মধ্যে কেউ এলেই তাকে গুলি করা হতো, হোক সে নারী বা শিশু।

হতভাগ্য ফিলিস্তিনিরা জানেনও না ঠিক কোন পর্যন্ত এই বাফার জোনের বিস্তৃতি। না জেনেই হয়তো প্রবেশ করতেন মরণ ফাঁদে।

আরও পড়ুনগাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে পশ্চিম তীরে ধর্মঘট২ ঘণ্টা আগেইসরায়েলের নির্দেশের পর গাজার জাবালিয়া এলাকা ছাড়ছেন ফিলিস্তিনিরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ