সমকাল ও কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল-এর যৌথ আয়োজনে গত ১৫ ডিসেম্বর ‘জেলা পর্যায়ে বহুখাতভিত্তিক পুষ্টিসেবা বাস্তবায়নের সুযোগ, অভিজ্ঞতা ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আলোচকরা বলেন, সবার জন্য পুষ্টির অধিকার নিশ্চত করতে হলে সবাইকে সমন্বিতভাবে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে জেলে পরিবারের কিশোরী টুম্পামনি তার জীবনে ঘটে যাওয়া নানা বাধা-বিপত্তি এবং সেখান থেকে উত্তরণে ‘আমান প্রকল্পের’ ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত করে।

ইফতিয়া জেরিন
মূল প্রবন্ধ : ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশে শিশু ও মাতৃপুষ্টিহীনতা কমাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, যেখানে শিশুদের মধ্যে খর্বাকৃতি, কম ওজন এবং অপুষ্টি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তবে সাম্প্রতিক সূচকগুলোয় দেখা যায়, কম ওজনের সমস্যা হ্রাসের হার থেমে যাচ্ছে। অপুষ্টি ও অতিরিক্ত দুধ পান সূচকেও অবনতি দেখা গেছে, যা চলমান চ্যালেঞ্জগুলোরই ইঙ্গিত দেয়। এ অবস্থার উন্নতির জন্য যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য– কম ওজনের জন্মহার কমানো, শিশুদের খাবারের গুণগত মান বৃদ্ধি, পুষ্টিসেবার পরিধি ও গুণমান উন্নত করা এবং কিশোরী ও মাতৃপুষ্টিহীনতা, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে বাড়তি স্থূলতার হার ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাব মোকাবিলা করা। পুষ্টির অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় পুষ্টি নীতি (এনএনপি) এবং দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির (এনপিএএন২) মতো নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যা বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি কাউন্সিলের 
(বিএনএনসি) সমন্বয়ে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের যৌথ প্রচেষ্টায় প্রণীত হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএসএস) দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা নেট প্রোগ্রামের মাধ্যমে কাজ করছে। তবুও অঞ্চলভেদে পার্থক্য এবং সেবার ঘাটতি রয়ে গেছে। এতে বোঝা যায়, দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টির উন্নতির জন্য আরও ভালো পরিকল্পনা, কাজ এবং পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
কক্সবাজারে প্রায় ৬৩ শতাংশ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শিকার, যেখানে ৩৫ শতাংশ গুরুতর, ১৫ শতাংশ মাঝারি এবং ১৩ শতাংশ কম নিরাপত্তাহীন হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। তবুও মাত্র ২৩ শতাংশ পরিবার সামাজিক নিরাপত্তা নেট প্রোগ্রাম থেকে উপকার পায়, যা জাতীয় গ্রামীণ গড় ৩৪.

৫%-এর তুলনায় অনেক কম। এটি স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং সামাজিক সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ, শিশুদের উচ্চ পুষ্টিহীনতার হার এবং বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (এফডিএমএন) বা রোহিঙ্গাদের আগমনের প্রভাবে সৃষ্ট তীব্র অপুষ্টির সমস্যাকে প্রতিফলিত করে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য নিউট্রিশন 
ইন্টারন্যাশনাল ‘মাল্টিসেক্টরাল অ্যাপ্রোচ ফর নিউট্রিশন’ (এমএএন) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে, যা গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা (জিএসি) দ্বারা অর্থায়িত ৩০ মাসের একটি উদ্যোগ এবং বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি কাউন্সিল (বিএনএনসি), জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (এনএনএস) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পটি কক্সবাজারের হোস্ট কমিউনিটিতে ঝুঁকিপূর্ণ ও কঠিন অবস্থানে থাকা জনগণের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ফলাফল উন্নত করতে মনোনিবেশ করছে।
এ ছাড়াও আমান একটি মূল্যায়ন পরিচালনা করেছে; যাতে স্থানীয় পর্যায়ে এমএমএনপি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য পুষ্টি শাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিবন্ধকতা, বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলো ডকুমেন্ট করা হয়। আমান প্রকল্পের বাস্তবায়ন অভিজ্ঞতা থেকে শেখার ভিত্তিতে নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল মনে করে, বাংলাদেশের 
উপ-জাতীয় স্তরে এমএমএনপি বাস্তবায়ন প্রসারিত করতে আমাদের শেখার পাঠ শেয়ার করা সময়োপযোগী।

মিজ্ ফরিদা আখতার  
নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের আমান প্রকল্পের সুবিধাভোগী টুম্পামনির গল্প অনুপ্রেরণাদায়ক। একসময় পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলেও, আয়রন ট্যাবলেট ও সচেতনতার বার্তা পেয়ে সে আবার স্কুলে ফিরেছে। এখন সে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে এবং সরকার তার লেখাপড়ায় সহায়তা দিচ্ছে।
পুষ্টির বিষয়ে সবাইকে এক সুরে এক হয়ে কাজ করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মৎস্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় খাবার ও পুষ্টির জোগানদাতা হিসেবে আছে। মানুষের ক্ষুধা মেটাতে পরিমাণগত উৎপাদন বাড়াতে সরকার চেষ্টা করছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে কীটনাশক দিয়ে আমরা খাবারের মানের ক্ষতি করেছি। দেশীয় মাছকে গুরুত্ব না দিয়ে চাষের মাছকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা কি জানি, চাষের মাছে পুষ্টি উপাদান আসলে কতটুকু? মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা কিংবা সুস্থ থাকা খুবই জরুরি। আমাদের দেশে মাছ, গবাদি পশুপাখির বৈচিত্র্য রয়েছে। আমাদের আগে খাদ্যের সংজ্ঞা বদলানো জরুরি। মাছ ধরা বন্ধের সময় জেলেদের সহায়তা হিসেবে চাল দেওয়া হয়। শুধু চাল কি খাদ্য? চালের সঙ্গে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান কোথায়? যদিও এই সরকার আগে ২৫ কেজি চালের পরিবর্তে ৪০ কেজি চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু চালের সঙ্গে খাদ্য তালিকার অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের কিছু জোগান কে দেবে? সাধারণ জনগণকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। জেলেদের হাঁস-মুরগি পালনেও সহায়তা দিতে হবে। বাজারের চেয়ে নিজের পালা মুরগি অনেক বেশি পুষ্টিকর। পাশাপাশি মেয়েদের ক্ষমতায়ন করতে হলে পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। চরাঞ্চলে নারীরা গরু পালেন। তাদের ঘরে কিছু না থাকলেও দুধ আছে। নারী-পুরুষ দু’জনকেই সচেতন করতে হবে। গ্রাম পর্যায়ে নারীদের হাঁস-মুরগি ও গরু পালনে সহায়তা করা জরুরি। নারী নিজেই খাদ্যের জোগানদাতা হলে নিজের খাদ্য ও পরিবারের খাবার নিশ্চিত করা সহজ হবে। আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় বাধা শিল্প কারখানার দূষণ। নদী-সমুদ্রে দূষণ হচ্ছে। মাছের মধ্যেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং দূষণ বন্ধ করতে হবে। কৃষিতে এখন অনেকেই পুষ্টিযুক্ত চালের কথা বলেন। শুধু জিঙ্ক-সমৃদ্ধ চাল দিয়ে সমাধান হবে না। আমাদের জিঙ্কের ঘাটতি পূরণে অনেক খাবার আছে। সেগুলোর উৎপাদন বাড়াতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। সচেতনতার জন্য পরস্পর তথ্য বিনিময় করতে হবে। জনবল না থাকাও একটা বড় সমস্যা। একজন কর্মকর্তা বদলি হওয়ার সঙ্গে একটা জ্ঞান হারিয়ে যায়। কারণ তাঁকে যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়; তিনি যখন অন্যত্র বদলি হন তখন নতুন করে তৈরি করতে হয়। এটা এক বড় সমস্যা। সুতরাং এসব কিছু বিবেচনা করে পুষ্টির জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।

সায়কা সিরাজ 
কানাডাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল বিগত ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের বিশেষ করে প্রান্তিক, হতদরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টিমান উন্নয়নে সরকারকে কারিগরি, প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। এ ছাড়াও পুষ্টিবিষয়ক পলিসি এবং পরিকল্পনা প্রণয়নে আমরা সরকারের জাতীয় পুষ্টি পরিষদকে সহায়তা দিয়ে থাকি।
পুষ্টির বহুখাতভিত্তিকতাকে বিবেচনায় রেখে নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল, আমান প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের ৯টি অগ্রাধিকার দপ্তর– স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, নারীবিষয়ক, খাদ্য, শিক্ষা এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের সঙ্গে সমন্বিতভাবে পুষ্টি বিষয়ে কক্সবাজারে সফলভাবে কাজ করেছে। আমান প্রকল্পের ডিজাইন, লার্নিং ও আউটকামকে মডেল হিসেবে নিয়ে প্রকল্পটি সব জেলায় স্কেল-আপ করা জরুরি। যেমন বিভিন্ন দপ্তরের ফ্রন্টলাইন কর্মীদের ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে পুষ্টিবিষয়ক সেবাদানে দক্ষতা বৃদ্ধি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বাজেটে পুষ্টিবিষয়ক কার্যক্রমের জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট প্রণয়ন, পুষ্টি কার্যক্রমের পরিকল্পনা প্রণয়নে কমিউনিটির সদস্যদের বিশেষ করে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত এবং তাদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে তাদের অংশীদারিত্ব বাড়ানো, মাল্টিসেক্টরাল বিহেভিয়ার চেঞ্জ কমিউনিকেশন টুলস ব্যবহার করে পুষ্টির উন্নয়নের জন্য টার্গেটেড ক্যাম্পেইন করা ইত্যাদি। তবেই জাতীয় পর্যায়ে পুষ্টির সূচকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

গৌতম মণ্ডল
পুষ্টির অধিকার নিশ্চিত করতে নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের ‘আমান’ প্রকল্প আলাদা গুরুত্ব বহন করে। কেননা, একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের পুষ্টি ঘাটতি পূরণে কাজ করছে এ প্রকল্প। এ প্রকল্পের কারণেই কক্সবাজারে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও শিশু-কিশোরদের মধ্যে ‘পুষ্টি আন্দোলন’ তৈরি হয়েছে। তবে এ ধরনের প্রকল্প টেকসই হওয়া জরুরি। তা না হলে কাঙ্ক্ষিত ফল আসে না। দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যম হিসেবে সমকাল সব সময় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এমন কর্মসূচিকে উৎসাহিত করে; পাশে থাকে।
মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান 
পুষ্টি ও জেন্ডার সমতাকে একত্রে বিবেচনা করে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি খুব গুরুত্বপূর্ণ। খাবার ও পুষ্টিসংক্রান্ত বিষয়ে নারী ও পুরুষের মধ্যে এক ধরনের ক্ষমতার বিভেদ রয়েছে। এ বিভেদ সামাজিকভাবে সৃষ্ট অবস্থা ও ক্ষমতার পার্থক্যে। আমি মনে করি, এর গোড়ার কারণগুলো সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। দরিদ্র পরিবারগুলোয় নারীরা পর্যাপ্ত পুষ্টি ও যথাযথ খাবার পাচ্ছে না। আবার যেসব পরিবারে খাবারের অভাব নেই, সেখানেও দেখা যায় মহিলারা আরেক ধরনের অপুষ্টির শিকার। হয় তারা অতিরিক্ত ওজনাধিক্যে ভুগছে, নতুবা নানা ধরনের অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত। পুষ্টিসেবা গ্রহণের ক্ষেত্রেও নারীরা বিভিন্ন ধরনের অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্যের শিকার হন। এ ধরনের বৈষম্য কমাতে দরকার যথাযথ মনিটরিং, মূল্যায়ন ও সমন্বয়। পুষ্টিসেবা নিশ্চিত করতে যে বিভাগগুলো দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদের কর্মকর্তাদের একজনের সঙ্গে অন্যজনকে সমন্বয় করতে হবে। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ বিএনএনসি ২২টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করে, যেগুলো পুষ্টি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সম্প্রতি আমরা পুষ্টি খাতে আর্থিক ব্যয়ের ওপর মূল্যায়নে করেছি। সেখানে দেখেছি, ৯৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে পরোক্ষ পুষ্টি কর্মকাণ্ডে; মাত্র ২ শতাংশ খরচ হয়েছে পুষ্টির প্রত্যক্ষ কাজের পেছনে। দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনার (এনপিএএন-২) ৬৪টি সূচকে মোট ২৩০টির মতো কার্যক্রম রয়েছে। তার মধ্যে ২০২৫ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্যে আমরা ২৫টি সূচককে প্রাধান্য দিয়েছিলাম, যা অনেকটাই এখন আমাদের নাগালের মধ্যে।

অধ্যাপক ডা. আনজুমান আরা সুলতানা 
মেয়েদের শিক্ষা ও পুষ্টি জরুরি। কারণ এই মেয়ে একদিন দেশের কাজ করবে, পরিবারের দায়িত্ব নেবে; একসময় মা হবে। মেয়েদের পুষ্টিতে আমরা যদি এখন বিনিয়োগ করি, তাহলে দেশ ভবিষ্যতে পাবে একজন কমর্ক্ষম, মেধাবী নাগরিক। পাশাপাশি পুরুষদের জন্যও কাজ করতে হবে। আমরা পুরুষদেরও সচেতন করছি। পরিবারের সবার পুষ্টি দরকার। আমান প্রকল্প আমরা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছি। পরবর্তী সময়ে এ রকম আরও প্রকল্প হাতে নিতে হবে। আমাদের দেশে লাগসই প্রযুক্তি হাতে নিতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের পুষ্টি ও মনো-সামাজিক বিকাশের দিকেও নজর দিতে হবে। কেননা, একজন নারীই পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পুষ্টি ও পরিপূর্ণ বিকাশের নিশ্চয়তা দিতে। সবাই মিলে কাজ করতে হবে। পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারলে হাজার হাজার কর্মক্ষম, উদ্যোগী জনবল তৈরি হবে। আমরা পাব মেধাবী প্রজন্ম। 

মনির হোসাইন
আমান প্রকল্প যে ৮টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের মধ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক কাজ করছে। আমাদের ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচিতে পুষ্টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ কর্মসূচিতে পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি পুষ্টিবিষয়ক প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। মাদার অ্যান্ড চাইল্ড বেনিফিট প্রোগ্রাম (এমসিবিপি) নামে আমাদের একটি বড় কর্মসূচি রয়েছে। এ কর্মসূচিতে অন্তঃসত্ত্বা, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, এমন নারীকে ভাতা দেওয়া হয়। দুগ্ধদানকারী মায়ের পুষ্টির বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে থাকেন, তাদের ওপর নির্ভর করে। সে জন্য এ বিষয়ে তাদের মধ্যে সচেতনতা ও ইতিবাচক মনোভাব তৈরি না করে শুধু ভাতা বা প্রশিক্ষণ দিয়ে মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করা অত্যন্ত কঠিন।এ ছাড়া সারাদেশে আমাদের প্রায় পাঁচ হাজার কিশোর-কিশোরীর ক্লাব রয়েছে। আজকের আলোচনায় উঠে আসা পরামর্শগুলো ক্লাবভিত্তিক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে পুষ্টি কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

প্রিম রিজভী
আমার প্রকল্প থেকে শিক্ষা বিভাগের সহায়তায় স্কুলে স্কুলে শিশুদের আয়রন ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে। ৪ হাজার ৪৩০ শিক্ষককে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। শিক্ষকরা কাজটি করছেন কিনা, মনিটরিং করতে হবে। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্র ও শহুরে মধ্যবিত্ত নারীদের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা জরুরি। তারা সন্তানের স্কুলের বেতন, বাসা ভাড়া ও অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে নিজের খাবারের জন্য ঠিকমতো বরাদ্দ রাখতে পারেন না। আবার অনেকে মনে করেন, শহরের শিশুরা দামি খাবার খায়। কিন্তু দামি খাবার মানেই তো পুষ্টিকর খাবার নয়। লাইফ সাইকেলে আমরা কিন্তু শিশুদের পরিবর্তনের এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারি, যেন তারা বড় হয়ে সেটা ধরে রাখতে পারে, তখন সেটা দ্বিগুণ কার্যকর হবে। পাশাপাশি পুরুষদেরও এজেন্ট হিসেবে বয়ঃসন্ধিকালীন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যুক্ত করতে হবে। এ রকম বিভিন্ন ধরনের ও বয়সের মানুষকে পুষ্টির এজেন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে সামগ্রিক পুষ্টি অবস্থার উন্নয়ন হবে।

ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদার
সরকারের ১৮-১ অনুচ্ছেদ পুষ্টিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করেছে। সংবিধানে যেহেতু আছে, তাই পুষ্টিবিষয়ক সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া প্রত্যেকের দায়িত্ব। আমরা পুষ্টি নিয়ে অনেক কাজ করছি। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে কাজ করছি। আগে মানুষ খাবার পেলে খুশি হতো; এখন মানসম্মত খাবার চায়। এটাও আমাদের বড় সফলতা। মানুষের বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকেই পুষ্টিকে গুরুত্ব দিতে হবে অনাগত সন্তানের জন্য। মায়ের চেয়ে স্বামীর বেশি সচেতন হতে হবে। পুরুষরা না জানলে পুষ্টির সম্প্রসারণ হবে না। এই আলোচনা সমাজের সব পুরুষ ও স্বামীকে নিয়ে করতে হবে। পুরুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। 

রুবাইয়া আফরোজ
নারীরাই আসলে নারীদের পিছিয়ে রাখেন। পুরুষ পুষ্টি গ্রহণের কথা বললেও নারীরা অনেক সময় আগ্রহ দেখান না। পুষ্টিসমৃদ্ধ জাতি গঠনে পুরুষ-নারী উভয়ের ভূমিকা আছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সবাইকে সচেতন করতে হবে। আমাদের জেলা প্রশাসনের তিন বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনায়ও পুষ্টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা মানুষকে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। যেসব এনজিও পুষ্টিবিষয়ক কাজ করছে, আমরা তাদেরও সহায়তা করব। আজকের গোলটেবিল বৈঠকের সুপারিশগুলোয় আমরা গুরুত্ব দেব।

ড. বিমল কুমার প্রামাণিক
কৃষি বিভাগ কক্সবাজারসহ সারাদেশে কৃষকের পুষ্টি নিয়ে কাজ করে। আমান প্রকল্প আমাদের কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কৃষককে সচেতন করছেন। আমি মনে করি, আমাদের মূল সমস্যা পুষ্টি বিষয়ক সচেতনতা নেই। সচেতনতা নিয়ে আরও কাজ করা দরকার। আমরা স্থানীয় প্রযুক্তি কৃষকের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

মো. বদরুজ্জামান
কক্সবাজারে ৬৪ হাজার ৬৪৪ জন জেলে আছে। যখন মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে তখন ২৪ হাজার জেলেকে ২২ দিনের জন্য চাল দিই। এত কমসংখ্যক জেলেকে সহায়তা দেওয়ার কারণে বাকি জেলেদের ধরে রাখা যায় না। চালের পাশাপাশি আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার আছে। মাছের উৎপাদন ধরে রাখতে হবে। তাই নিরাপদ মাছ উৎপাদনেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। তা ছাড়া মাছের খাবার তৈরির বিষয়ও আমরা মনিটরিং করছি। কক্সবাজারে শুঁটকির মান নিয়ন্ত্রণে আমরা আগের অবস্থার চেয়ে ভালো পজিশনে আছি।

ডা. এএম খালেকুজ্জামান
আমরা আমান প্রকল্পের সহায়তায় কর্মপরিকল্পনা নিয়েছি। বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালনে জোর দিয়েছি। মাংস-দুধ-ডিম গ্রহণ সম্পর্কে সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। সুফলভোগীদের মাধ্যমে পুষ্টিবিষয়ক প্রচারণা চালাচ্ছি। আমাদের জনবল সংকট প্রকট। কক্সবাজারে ২৩ জন কর্মকর্তা থাকার কথা; আছেন ১১ জন। এ ছাড়া প্রাণিসম্পদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা লবণাক্ততা। গবাদি পশুর ঘাস এখানে উৎপাদন করা যায় না। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারটি পুষ্টি কার্যক্রমে বিবেচনায় রাখা জরুরি। 
জেবা মাহমুদ
আমাদের দেশে প্রতি ৪ জন শিশুর মধ্যে একজন কম ওজনের। খর্বকায় শিশুও বাড়ছে। অন্তঃসত্ত্বা মা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করলে শিশু অপুষ্টিতে ভুগবে। পুষ্টির কেন্দ্র হচ্ছে অন্তঃসত্ত্বা মা। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা মায়ের ৯ মাসকে আমরা গুরুত্ব দিই না। একটা মানুষ বানাতে নানা পুষ্টি দরকার। শুধু ভাত খেলে কাজ করে না। সচেতনতা বাড়াতে হবে। সব রকম খাওয়া বাড়াতে হবে। পুষ্টির দিক থেকে নারীদের সব সময় বঞ্চিত করা হয়। পুরুষই এখানে গুরুত্ব পায়। এই আচরণের পরিবর্তন আনতে হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের যেসব স্বাস্থ্যকর্মী বাড়ি বাড়ি যান, তাদের মাধ্যমে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অন্তত এই কাজ করতে হবে।

ডা. সাইহা মার্জিয়া
বাংলাদেশ একটি বৈচিত্র্যময় দেশ। একেক জেলার কালচার একেক রকম। স্থানীয় মানুষের সমস্যাকে সামনে নিয়ে পুষ্টি পরিকল্পনা সাজাতে হবে। আমাদের চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই এগোতে হবে। টেকসই কাজ করতে হবে। আমান প্রকল্পের সহযোগী হিসেবে সাড়ে ৪ হাজার কমিউনিটি গ্রুপকে আমরা সচেতন করেছি পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিয়ে। ১ হাজার ২০০ স্বাস্থ্যকর্মীকেও আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমাদের মাথায় রাখতে হবে প্রকল্পের পর যেন কাজগুলো বন্ধ না হয়ে যায়। 

ডা. মহসীন আলী
সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পুষ্টি। তবে পুষ্টির এই গুরুত্ব বেশি অবহেলিত আমাদের দেশে। এ দেশে পুষ্টিবিষয়ক একটা জাতীয় পলিসি আছে। এই পলিসিকে ফাইলবন্দি না রেখে, এটা যেন মানুষের কাজে লাগে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতীয় পুষ্টিনীতি বা পরিকল্পনায় যেসব দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে, জেলা বা মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। কক্সবাজারে সরকারের আটটি বিভাগ আছে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পুষ্টি নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। পুষ্টি শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয়। ৮-১০টি মন্ত্রণালয় আছে যারা পুষ্টির জন্য কাজ করে বা পুষ্টি নিশ্চিতে ভূমিকা রাখে। যেমন কৃষি বিভাগ, মৎস্য ও পশুসম্পদ, খাদ্য বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ ও সমাজকল্যাণ বিভাগ। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এসব বিভাগকে পুষ্টির কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করার ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতার ঘাটতি আছে। জেলা পর্যায়ে এই ঘাটতি আরও বেশি। আমরা চাইলে কৃষি বা প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের পুষ্টি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দিতে পারি। কোন ধরনের সবজি বা মাছে কী ধরনের পুষ্টি পাওয়া যায়, সে সম্পর্কে তাদের ধারণা দিতে পারি; সাধারণ মানুষকে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের ব্যাপারে জানাতে পারি।
মাঠ পর্যায়ে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। পুষ্টি উন্নয়নের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন নারী। অপুষ্ট নারীর গর্ভে অপুষ্ট শিশু জন্মে, আর তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে স্থানান্তর হয়। তাই নারীকেন্দ্রিক পুষ্টিসেবা নিশ্চিত করা অতি জরুরি এবং জেলা পর্যায়ের যেসব বিভাগ নারীস্বাস্থ্য, নারী অধিকার ও নারীকল্যাণে জড়িত; যেমন স্বাস্থ্য বিভাগ, মহিলা অধিদপ্তর, সমাজকল্যাণ; এদের পুষ্টির কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। কীভাবে এসব মন্ত্রণালয় ও এর বিভাগুলোকে পুষ্টির কাজে জড়িত করা যায়, তা ‘আমান প্রকল্প’ হাতে-কলমে দেখিয়েছে। আমি মনে করি, কক্সবাজার আমান প্রকল্পের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তা সারাদেশে সম্প্রসারণ করা দরকার।

টুম্পামনি 
এক বছর আগেও আমার স্বাস্থ্য ভালো ছিল না। আমার হীনম্মন্যতা ছিল; অনিয়মিত পিরিয়ড হতো ও আমার রেজাল্ট খারাপ হতো। সবাই আমার স্বাস্থ্য নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত। আমরা পড়া প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ২০২৩ সালে আমান প্রকল্প আমাদের স্কুলে আসে। তারা আমাদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ানো শুরু করে। সাপ্তাহিক আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর নানা রকম পরিবর্তন আসে। ক্লান্তি আসে না। তা ছাড়া শিখেছি– ভালো খাবার মানেই দামি খাবার নয়; শাকসবজিসহ নানা রকম খাবার আমাদের জন্য জরুরি। অল্প দিনেই আমার জীবন বদলে যায়। এখন আমি ক্লাসে ফার্স্ট হই। আমান প্রকল্প শুধু আমার পুষ্টি নয়, পরিবারকেও পুষ্টি বিষয়ে সচেতন করেছে। পড়াশোনাসহ সব রকম সহায়তা আমি পেয়েছি। আমি এখন স্কুলে পুষ্টিবন্ধু। আমি আমার স্কুলের অন্যদের উৎসাহিত করি; তারা আমাকে দেখে সাহস পায়। আমি এখন পুষ্টি ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। আমি বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।

একনজরে ‘আমান’ প্রকল্প 

নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের ‘আমান’ (অ্যাডাপটিং এ মাল্টিসেক্টরাল অ্যাপ্রোচ ফর নিউট্রিশন) প্রকল্পটি ২০২২ সালে শুরু হয়। কক্সবাজারে বসবাসকারী বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া, প্রান্তিক, অপুষ্ট জনগণ, বিশেষত নারী, শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির অবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। একটি সমন্বিত ও বহুখাতভিত্তিক পুষ্টিসেবা ব্যবস্থা পদ্ধতি নিশ্চিত করতে এ প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য অংশীদারদের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়েছে। এতে সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ১৮ লাখ কিশোর-কিশোরী, নারী-পুরুষ ও শিশু উপকৃত হচ্ছে। 
প্রকল্পটির লক্ষ্য ছিল: বিভিন্ন সরকারি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের পুষ্টিসেবা সংক্রান্ত জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নত করা, পুষ্টির কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত, কক্সবাজারের আটটি অগ্রাধিকার মন্ত্রণালয়কে সহায়তা ও বাংলাদেশের সরকারের দুটি প্রধান সামাজিক সুরক্ষা নেটওয়ার্ক প্রোগ্রামের পরিসর এবং মান উন্নত করার জন্য সহায়তা প্রদান করা। 

সুপারিশ

বহুখাতভিত্তিক পুষ্টি কার্যক্রমের সম্প্রসারণ: আমান প্রকল্পের সফলতা বিবেচনায় এটি জাতীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণ জরুরি। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, শিক্ষা ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সমন্বয় করা প্রয়োজন।
নারী ও কিশোরীদের পুষ্টি ও ক্ষমতায়ন: নারীদের হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু পালনে সহায়তা করতে হবে, যাতে তারা খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারে। কর্মজীবী নারীদের জন্য পুষ্টিকর খাবার সহজলভ্য করতে নীতি সহায়তা প্রয়োজন।
নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টির জন্য সচেতনতা: কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। পুষ্টিকর দেশীয় মাছ ও খাদ্যের প্রচলন বাড়াতে হবে।
বাজেট বৃদ্ধি ও মনিটরিং শক্তিশালীকরণ: জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পুষ্টি কার্যক্রমের জন্য নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ ও ফ্রন্টলাইন কর্মীদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষা ও পুষ্টি সংযোগ: স্কুলে আয়রন ট্যাবলেট সরবরাহ ও পুষ্টি শিক্ষা কার্যক্রম বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রমের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা জরুরি।
পরিবেশবান্ধব পুষ্টি উদ্যোগ: শিল্প বর্জ্য দূষণ রোধ করে নদী ও সামুদ্রিক মাছের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। টেকসই কৃষি ও মৎস্য চাষ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

প্রধান অতিথি

মিজ্ ফরিদা আখতার
উপদেষ্টা
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়

স্বাগত বক্তব্য

সায়কা সিরাজ 
কান্ট্রি ডিরেক্টর 
নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল

আলোচক

মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান 
মহাপরিচালক
বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ (বিএনএনসি) 

অধ্যাপক ডা. আনজুমান আরা সুলতানা 
লাইন ডিরেক্টর 
জাতীয় পুষ্টিসেবা (এনএসএস) 

প্রিম রিজভী
উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) 
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর

মনির হোসাইন
অতিরিক্ত পরিচালক (উপসচিব) 
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর 

রুবাইয়া আফরোজ
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার

ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদার
সিভিল সার্জন, কক্সবাজার

ডা. এএম খালেকুজ্জামান
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, কক্সবাজার

ড. বিমল কুমার প্রামাণিক
উপপরিচালক 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কক্সবাজার

মো. বদরুজ্জামান
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, কক্সবাজার

ডা. মহসীন আলী
পুষ্টি বিশেষজ্ঞ

জেবা মাহমুদ 
কান্ট্রি ম্যানেজার, এএইচ ৩৬০

ডা. সাইহা মার্জিয়া
সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার 
ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচি 

টুম্পামনি 
সুবিধাভোগী শিক্ষার্থী 
আমান প্রকল্প, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন

ইফতিয়া জেরিন
ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার 
নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল

সঞ্চালনা

গৌতম মণ্ডল
অনলাইন ইনচার্জ, সমকাল

অনুলিখন

জাহিদুর রহমান
সিনিয়র রিপোর্টার, সমকাল

সমন্বয়

হাসান জাকির
হেড অব ইভেন্টস, সমকাল

সিনা হাসান
কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট
নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

আজ ঢাকা আসছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের বাকি ২৩৯ কোটি ডলার বাংলাদেশ পাবে কিনা তা নিশ্চিত করতে শনিবার (৫ এপ্রিল) ঢাকায় আসছে সংস্থাটির প্রতিনিধিদল।

সফরে ভর্তুকি কমানো, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করাসহ বিভিন্ন শর্ত নিয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করবে তারা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইএমএফের কিস্তি আটকে গেলে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল হতে পারে বিশ্বব্যাংক, এডিবির মতো উন্নয়ন সহযোগীরা।

তবে অর্থ উপদেষ্টা বলছেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এই মুহূর্তে আইএমএফের সব শর্ত বাস্তবায়ন করা যাবে না।

অর্থপাচার, খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে বাংলাদেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতির সহায়তায় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়া শুরু করে আইএমএফ। এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। বাকি দুই কিস্তির ২৩৯ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার জন্য একসঙ্গে চায় সরকার। যা মিলতে পারে জুনে।

চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পালনের অগ্রগতি দেখতে ঢাকায় আসছে আইএমএফের একটি দল। ঋণ পেতে মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, জিডিপির দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে বাড়তি রাজস্ব আদায়, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোসহ বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। যা নিয়ে ৬ এপ্রিল থেকে টানা দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। 

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্থিতি নানা উদ্যোগেও আটকে আছে ৯ শতাংশে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি জনমনে অসন্তোষ বাড়াবে। অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবীর বলেন, “বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে বা এ খাতে ভর্তুকি তুলে নেওয়া হলে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হবে। তার দায় কে নেবে?”

আইএমএফের শর্ত মেনে অন্তত ৫৭ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে। কমাতে হবে কর অব্যাহতি। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ট্যাক্সের ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য দেওয়া হয়। এটি যৌক্তিকরণের একটি পরিকল্পনা করতে হবে।”

ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বিনিময় হার নির্ধারণ করায় হু হু করে বাড়তে থাকা ডলারের দাম আপাতত ১২২ টাকায় স্থিতিশীল। এবার আইএমএফই চায় এই পদ্ধতি থেকে বের হোক বাংলাদেশ। যার সঙ্গে একমত নন খোদ অর্থ উপদেষ্টা।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে পরিস্থিতি পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে। বিপদে পড়তে হবে। এই সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় লাগবে।”

তবে আইএমএফের শর্ত মেনে এনবিআরের রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মির্জাপুরে একসঙ্গে চার সন্তান প্রসব, জীবিত ৩ নবজাতক
  • নাটক নয়, মিরাক্কেলের জামিল সত্যিই বিয়ে করলেন
  • জিম্মির পর জয়ার ‘তাণ্ডব’
  • দাম্পত্য সম্পর্ক নতুনভাবে রাঙিয়ে নেওয়ার চার উপায়
  • রক্তের সম্পর্ক অস্বীকার করে দূরে থাকা যায় না...
  • শর্ত পূরণ হলেই জুনে পাওয়া যাবে আইএমএফ ঋণের দুই কিস্তি
  • নদী পাড়ের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি, ভোগান্তি
  • আজ ঢাকা আসছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল
  • শেষ হলো তিন শহীদ বোনের স্মৃতি নিয়ে শিল্প প্রদর্শনী