ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর মধ্যে ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে একটি শুল্কমুক্ত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

শনিবার ইতালির ফ্লোরেন্সে কট্টর ডানপন্থী দল লিগ পার্টি আয়োজিত ভিডিও সম্মেলনে যুক্ত হয়ে ইলন মাস্ক এই অবস্থান ব্যক্ত করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য বাধা দূর করার পক্ষেও অবস্থান জানিয়েছেন তিনি।

ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানিতে পাল্টা শুল্ক ঘোষণার কয়েক দিনের মাথায় মাস্ক এই অবস্থান ব্যক্ত করলেন। ট্রাম্পের ২ এপ্রিলের ঘোষণা অনুযায়ী, ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইইউর যেসব দেশের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে, ইতালি সেগুলোর অন্যতম।

ফ্লোরেন্সের ওই সম্মেলনে ইলন মাস্ক বলেন, সঠিক পরিস্থিতি তৈরির জন্য ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের শুল্কমুক্ত অবস্থার দিকে যাওয়া উচিত। এতে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে একটি কার্যকর মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল তৈরি হবে।

লিগ পার্টির নেতা মাত্তেও সালভিনির সঙ্গে কথা বলার সময় মাস্ক উভয় অঞ্চলের মধ্যে চলাচলে ব্যাপক স্বাধীনতার বিষয়েও সম্মতি দেন।

আরও পড়ুননতুন শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রে অস্থিরতা, দেশবাসীকে ‘অনমনীয়’ হতে বললেন ট্রাম্প৯ ঘণ্টা আগে

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন জানিয়ে ইলন মাস্ক বলেন, ‘লোকজন যদি ইউরোপে কাজ করতে চান অথবা উত্তর আমেরিকায় কাজ করতে চান, তাহলে আমার মতে তাঁদের তা করতে দেওয়া উচিত।’

এর আগে বিভিন্ন সময়ে ইলন মাস্ক ইউরোপের ডানপন্থী দলগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। সালভিনির লিগ পার্টির পাশাপাশি ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির ব্রাদার্স অব ইতালি এবং অলটারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) সমর্থনেও কথা বলেছেন তিনি।

আরও পড়ুনট্রাম্পের শুল্ক আরোপ: যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির চালান স্থগিত করবে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার১৮ ঘণ্টা আগে

শনিবার মাস্ক ভিডিও সম্মেলনে কথা বলার আগে ইতালির অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী ও লিগ পার্টির সদস্য জিয়ানকার্লো জিওরগেট্টি শুল্ক নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানান। প্রতিশোধমূলক পাল্টা পদক্ষেপ না নিতে তিনি ইইউ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

তবে ইইউর বাণিজ্যপ্রধান মারোস সেফকোভিচ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির পণ্যের বিষয়ে ‘ভেবেচিন্তে সাবধানে সমন্বিতভাবে’ পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প ইলন ম স ক ইউর প অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

চীন, ভিয়েতনাম, ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার ২৭ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মোট রপ্তানি আয়ের ৫০ শতাংশের বেশি আসে ইইউতে পণ্য রপ্তানি থেকে। চলতি পঞ্জিকা বছরের প্রথম দুই মাস অর্থাৎ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে প্রতিযোগী সব দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের পোশাক। এ সময় বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৭ শতাংশ। ভারতের ২৬, চীনের ২৫ ও ভিয়েতনামের ১৭ শতাংশ বেড়েছে। 

বাংলাদেশের স্বস্তিকর এ রপ্তানি প্রবাহ আগামীতে ধরে রাখা যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বাণিজ্য বিশ্লেষক এবং রপ্তানিকারকদের অনেকে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি চীন-ভিয়েতামের পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন। এর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশ দুটির পণ্য রপ্তানি কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষ করে চীনা পণ্য রপ্তানি বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এতে বাধ্য হয়ে অন্য বাজারে একটা চাপ তৈরি করবে চীনা পণ্য।  

গত ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশহ ৬৫ দেশের পণ্যে অতিরিক্ত বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপের নজিরবহীন ঘটনার পর বিভিন্ন আলোচনায় এ উদ্বেগের কথা বলে আসছেন অর্থনীতিবিদ, বাণিজ্য বিশ্লেষক ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা। নতুন ঘোষণা বহাল থাকলে বাংলাদেশের পণ্যে মোট শুল্কভার দাঁড়াবে ৫২ শতাংশ। ভিয়েতনামের পণ্যে ৬১ শতাংশ। চীনের পণ্যে শুল্ক হার হবে ১৪৫ শতাংশ। যদিও গত ৯ এপ্রিল থেকে ৯০ দিনের জন্য বাংলাদেশ, ভিয়েতনামসহ চীন বাদে অন্য সব দেশের পণ্যে বাড়তি শুল্ক স্থগিত রাখা হয়েছে। 

ইইউতে রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় 
ইইউর বাজারে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তালিকায় শীর্ষ স্থানে বরাবরের মতো চীন। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্যান্য বাজারের মতো ইইউর বাজারে রপ্তানিতে শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায় নেই ভিয়েতনাম। দেশটির অবস্থান এখানে ষষ্ঠ। তুরস্ক সেখানে তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ। চতুর্থ এবং পঞ্চম অবস্থানে যথাক্রমে ভারত ও কম্বোডিয়া। শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় পাকিস্তান সপ্তম, মরক্কো অষ্টম, শ্রীলঙ্কা নবম। আর দশম অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। 

ইইউর সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে চীনের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৫৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৩৬৯ কোটি ডলারের কিছু বেশি। তুরস্কের রপ্তানির পরিমাণ ১৬১ কোটি ডলার। ভারতের ৮৭ কোটি ডলারের কিছু কম। কম্বোডিয়ার ৭৮ কোটি ডলার এবং ভিয়েতনামের রপ্তানির পরিমাণ ৭৬ কোটি ডলার। ওই সময়ে মোট ১ হাজার ৬১০ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে ইইউ দেশগুলো। 
তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক  মহিউদ্দিন রুবেল সমকালকে বলেন, অনেকগুলো কারণে ইইউতে রপ্তানিতে এই ইতিবাচক প্রবণতা। ওই অঞ্চলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পর চাহিদা বেড়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানিতে মূল্য সংযোজিত পণ্যের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে। নিরাপত্তা উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশের প্রতি ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। হাতে রপ্তানি আদেশের পরিমাণ বেশ ভালো।  

হুমকি হয়েই থাকবে ভিয়েতনাম! 
আগামী বছরের নভেম্বর মাসে এলডিসি থেকে চূড়ান্ত উত্তরণ হবে বাংলাদেশের। পরবর্তী তিন বছরও শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে। এর পর আর এ সুবিধা থাকবে না। বাংলাদেশ যে ধরনের পণ্য রপ্তানি করে থাকে, সেগুলোর ওপর তখন গড়ে ৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। অন্যদিকে প্রতিযোগী ভিয়েতনামের সঙ্গে ইইউর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) পুরোপুরি কার্যকর হবে ২০২৭ সালে। অর্থাৎ ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের আজকের অবস্থান পুরোপুরি বিপরীত হয়ে দাঁড়াবে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আশঙ্কা, ইইউ এবং অন্যান্য বাজার মিলে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ রপ্তানি আয় হারাবে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে ইইউ-ভিয়েতনাম এফটিএ আংশিকভাবে কার্যকর হয়। এখন পর্যন্ত ভিয়েতনামের ৭১ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা ভোগ করছে। এ তালিকায় তৈরি পোশাক নেই। গড়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ শুল্কারোপ রয়েছে পোশাক পণ্যে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চীন, ভিয়েতনাম, ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ