ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আগামীকাল সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক
Published: 6th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আগামীকাল সোমবার দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতা। এই ডাকের প্রতি সংহতি জানিয়ে এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগে আগামীকাল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আগামীকাল বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে সংহতি সমাবেশের আহ্বান জানিয়েছে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। তারা আগামীকাল বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংহতি ও বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এক বার্তায় প্ল্যাটফর্মটি এ কর্মসূচির কথা জানিয়েছে।
প্ল্যাটফর্মটির বার্তাপ্রেরক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজওয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, ‘ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে আগামীকাল বিশ্বব্যাপী হরতাল পালন হচ্ছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের এই প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান থাকছে।’
এ কর্মসূচি সফলের আহ্বান জানিয়ে নিজেদের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম।
ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তায় আগামীকাল সারা দেশে ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা এই ধর্মঘট সফল করুন। আগামীকাল বাংলাদেশে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন না চালু হয়, কোনো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস না হয়, তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করুন।’
আজ রোববার দুপুরে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলনের’ দুই সংগঠক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ ও এ বি যুবায়েরও এ কর্মসূচি সফল করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান।
এক ফেসবুক পোস্টে এ বি যুবায়ের বলেন, ‘আগামীকাল বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছেন আমাদের মজলুম গাজাবাসী ভাইবোনেরা। গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সব দেশে একযোগে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, অফিস ও আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়ে আগামীকাল সারা দিন বাংলাদেশেও সাধারণ ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। আগামীকাল আপনারা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, অফিস-আদালত বন্ধ রাখুন। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করুন। চলুন বৈশ্বিকভাবে একযোগে দাবি জানাই, ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন।’
আরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক২ ঘণ্টা আগেএরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ, আরবি বিভাগ, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ফলিত গণিত, মনোবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতাসহ অনেকগুলো বিভাগ এ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে। তারা আগামীকালকের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণহত য
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় গণহত্যা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবাদের ঝড়
ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান বর্বরতার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকেই আয়োজিত এসব কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে থাকছে বিস্তারিত-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান বর্বরতার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সমাবেশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। একইসঙ্গে সংহতি জানিয়ে ৩০টির অধিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছেন। ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জনসংযোগ দপ্তরের প্রকাশক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন মজুমদারের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন, উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান, রেজিস্ট্রার অধ্যপক ইফতেখারুল ইসলাম মাসুদ, ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম, কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ফজলুল হক প্রমুখ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে বেলা সাড়ে ১১টায় বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। এ সময় জেরুজালেম ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের পূর্ণ অধিকার রয়েছে এবং তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বৈধ ও ন্যায্য বলে জানান তারা৷
মানববন্ধনে বুয়েটের শতাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বুয়েটের উপ-উপাচার্য আব্দুল হাসিব চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক অংশ নেন।
এ সময় তারা ‘From the river to the see, Palestine will be free’, ‘East to west, no flow to zionist’, ‘Meghna to Jerusalem, Insaf insaf’, ‘Shame shame zionist, make free Palestine’, ‘ফিলিস্তিন মুক্তি পাক, ইসরাইল নিপাত যাক’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, আল আকসা জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)
দুপুর ১২টায় তৌহিদী ছাত্র জনতার ব্যানারে গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলের বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বাকৃবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ইসরায়েল ও ভারতের পতাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিকৃতি আগুনে পুড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বারের মোড় থেকে শুরু হয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন ও ছাত্রী হলের সামনের সড়ক প্রদক্ষিণ করে কামাল-রণজিত (কেআর) মার্কেটে গিয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করে। সেখান থেকে মিছিলটি সমাবর্তন চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরবর্তীতে সমাবর্তন চত্ত্বরে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর পরিকল্পিত গণহত্যার বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে জাবি প্রশাসন। এছাড়া এ নির্মম হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রাদায়কে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ আহ্বান জানায়।
এর আগে, রবিবার (৬ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. এবিএম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা করা হয়। এছাড়া সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অফিস বন্ধ থাকবে বলেও জানানো হয়।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি)
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান আগ্রাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে শেকৃবি শিক্ষার্থীরা ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। গাজায় সংঘটিত গণহত্যার বিরুদ্ধে একাত্মতা প্রকাশ করে তারা একটি বিবৃতি প্রদান করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান।
এছাড়া গ্লোবাল মুভমেন্ট ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ এর অংশ হিসেবে তারা সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন। এ দিনটিকে তারা ‘প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করছেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রশাসন। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ এমদাদুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) কর্তৃক গাজার নিরীহ নারী ও শিশুসহ বেসামরিক মানুষের ওপর অবিরাম হামলা, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস এবং ঘরবাড়ি, হাসপাতাল ও স্কুলে পরিকল্পিতভাবে আঘাত হানা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবতাবিরোধী আইন লঙ্ঘনের সামিল। নিরীহ মানুষ হত্যা, পরিবার উচ্ছেদ এবং শিশুদের এতিম করে তোলার মতো অমানবিক ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।
আরো বলা হয়েছে, এসব কর্মকাণ্ড জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যেখানে যুদ্ধাবস্থায় বেসামরিক জনগণ ও অবকাঠামোর ওপর হামলা নিষিদ্ধ। প্রতিটি প্রাণহানি, প্রতিটি শিশু এতিম হওয়া এবং প্রতিটি পরিবারের উদ্বাস্তু হওয়া- এগুলোর সংকট সমাধানে বিশ্বব্যাপী জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)
গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে হাবিপ্রবি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক পরিষদ। শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু হাসান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর কবির স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করে বলে হয়, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর আগ্রাসনে হাজার হাজার নিরপরাধ নারী, শিশু ও বেসামরিক মানুষ জীবন হারাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইনের চরম লঙ্ঘন করে দখলদার বাহিনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ও আবাসিক এলাকায় নির্বিচারে বোমা বর্ষণ এবং খাদ্য, পানি, ঔষধ সরবরাহ বন্ধ করে ফিলিস্তিনিবাসিকে নির্মূল করার পদক্ষেপ নিয়েছে। আমারা এই মানবতা বিরোধী নিষ্ঠুরতা ও গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক মহলকে অনতিবিলম্বে এই আগ্রাসন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বর্বর ইসরায়েল বাহিনীকে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকা/মেহেদী