রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় দাওয়াত খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। উপজেলার বড় আলমপুর ইউনিয়নের গাজী খাঁ দক্ষিণ সোনারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। গতকাল রোববার ১০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। অসুস্থতার কারণে অনেক গার্মেন্ট কর্মী কর্মস্থলে ফিরতে না পেরে বিপদে রয়েছেন।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় গাজী খাঁ দক্ষিণ সোনারপাড়া গ্রামের লিটন মিয়ার বাড়িতে ছেলের আকিকার আয়োজন করা হয়। খাবার খেয়ে বিকেল থেকে অনেকের জ্বর, বমি, পেটব্যথা ও ডায়রিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়। শুরুতে সবাই বাড়িতে চিকিৎসা নিলেও শনিবার থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে আসেন অনেকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অসুস্থদের মধ্যে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি গার্মেন্টে চাকরি করেন। তারা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। সপ্তাহের শুরুতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মস্থলে ফেরার কথা ছিল তাদের। কিন্তু অসুস্থতার 
কারণে অনেকে ফিরতে পারেননি। ফলে চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন তারা।
খাবার খেয়ে আসার পর রাত থেকে পাতলা পায়খানাসহ জ্বরে আক্রান্ত হন আজিজুল হক। তাঁর পরিবারের অন্যদেরও একই অবস্থা। শাফিউল ইসলামেরও একই উপসর্গ ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করি। আজ (রোববার) থেকে আমার অফিস খোলা হলেও অসুস্থতার জন্য যেতে পারিনি। জানি না চাকরি থাকবে কিনা।’
সপরিবারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন বাবুনপুর গ্রামের এনামুল হক। তাঁর স্ত্রী সালমা বেগম এবং দুই মেয়ে আদিবা ও আতিকাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামী-স্ত্রী দু’জন গাজীপুরে গার্মেন্টে চাকরি করেন। ছুটি শেষ হলেও তারা ফিরতে পারছেন না।
খাবারের আয়োজন করা লিটন মিয়া বলেন, ‘আমরা খুব যত্নসহকারে খাবারের আয়োজন করেছিলাম। তারপরও কীভাবে কী হলো, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা নিজেরাও অসুস্থ। এটি ষড়যন্ত্রও হতে পারে। নয়তো এমন হওয়ার কথা নয়।’
চলতি মৌসুমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি– জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম মণ্ডল রিমন বলেন, শুক্রবার থেকে হঠাৎ খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়েছে। দাওয়াত খেয়ে অসুস্থ হওয়া পর্যন্ত অর্ধশতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন। খাবারে এমন উপাদান থাকতে পারে, যা থেকে এ সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পীরগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক বলেন, অতিরিক্ত গরমে গরুর মাংসে সমস্যা হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। শ্রমিকদের যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য যোগাযোগ করছে পুলিশ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে সমন্বয় করে ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করা হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স

এছাড়াও পড়ুন:

কণ্ঠস্বরকে সুস্থ রাখতে চাই সচেতনতা

ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে কণ্ঠের ওঠানামা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কথা কী প্রভাব সৃষ্টি করবে, তার ৩৮ শতাংশ নির্ভর করে কণ্ঠের ওঠানামার ওপর। পেশাগত কণ্ঠ ব্যবহারকারী মানুষ যেমন গায়ক, অভিনেতা, শিক্ষক, উকিল, ধারাভাষ্যকার, বিক্রয়কর্মী, কলসেন্টারের কর্মী, কণ্ঠশিল্পীদের জন্য কণ্ঠই সবকিছু।

কণ্ঠনালির প্রদাহ

এ প্রদাহ দুই ধরনের। সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস। ভাইরাস, আবহাওয়া পরিবর্তন, পরিবেশদূষণেও কণ্ঠনালির প্রদাহ হতে পারে। পাকস্থলীর অ্যাসিড রিফ্লাক্সের জন্য কণ্ঠনালির দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হতে পারে। ধূমপান, অতিরিক্ত চা বা পানীয় পান করলে, হাঁপানির জন্য ইনহেলার ব্যবহার করলে বা যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাদের দীর্ঘমেয়াদি ল্যারিনজাইটিস হতে পারে।

কণ্ঠস্বরের অতিব্যবহার

অতিরিক্ত চিৎকারের কারণে যেমন স্বর ভেঙে যায়, তেমনি আবার মৌসুম বদলের সময়ও এমন সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। তাপমাত্রার তারতম্যের সময় কণ্ঠনালি বা টনসিলের প্রদাহের উপসর্গ হিসেবে স্বর ভেঙে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।

তবে কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে রোগী স্বর ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন: কণ্ঠস্বরের ওপর যাঁদের খুব বেশি চাপ পড়ে (যেমন গায়ক, আবৃত্তিকার, শিশুদের শিক্ষক)। তাঁদের স্বরতন্ত্রীতে ছোট ছোট গোটা হতে পারে (নডিউল)। এ রকম হলে স্বর অস্বাভাবিক রয়ে যায় দীর্ঘদিন। স্বর ভাঙার অন্যান্য কারণ হলো থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি, ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের ক্যানসার, স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার ইত্যাদি।

মৌসুমের কারণে কণ্ঠনালির প্রদাহ হলে গলাব্যথা, জ্বর, কাশি ও সর্দির মতো উপসর্গ থাকে।

থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিতে ওজন বৃদ্ধি, শীতপ্রবণতা, দুর্বলতা, বিষণ্নতা, চিন্তায় ও কাজে ধীরতা, চুল পড়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়।

ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের ক্যানসারে ওজন হ্রাস, বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

কণ্ঠস্বরের যত্নে যা করতে হবে

● কণ্ঠস্বরের সমস্যা তিন সপ্তাহের বেশি থাকলে নাক–কান–গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

● আর্দ্রতা কণ্ঠের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি, তাই প্রতিদিন অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে।

● কণ্ঠ ব্যবহারে সাবধানী হোন। অতিউচ্চ বা পরিবর্তিত স্বরে কথা বলবেন না।

● ধূমপান, অ্যালকোহল, তামাক, গাঁজা ও অন্যান্য নেশা সম্পূর্ণ পরিহার করুন। 

● ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করুন এবং অল্প আহার করুন।

● অতিরিক্ত টেলিফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। 

● অপ্রয়োজনে বারবার গলা পরিষ্কার ও কাশি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

● শুষ্ক আবহাওয়া কণ্ঠের জন্য ক্ষতিকর। শীতাতপ যন্ত্রের বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকে, এটি কণ্ঠের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। রাতে আর্দ্রতা বৃদ্ধিকারী যন্ত্র ব্যবহার করুন।

● গলা শুকনো থাকলে অথবা মিউকাস জমে থাকলে জোরে কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করার চেষ্টা করা ক্ষতিকর। 

● যখন বেশি মিউকাস উৎপন্ন হয়, তখন মিউকাস তরলকারী ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।

আমরা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করি প্রধানত কণ্ঠের মাধ্যমে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও খাওয়ার বদভ্যাস কণ্ঠস্বরের নানা সমস্যার জন্ম দেয়। তাই সঠিক কণ্ঠস্বর বজায় রাখতে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।


অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী, অধ্যাপক, ইএনটি হেড নেক সার্জারি, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কণ্ঠস্বরকে সুস্থ রাখতে চাই সচেতনতা