যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য প্রবেশের ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তি ধরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বজুড়ে আরোপ করা শুল্ক গত শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। ফলে দেশটির আমদানি করা সব পণ্যের ওপর বাড়তি অর্থ আদায় শুরু করেছে দেশটির প্রশাসন। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টা ধনকুবের ইলন মাস্কবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। শনিবার জার্মানির বার্লিন ও ফ্রাঙ্কফুর্ট, ফ্রান্সের প্যারিস এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একত্র হন বিক্ষোভকারীরা। এ অবস্থায় দেশবাসীকে শক্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, চূড়ান্ত ফলাফল ঐতিহাসিক হবে। খবর সিএনএন ও বিবিসির। 

গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের উদ্যোগে শনিবার অনুষ্ঠিত এসব সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আমেরিকানদের অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর ‘আক্রমণ’ চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের। সংগঠকরা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১ হাজার ২শর বেশি ‘হ্যান্ডস অব!’ (অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করো) প্রতিবাদের লক্ষ্য নিলেও হয়েছে ১ হাজার ৪শরও বেশি। 

বিক্ষোভকারীদের একজন হান্না বলেন, এই বিক্ষোভের মাধ্যমে হয়তো খুব দ্রুত নীতি পরিবর্তন হবে না। তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। কারণ এটা প্রমাণ করা, অনেক আমেরিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্প প্রশাসন ও ইলন মাস্কের কাছে তাদের বার্তা ‘হ্যান্ডস অব!’ পৌঁছে দিতে জড়ো হয়েছেন। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় পড়া দেশগুলোর অন্যতম যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতারা বলেছেন, ট্রাম্পের ঘোষণার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কোনো কিছুই তারা বিবেচনার বাইরে রাখছেন না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানান, তিনি কিছু শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক চুক্তির জন্য চাপ অব্যাহত রাখবেন। পাশাপাশি তিনি ব্রিটিশ ব্যবসাকে রক্ষায় শিল্পনীতি ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন। ট্রাম্পের ঘোষণায় বিশেষভাবে ধাক্কা খাওয়া চীন এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। 

গত বুধবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প তাঁর নতুন শুল্কনীতি ঘোষণা করেন। এর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বড় বড় পুঁজিবাজারের সূচকে ব্যাপক পতন দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো যুক্তরাজ্যের পুঁজিবাজারের সূচকও কমেছে রেকর্ড ৫ শতাংশ। জার্মানি ও ফ্রান্সের পুঁজিবাজারেও একই রকম সূচক কমেছে। 

এই পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে শক্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি পুঁজিবাজারের ওই অস্থিরতাকে ‘অর্থনৈতিক বিপ্লব’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এতে জিতবে (অস্থিরতা কাটিয়ে উঠবে)।’ ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া একটি পোস্টে দেশবাসীর উদ্দেশে লেখেন, ‘শক্ত থাকুন, এটি সহজ হবে না। তবে শেষমেশ যে ফলাফল আসবে, তা হবে ঐতিহাসিক।’ 

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে অবাধ বাণিজ্যের পক্ষে অবস্থান নিয়ে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের পক্ষে মত দিয়েছেন ইলন মাস্ক। শনিবার ইতালির কট্টর ডানপন্থি লিগ পার্টি আয়োজিত একটি সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাণিজ্য বাধা সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে কথা বলেন তিনি। 

এদিকে ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর থেকে ৫০টিরও বেশি দেশ বাণিজ্য আলোচনা শুরু করতে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট এ তথ্য জানান। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে তিন দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পুতিনের

 রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে তিন দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন।

তিন বছর দুই মাস আগে বেসামরিকীকরণ ও নাৎসিমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে ইউক্রেনে যে সামরিক অভিযান শুরু করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন, তারপর এই দ্বিতীয়বার তার পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলো। 

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধে নামে ইউক্রেন। দুই দেশের রক্তক্ষয়ী ও বিভৎস এই যুদ্ধে হাজার হাজার সেনা ও বেসামরিক মানুষের প্রাণ গেছে; ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের বাইরে।

এত দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের সঙ্গে একাট্টা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়ে ফের ক্ষমতায় বসার পর যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ধারায় রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘোষণা এলো।

বিবিসি লিখেছে, পুতিনের ঘোষণা অনুযায়ী ৮ মে থেকে শুরু হয়ে ১১ মে পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চলবে। এক টেলিগ্রাম বার্তায় পুতিনের পক্ষে এই ঘোষণা দিয়েছে ক্রেমলিন। 

অবশ্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া এখনো জানা যায়নি। কী শর্তে ইউক্রেন এই যুদ্ধবিরতি মানবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

এর আগে ইস্টার সানডে উপলক্ষে মাত্র ৩০ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতির কথা বলেছিল রাশিয়া; যদিও তা উভয় দেশ লঙ্ঘন করে হামলায় লিপ্ত হয়।

যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টার সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি করার জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয় দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে শান্তি চুক্তির শর্তগুলো নিয়ে কথা বলছেন। পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে অংশ নিতে রোমে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। ওই দিন ট্রাম্প বলেছিলেন, চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। 

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার দিনই সোমবার রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। হতাহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। 

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ