ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের চলমান বর্বর গণহত্যা, দখলদারিত্ব ও মানবিক বিপর্যয়ের প্রতিবাদে আনুষ্ঠানিকভাবে সংহতি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল সোমবার (৭ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে সংহতি সমাবেশের আয়োজন করেছে প্রশাসন। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে, একই ঘটনার প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

কাঁথা-বালিশ নিয়ে রাবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি

রাবির সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপককে অব্যাহতি

রবিবার (৬ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক মো.

আখতার হোসেন মজুমদার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সমাবেশের কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত বর্বর আগ্রাসন ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ এবং গাজার জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সিনেটে ভবনের সামনে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য এ সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

এছাড়া, সংহতি জানিয়ে আগামীকাল সোমবার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০টিরও বেশি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

তারা বলেন, আমরা ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছি এবং ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি। মানবাধিকার, শান্তি ও ন্যায়বিচারের প্রতি অটল অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আগামীকাল সোমবার (৭ এপ্রিল) সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ প্রতিবাদ বিশ্বব্যাপী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অবদান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন ফিলিস্তিনি শিশু হতাহতের শিকার হচ্ছে। এ সংখ্যা বিশ্বব্যাপী গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স মব র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলে সংস্কার যে কারণে জরুরি

রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক দল মূল ভূমিকায় থাকে। রাষ্ট্রের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলের সংস্কার ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার টেকসই, অর্থবহ এবং কল্যাণকর হবে না। স্বৈরাচার পতনের পর তিন জোটের রূপরেখা মেনে চলার ওয়াদা থাকলেও পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দল এবং জোট ক্ষমতায় বসেছে। প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে জাতির সঙ্গে প্রকারান্তরে প্রতারণা করেছে তারা।
 রাজনৈতিক দল আর দেশের স্বার্থ সমান্তরালে চললে কোনো অসুবিধা হয় না। রাজনৈতিক দলের নীতি ও কাজ দেশের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে তখন রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিবর্গ যাতে দেশের স্বার্থ দেখে, সে দলে টিকে থাকতে পারে সে রকম একটা মেকানিজম প্রয়োজন। ১/১১ এর আমলে সংস্কার একটা অশ্লীল শব্দে পরিণত হয়েছিল। কালের পরিক্রমায় আজকে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বাহ্যিকভাবে হলেও কেউই অস্বীকার করতে পারছে না। 

কোনো কাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস করে নতুন করে গড়ে তোলাটাও সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত। আবার যে কাঠামো বিদ্যমান ব্যবস্থাতে নেই, সেই কাঠামো নতুন করে প্রতিষ্ঠা করাটাও কিন্তু সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত। সংস্কারের অপব্যাখা দিচ্ছে অনেকে। সংস্কার মানে শুধু বিদ্যমান কাঠামোর পরিবর্তন বা বিদ্যমান কাঠামোর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির পরিবর্তনই কেবল নয়, এটি অনুধাবন করতে পারাটা জরুরি। এমন কতগুলো বিষয় আছে, যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলের দায় আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠা হওয়া দরকার। রাজনৈতিক দল সম্পর্কে স্পষ্ট আইন প্রণয়ন করা জরুরি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ব্যক্তির অর্থ খরচের সীমানা নির্ধারিত। তবে রাজনৈতিক দল এ সময়ে দাঁড়িয়ে কোন খাতে কতটা ব্যয় করতে পারবে, বাস্তবিক প্রেক্ষাপট আমলে নিয়ে তার একটা আইনগত কাঠামো চাই। জাতীয় রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল সম্পর্কে আইন হওয়াটা জরুরি। অতীতে এরশাদের আমলে জাতীয় রাজনৈতিক ঐকমত্য যা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, তা রক্ষিত হয়নি।  

রাজনৈতিক দল সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর হর্তাকর্তাদের দেওয়া উচিত। জনগণ দেখতে চায়, তারা নিজ দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দল সংস্কারে কী রকম প্রস্তাবনা নিয়ে হাজির হয় মানুষের সামনে। এ জাতির খুব কমই সৌভাগ্য হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে খোলা মনে আলাপ করতে দেখার। সময়ের আবর্তে এই কমিশনের প্রয়োজনীয়তা যেমন অনুভূত হচ্ছে, ঠিক একইভাবে এ কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বৈঠকে বসার একটা চর্চার মধ্যে অন্তত আসবে। 
ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে, দেশ সংকটে পতিত হলে জাতীয় রাজনৈতিক ঐক্য গঠনের তাগাদা কি শাসনের গুরুদায়িত্বে থাকা রাজনৈতিক দল অথবা দলের সমন্বয়ে রাজনৈতিক জোট অনুভব করবে– এর নিশ্চয়তা কে দেবে? রাজনৈতিক দলগুলো যেন ভুলে না যায় হাসিনা দলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সত্তা এবং ব্যক্তি পর্যায়ে হাসিনার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী দুঃশাসনের বিরোধিতাকারীদের ওপর কেমন অত্যাচার চালিয়েছে। যদি মুখ্য শক্তি এবং গৌণ শক্তি নিরূপণের প্রশ্ন আসে তখন, জনগণ মুখ্য রাজনৈতিক শক্তি, আর রাজনৈতিক দল হচ্ছে গৌণ শক্তি। 
সংবিধান পুনর্লিখন অবশ্যই জরুরি। সংবিধানে আছে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী বিভাগ সহায়তা করবে। সহায়তা না করলে কী হবে, সে বিষয়ে না আছে সংবিধানে কিছু, না আছে অন্য কোথাও কোনো শাস্তির বিধান। 

দেশের স্বার্থরক্ষা না করার পেছনে অতীতে ক্ষমতায় থাকা অনেক রাজনৈতিক দলের ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক দল ও জোট সম্মিলিতভাবে দায়ী। এ দায়বদ্ধতার কোনো বিচারের সুযোগ দেশের বিদ্যমান আইন কাঠামোতে নেই। এ ক্ষেত্রে সংস্কার নয়, বরং নতুন কাঠামোগত ভিত্তি দরকার। সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম, শিক্ষাসহ সব জায়গা সংস্কার হলেও রাজনৈতিক দল প্রকৃতপক্ষে সংস্কার না হলে দীর্ঘ মেয়াদে অকার্যকর হতে বাধ্য সবকিছু। কারণ, এসব কিছুর ওপর একক বা সম্মিলিত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে নিয়ন্ত্রণ দিনশেষে দলগুলোর কাছে যাবে। যাওয়াও উচিত। সেই নিয়ন্ত্রণে লাগাম টানার রশিও জনগণের হাতে থাকা উচিত। একটা নিয়ন্ত্রণ অবশ্য আছে। সেটি হচ্ছে, পাঁচ বছর পর ভোট দিয়ে নিয়ন্ত্রণটা এক পক্ষ থেকে নিয়ে অন্য পক্ষের হাতে দিয়ে দেওয়া। কিন্তু এই পাঁচ বছর সময়কালে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়, তা জাতি যুগের পর যুগ টের পেয়েছে অতীতে। সরকারের মেয়াদ কমিয়ে তিন বা চার বছর করাটা যেমন দরকার, একইভাবে ত্বরিত গতিতে যেন নিয়ন্ত্রণের বেপরোয়া বা লাগামহীন অপব্যবহার বন্ধে মানুষ যেন লাগাম টেনে ধরতে পারে, সে ব্যবস্থাটাও গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাডভোকেট জায়েদ বিন নাসের: সভাপতি, 
বাংলাদেশ ল অ্যালায়েন্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘জনগণ নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে’
  • ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে উত্তাল ঢাবি
  • ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতা, দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ
  • গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যায় বাংলাদেশের তীব্র নিন্দা
  • গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যায় বাংলাদেশের নিন্দা
  • গাজায় নির্যাতিতদের পক্ষে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর
  • ঢাকা-দিল্লির পদক্ষেপই ঠিক করবে সম্পর্কের গতিপথ
  • গণহত্যার দায়ে আ’লীগের বিচার দাবি বিএনপির
  • রাজনৈতিক দলে সংস্কার যে কারণে জরুরি