লালমনিরহাট সদরের তিস্তা পাড়ের বৃদ্ধা রশিদা বেগম। নিজের বলতে কিছু নেই তার। অন্যের ভিটেতে বাস করেন তিনি। সম্বল বলতে ১০টি মুরগির বাচ্চা ও একটি মা মুরগি। অন্যের বাড়িতে কাজ ও ভিক্ষা করে একটি মুরগি কিনেছিলেন। সেখান থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে ১০টি মুরগি হয়। শুক্রবার বিকেলে মুরগিগুলো মারা যায়। রশিদার দাবি, বিষ প্রয়োগ করে মুরগিগুলো হত্যা করা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে মৃত পাঁচটি মুরগি নিয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় হাজির হন রাশিদা। থানার প্রবেশদ্বারে মৃত মুরগি রেখে কান্না ও বিলাপ শুরু করেন তিনি। 

কোলে মৃত মা মুরগিকে নিয়ে রাশিদা বলেন, ‘কত আদর করছি তোমাক গুলাক (মুরগিগুলো), নিজের ছাওয়ার (ছেলে-মেয়ে) মতো তোমার গুলাক আদর করছি, তোমরা গুলা (মুরগিগুলো) হামাক ছাড়ি গেলেন। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে থানায় আসছি।’ 

তার দাবি, পার্শ্ববর্তী ভুট্টা ক্ষেতে বিষ প্রয়োগ করায় মুরগিগুলো মারা গেছে। এ ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। রশিদা গোকুন্ডা ইউনিয়নের বেড়া পাঙ্গা গ্রামের মৃত মজিবার রহমানের স্ত্রী। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তিন-চার দিন আগে পার্শ্ববর্তী গ্রাম ঢাকনাই কুড়ার পাড় এলাকায় ছোট ভাই ছালামের মেয়ের বিয়েতে যান রাশিদা। প্রতিদিনের মতো বিকেলে মুরগিগুলো ঘরে উঠিয়ে রশিদা ভাইয়ের বাড়িতে চলে যান। শুক্রবার বাড়িতে এসে একটি বড় মুরগি ও ১০টি মুরগির বাচ্চা মৃত অবস্থায় দেখতে পান। তার দাবি, মুরগিগুলো বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে।

রাশিদা সমকালকে জানান, বাড়িতে তিনি একা থাকেন। এ ভিটা তার নয়। অন্যের বাড়িতে কাজ করে ও সাহায্য নিয়ে তাকে চলতে হয়। ছেলে রাজ্জাক আলী বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। মেয়ে মুক্তার বিয়ে হয়ে গেছে। শেষ সম্বল মুরগিগুলো মারা যাওয়ায় তিনি কষ্ট পেয়েছেন। তাই বিচার চাইতে মৃত মুরগিগুলো নিয়ে থানায় এসেছেন।

লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরনবী জানান, মুরগিগুলোই বৃদ্ধা রশিদার বড় সম্পদ। তদন্ত করা হচ্ছে। কেউ দায়ী হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম রগ গ ল

এছাড়াও পড়ুন:

হিজরতের ৫টি শিক্ষা

সাহাবিদের হিজরতের ঘটনাবলি কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং তা মুমিন জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাদের হিজরতের ঘটনা ও ত্যাগের আদর্শ থেকে কয়েকটি মৌলিক শিক্ষা উঠে আসে:

১. হিজরত প্রথমত আল্লাহর আদেশ পালন

হিজরত কেবল কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল না, বরং ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক ইবাদতমূলক নির্দেশ। এই কারণে সাহাবিরা সবচেয়ে প্রিয় বস্তু—ঘরবাড়ি, সম্পদ, আত্মীয়স্বজন—সহজে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। (মুহাম্মদ সাইদ রমাদান আল-বুতি, ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা: ১৫৬, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ২০০৪)

২. ইমানের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ

হিজরত শেখায় যে একটি জাতির ভিত্তি স্থাপন এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। সুহাইব তাঁর সব সম্পদ, আবু সালামা তাঁর পরিবার এবং বনু জাহশ (রা.) জন্মভূমি ত্যাগ করে এই মূল্য পরিশোধ করেছিলেন। এই ত্যাগ বিনা মূল্যে অর্জিত হয়নি।

আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. ইমানের সম্পর্ক অন্য সব সম্পর্ক থেকে ঊর্ধ্বে

ওমর (রা.) আইয়াশকে যখন তার মায়ের দোহাইয়ের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছিলেন, তা প্রমাণ করে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্যের বন্ধন অন্য সব জাগতিক সম্পর্ক (গোত্র, পরিবার, রক্ত) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।

৪. ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসা

হিজরত মোটেই বিশৃঙ্খল ছিল না। ওমর (রা.)-এর পরিকল্পনা, কাফেলাবদ্ধ হয়ে যাত্রা এবং কৌশল অবলম্বন—সবই প্রমাণ করে যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি মানবীয় প্রচেষ্টা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করাও আবশ্যক।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে২৯ জুন ২০২৫৫. আল্লাহর দয়ার বিশালতা

এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ফিতনা ও দুর্বলতা মানুষের জীবনে আসতে পারে। কিন্তু যখন তারা মক্কায় বন্দী হয়ে নিজেদের পাপী মনে করছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাজিল করে আশার দরজা খুলে দেন, ‘বলো, “হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ (পাপ করেছ), তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন।”’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)

এই আয়াতটি ছিল তাঁদের জন্য এক ঐশী ক্ষমা ও নতুন সুযোগের বার্তা।

হিজরত কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি একটি অক্ষয়–দর্শন—যেখানে ইমান, ধৈর্য এবং আত্মত্যাগের সমন্বয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের বীজ নিহিত ছিল। এই দর্শনই মুসলমানদের নতুন এক দিগন্তে পৌঁছে দেয়।

আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ