যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘অর্থহীন’ সরাসরি আলোচনা নাকচ করল ইরান
Published: 6th, April 2025 GMT
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রত্যাশাকে ‘অর্থহীন’ বলেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে রোববার এ মন্তব্য করলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এরপর ট্রাম্প গত সপ্তাহে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি তারা চুক্তিতে না আসে, তাহলে বোমাবর্ষণ করা হবে।’
এই পরিস্থিতিতে সমঝোতার বিষয়ে ওয়াশিংটনের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আরাগচি। তিনি বলেছেন, ‘যদি আপনারা সমঝোতা চান, তাহলে হুমকি দেওয়ার মানে কী?’
পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে চাইছে না বলে দাবি করে আসা তেহরান দৃশ্যত ওয়াশিংটনের আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করেছে। তবে পরোক্ষ কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি বলে অবস্থান ব্যক্ত করেছে তারা, এই অবস্থানই আরাগচির রোববারের বিবৃতিতে পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি যুক্তরাষ্ট্রকে এমন একটি পক্ষ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যারা ক্রমাগত বলপ্রয়োগের হুমকি দিয়ে আসছে, যেটা জাতিসংঘের সনদের পরিপন্থী। তিনি বলেছেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমান অবস্থানে থেকে আলোচনা করতে চায়।
এর আগে ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেন্সিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ বাতিল করেছিলেন, যেটা ইরান ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে পারমাণবিক একটি চুক্তি ছিল। ওই চুক্তি অনুযায়ী পারমাণবিক কর্মসূচিতে লাগাম টেনে নিষেধাজ্ঞার খড়্গ থেকে মুক্তি পেয়েছিল ইরান।
ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তের পর ইরান চুক্তি মেনে চলা থেকে সরে আসে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তথ্যমতে, ইরান বহু পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে রসদ সংগ্রহ করেছে। আইএইএ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করেছে।
এদিকে ট্রাম্পের সরাসরি যুদ্ধের হুমকির জবাবে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের প্রধান হোসেইন সালামি শনিবার বলেন, দেশটি যুদ্ধের জন্য ‘প্রস্তুত’ আছে।
সালামিকে উদ্ধৃত করে ইরানের প্রধান বার্তা সংস্থা ইরনা জানায়, ‘আমরা যুদ্ধ নিয়ে চিন্তিত নই। আমরা যুদ্ধের সূচনাকারী না হলেও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছি।’
এদিকে গাজায় চলমান যুদ্ধ, লেবাননে হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব ধ্বংসে ইসরায়েলি হামলা এবং ২০২৪ সালে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বাশার আল-আসাদের পতন ইরানকে এ অঞ্চলে দুর্বল করে তুলেছে। পরমাণু অস্ত্র কার্যক্রমের বিষয়ে দেশটি বারবার বলে আসছে এ কার্যক্রম শুধু বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্রদেশ ইসরায়েলের কাছে অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্রাগার রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গিয়ে ‘আমরা জমিদার’ বলা সেই কর্মকর্তার পদোন্নতির আবেদন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ২০০৬ সালের জুলাইয়ে। তখন পদ ছিল নিম্নমান সহকারী, অর্থাৎ তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। এরপর পদোন্নতি পেয়ে ২০২২ সালে হন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। এখন সহকারী রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি পেতে আবেদন করেছেন তিনি।
পদোন্নতির জন্য আবেদন করা ওই ব্যক্তির নাম সিরাজুল ইসলাম। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন তিনি। সিরাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ আংশিক) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পর তাঁর মনোনয়ন বাতিল করে জামায়াত।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সিরাজুল ইসলাম হাটহাজারী উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার শুরা সদস্য। তিনি ১৯৯৪ সালে ডিপ্লোমা, ১৯৯৬ সালে স্নাতক (বিএ) আর ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর (এমএ) পাস করেন। তবে তিনি নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম নামে পরিচয় দিতেন। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচির প্রচারপত্রেও তিনি এ নাম লিখতেন। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর পদোন্নতির সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারের পর তিনি সেকশন অফিসার (নবম গ্রেড) পদ থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার (ষষ্ঠ গ্রেড) পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। তবে এ পদোন্নতির বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত হবে।
অবশ্য শুধু সিরাজুল ইসলাম নয়। তাঁর মতো আরও অন্তত ৫০ জন পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাক পেয়েছেন। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পদোন্নতিতে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার বলে অভিযোগ তাঁদের। এসব পদের মধ্যে রয়েছে নিম্নমান সহকারী থেকে উচ্চমান সহাকরী, উচ্চমান সহকারী থেকে সেকশন অফিসার ও সহকারী রেজিস্ট্রার থেকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার। যদিও সিরাজুল ইসলাম ২০১০, ২০১৩ ও ২০২২ সালে মোট তিনবার পদোন্নতি পেয়েছেন।
এর আগে চলতি বছরের ৩০ ও ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য, তৎকালীন প্রক্টরসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এ সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের মতবিনিময় সভা হয়। এ সভায় সিরাজুল ইসলামের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক। আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা আমরা মেনে নেব না।’
সিরাজুল ইসলামের এ বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। ওই দিন রাতেই গোলচত্বর, ছাত্রদের আবাসিক এ এফ রহমান হল ও শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের সামনে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ প্রতিক্রিয়ার পর তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে জামায়াতে ইসলামী। পাশাপাশি তাঁকে উপজেলা আমিরের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাঁকে শোকজ করে।
নথিপত্রে দেখা যায়, চলতি বছর ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬৪তম সিন্ডিকেট সভায় বৈষম্যর শিকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করতে কমিটি হয়। এ কমিটি ৫ নভেম্বর উপাচার্যের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় কে কে পদোন্নতি পেতে পারেন, তা চূড়ান্ত করে। মূলত তাঁদের পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়েছে। আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার এ সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা ছিল। তবে সাক্ষাৎকারের তারিখ পিছিয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার করা হয়।
জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পদোন্নতিতে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। পাঁচবার সাক্ষাৎকার দিয়ে ষষ্ঠবারে তিনি পদোন্নতি পেয়েছিলেন। এ কারণে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতির আবেদন করেছেন। নিয়ম মেনেই তিনি সাক্ষাৎকার দেবেন। তিনি সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শোকজের জবাব দিয়েছেন। তাঁর দল থেকেও ওই ঘটনার পর তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন‘আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর হস্তক্ষেপ মেনে নেব না,’ বললেন জামায়াত নেতা০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫যা বলছে প্রশাসনপদোন্নতির নথিতে দেখা যায়, সেকশন অফিসার থেকে সহকারী রেজিস্ট্রারে পদোন্নতিতে সিরাজুল ইসলামসহ চারজনের নাম রয়েছে। তাঁদের সাক্ষাৎকার নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মু. জাফর উল্লাহ তালুকদার।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় সিরাজুল ইসলামের থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। তিনি সে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা মানেই পদোন্নতি দেওয়া নয়। পদোন্নতির বিষয়ে কোনো তদবিরও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারও তদবিরের তোয়াক্কা করে না।