আওয়ামীপন্থি ৭১ আইনজীবীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ, ১০ জনের জামিন
Published: 6th, April 2025 GMT
ছাত্র আন্দোলনের সময় হত্যাচেষ্টা, হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার মামলায় আওয়ামীলীগপন্থি ৭১ জন আইনজীবীর আগাম জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
একই সঙ্গে আত্মসমর্পণ করা ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগরসহ ১০ আইনজীবীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। এরমধ্যে ৯ জনই নারী আইনজীবী। রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এর আগে এদিন সকালে আইনজীবীর মাধ্যমে ৯৩ জন আইনজীবী আত্মসমর্পণপূর্বক জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু আদালতে হাজির হন ৮১ জন আইনজীবী। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাদের জামিন শুনানি শুরু হয়। শুনানিকালে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, তাদের মক্কেলরা হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জন্য আগাম জামিন পেয়েছেন। আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করে মামলায় জামিন আবেদন করেছেন বলে উল্লেখ করেন আইনজীবীরা। তবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করে বলা হয়, অভিযুক্ত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো গুরুতর। তাদের জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানো উচিত। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিকেল ৫টার দিকে বিচারক আসামিপক্ষের জামিন আবেদন খারিজ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোরশেদ মিয়া আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আসামিপক্ষে জামিন চাওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে আদালত সন্তুষ্ট হয়ে ১০ জনের জামিন মঞ্জুর করেন।
কারাগারে যাওয়া উল্লেখযোগ্য আইনজীবীরা হলেন-ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান মানিক, গাজী শাহ আলম, মাহবুবুর রহমান, আসাদুর রহমান রচি, সাইবার ট্রাইব্যূনালের পিপি নজরুল ইসলাম শামীম ও মোরসেদ হোসেন শাহীন, লিটন মিয়া, মাহফুজুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
আবু সাঈদ সাগর ছাড়া অন্য যাঁরা জামিন পেয়েছেন, তাঁরা হলেন সালেহা আক্তার শিল্পী, আফরোজা ফারহানা অরেঞ্জ, জেসমিন আক্তার, তাসলিমা ইয়াসমিন নদী, শিখা ইসলাম, মোকাররমা মিতা, শায়লা পারভীন পিয়া ও সালমা হাই টুনি প্রমুখ।
জানা গেছে, এরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সংগে সংশ্লিষ্ঠ এবং বেশিরভাগই আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম একযোগে এতো আইনজীবীকে এক সংগে কারাগারে পাঠানো হলো।
ঢাকা মহানগর আদালতের পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, বয়স বিবেচনায় একজন পুরুষ আইনজীবী ও ৯ জন মহিলা আইনজীবীকে জামিন দেওয়া হয়েছে। বাকীদের কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আওয়ামীলীগ পন্থী এই আইনজীবীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ওপর হামলা করেছিলেন।
মামলা সুত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গত ৪ আগস্ট আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা, চেম্বার ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আওয়ামী লীগপন্থি ১৪৪ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে গত ৬ ফেব্রুয়ারি সিএমএম আদালতে মামলা করেন ঢাকা বারের কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী বাবু। আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে অভিযোগটি কোতোয়ালি থানায় এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ দেন। মামলার পর হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের আগাম অন্তবর্তীকালীন জামিন নেন ১১৫ আইনজীবী। গতকাল ৮১ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আজ ৭ এপ্রিল তাদের জামিনের মেয়াদ শেষ হবে।
এ মামলার অন্যতম আসামিরা হলেন- প্রবীন আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, ঢাকা মহানগর আদালতের সাবেক পিপি মো.
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে আসামিরা ঢাকা আইনজীবী সমিতির সম্মুখ থেকে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও বিস্ফোরক দিয়ে আইনজীবী ও জনসাধারনের ওপর আক্রমণ করেন। তারা বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের কক্ষ ভাঙচুর ও মারধর করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইনজ ব দ র জন আইনজ ব র রহম ন ম দ র রহম ন আইনজ ব র ন আইনজ ব আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সেবা পেতে চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন দাবি
বিচারপ্রার্থী মানুষের সহজে বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের দাবিতে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা। আজ শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন চট্টগ্রামবাসী।
চট্টগ্রাম হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদের আয়োজনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এএসএম বদরুল আনোয়ারের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন প্রধান সমন্বয়ক চট্টগ্রাম আইন কলেজর উপাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট বদরুল হুদা মামুন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এনামুল হক, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাশেম কামাল, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অন্তবর্তী সদস্যসচিব সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, কাশেম চৌধুরী, মোহাম্মদ বদরুল রিয়াজ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করা। এ দাবির প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে বাস্তবায়নের সূচনা করেছেন বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান। সম্প্রতি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে আলোচনা করায় বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশে বিচারিক সেবা প্রদান করেন মাত্র ২০০০ বিচারক। বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান তথা ৭২-এর সংবিধানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অনুচ্ছেদ- ১০০ সংযোজন পূর্বক জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির বিধান রাখা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। চট্টগ্রামে দ্রুত সার্কিট ব্যঞ্চ স্থাপন করতে প্রধান উপদেষ্টাসহ সবার নিকট দাবি করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালে সামরিক ফরমানের ৪-এ ধারা বলে চট্টগ্রামসহ রংপুর, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা ও সিলেটে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু দেখা যায়, সংবিধান পূনরুজ্জীবিত হলে সাংবিধানিক সংকট দেখা দিতে পারে। এ অজুহাতে সংবিধানে স্থায়ী বেঞ্চের বিধান বিলুপ্ত করা হয়। জেনারেল এরশাদ ১৯৮৬ সালে সামরিক ফরমানের ৪-এ ধারা সংশোধন করে স্থায়ী ৬টি বেঞ্চকে সার্কিট বেঞ্চে রূপান্তরিত করেন। এরপর ঢাকার আইনজীবীদের আন্দোলনের ফলে সার্কিট বেঞ্চ ফের বিলুপ্ত করা হয়।