চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ পরিবারের পাশে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা
Published: 6th, April 2025 GMT
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
গত ৩ এপ্রিল উপদেষ্টা চট্টগ্রাম মহানগরীতে আন্দোলনে শহীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন ও সব শহীদ পরিবারকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় তিনি শহীদ পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার ও নগদ অর্থ সহায়তা দেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে উপদেষ্টা চট্টগ্রাম মহানগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চান্দগাঁওর শহীদ মো.
এ সময় উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানম, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাএবিএম মশিউজ্জামান, হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু কাওসার মাহমুদ হোসেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নিয়াজ মোর্শেদসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় প্রতিনিধিরা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘বুকে পাথর বাইন্ধা কবরের সামনে খাড়ইয়া থাহি’
‘আমার চোখের সামনে বউ-পোলাপানসহ চাইরজন সদস্য মইরা গেল। সাত বছরের মেয়েসহ সবাই রোজা আছিল। বাসের ধাক্কায় নিমিষেই আমার পরিবারটা ধ্বংস হইয়া গেল। আমি তারারে বাঁচাইতে পারলাম না। আল্লাহ যে ক্যান আমারে বাঁচাইয়া রাখল। আমি এই জীবন দিয়া কী করবাম এহন? আমার পরিবারের সবাই এহন কবরে। ব্যাডা মানুষ কানবারও পারি না। তাই বুকে পাথর বাইন্ধা বউ-পোলাপানের কবরের সামনে খাড়ইয়া থাহি সারাদিন।’
কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের গৌরিপুরের ভাংনামারী ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম মানিক। ঈদুল ফিতরের আগের দিন একই উপজেলার গাজীপুর এলাকার প্রগতি ফিড মিলের সামনে ময়মনসিংহগামী বাসের সঙ্গে গৌরীপুরগামী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে প্রীতি (৭) ও রীতি (১৪) মানিকের মেয়ে, দিলরুবা (৪০) তাঁর স্ত্রী এবং কুলসুমা বেগম (৯৫) তাঁর শাশুড়ি।
গতকাল শনিবার সরেজমিন ভাংনামারি ইউনিয়নের আকন্দ বাড়িতে গেলে সমকালের সঙ্গে কথা হয় বাড়ির লোকজনের। মানিক বলেন, তিনি ময়মনসিংহ নগরীর স্বদেশী বাজার এলাকায় একটি ছোট দোকান নিয়ে ব্যবসা করেন। এটি তাঁর পারিবারিক ব্যবসা। তবে অল্প পুঁজির ব্যবসা হওয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় দিন চলছিল তাঁর। ঈদের আগের দিন সাহ্রি খেয়ে নাটক ঘরলেনের ভাড়া বাসা থেকে গ্রামের বাড়িতে রওনা দিয়েছিলেন তারা। পরে বাসের ধাক্কায় চারজনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার পর শোকে স্তব্ধ হয়ে যান স্ত্রী-সন্তান হারানো মানিক। দুই মেয়ে তাৎক্ষণিক মারা গেলেও আরেক মেয়ে মারিয়া আক্তার মাহি (১৪) গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। মানিক জানান, মাহি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। নগরীর সিটি স্কুলের ছাত্রী সে। মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে শঙ্কিত তিনি। স্কুলের শিক্ষকদের কাছে আকুতি জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে যাতে পরীক্ষায় বসতে পারে।
মানিক বলেন, তিন মেয়েকে স্কুলে আনা-নেওয়া ও সংসারের কাজেই সারাদিন ব্যস্ত থাকতেন তাঁর স্ত্রী। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরেই তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার জন্য তাগিদ দিতেন বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।
প্রীতি ও রীতির মামা ফজলুল হক আকন্দ জানান, সাত ভাই-বোনের মাঝে ষষ্ঠ ছিল দিলরুবা। ছোটবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন। পরিবারের সবার খোঁজখবর রাখতেন। সংসার সামলেও দিনে এক-দুবার তাঁকে ফোন দিয়ে বাড়ির খোঁজখবর নিতেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমাদের জীবনে আর কোনো ঈদ আসবে না। এ বাড়িতে আর কোনো দিন আনন্দ হবে না।’
রীতির মামি শিলা আক্তার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘রীতির মা আমাকে বোনের মতো দেখত। আমাদের আপদ-বিপদে সে সবার আগে এগিয়ে আসত। আমরা কোনো দিন হাসপাতালে গেলে সে একাই সব সামলাত। বাড়িতে আসার আগেই ছোট মাছ আর শুঁটকি রান্না করে রাখতে বলত। তিন মেয়ের মধ্যে দুটো মেয়ে ঘটনাস্থলে মারা গেল। আল্লাহ একটি মেয়েকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আগে আমার এক মেয়ে ছিল। এখন থেকে মাহি আমার আরেক মেয়ে।’
অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে শিলা বলেন, ‘তাদের রেখে আল্লাহ যদি আমাকেই উঠিয়ে নিত, তাহলে আমার কোনো দুঃখ থাকত না। এই দুর্ঘটনা আমাদের জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে। আমাদের মুখে আর কোনো দিন হাসি ফুটবে না। মাহিকে তার মা ডাক্তার বানাতে চেয়েছিল। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করব তার মায়ের আশা পূরণ করতে।’ তাঁর ক্ষোভ, এত বড় একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা তাদের সান্ত্বনা জানাতে আসেনি। কেউ তাদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি।
গৌরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাজ্জাদুল হাসান সমকালকে জানান, ঈদে অফিস বন্ধ থাকায় তারা যেতে পারেননি। তাদের বিষয়ে অবগত আছেন। অফিস খোলা হলে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।