বাংলাদেশের স্বার্থ বজায় রেখেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ পরিকল্পনা করছে সরকার। সেই সঙ্গে নন ট্যারিফ বাধা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

রবিবার (৬ এপ্রিল) সচিবালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রেক্ষিতে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সরকারের আরো তিন উপদেষ্টা, বেশ কয়েকজন সচিব, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং কয়েকজন অর্থনীতিবিদ এই বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রথমে আমরা ইউএসএ এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার ঘটাব। এজন্য আমেরিকা থেকে আমাদের দরকারি কোন কিছু ইমপোর্ট করতে হয়, আমরা এলএনজি এবং জিনিস ইমপোর্ট করব। সো দ্যাট তাদের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরেকটু দৃঢ় হয়। আর আমাদের এখান থেকে যা ইমপোর্ট হয় আমরা করব। 

তিনি বলেন, আমরা এখানে যে অ্যাকশন নেব, আমাদের নিজস্ব গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি এবং অন্যান্যরা যাতে আরো বেশি প্রতিযোগী সক্ষমতা অর্জন করে প্রতিযোগীদের তুলনায়। আমেরিকানরা মনে করে বাংলাদেশি পণ্য বেটার, অন্য দেশের তুলনায়। সেটাকে আমরা আরেকটু বাড়াবো প্রাইভেট সেক্টরে। অন্যান্য সার্ভিস আমরা আমেরিকা থেকে আনতে পারব। 

তিনি আরো বলেন, নন ট্যারিফ বেরিয়ার অনেক কিছু থাকে। এই যে ৫২, ৫৪ শতাংশ সংখ্যা আমরা দেখি, এর বাহিরে অফিসিয়াল রেগুলেটরি অনেক রকম সুবিধা-অসুবিধা থাকে। আমেরিকার ব্যবসায়ীরা যাতে এগুলোর সম্মুখীন না হয় এগুলো যত দ্রুত সম্ভব আমরা যুক্তিযুক্ত করব, এটাকে আরো স্মুথ করব। যাতে দুই দেশের বাণিজ্য আরো প্রসার লাভ করে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমদানি করার ব্যাপারে আমেরিকা যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তাতে করে অন্যান্য বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তি চীন, ইউরোপ তারাও এর বিপক্ষে কতগুলো পদক্ষেপ নেবে। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমরা পুরো জানি না। পুরো বিশ্বের অর্থনীতি কোথায় যাবে, বড় ধরনের নড়াচড়া খাবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা আস্তে আস্তে সব কিছুই মাথায় রাখছি। আপাতত আমরা আমাদের প্রধান যে রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় বাজার সেটা রক্ষা পায়, আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা যাতে আরো বাড়ানো যায়, যাতে আমরা অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে টিকে থাকতে পারি। আমরা মনে করি সেটা সম্ভব হবে। 

তিনি বলেন, যে করটা বাড়ানো হলো এটা যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে তাদের ব্যক্তিদের ওপর পড়বে। মধ্যসত্ত্বভোগী যারা বাইং হাউজ, তাদের ওপর পড়বে। আমাদের ওপর কতটুকু পড়বে তার একটা বোঝাপড়া হতে হবে। আমরা এটুকু জানি, শ্রমিকের মজুরির দিক থেকে আমরা একেবারে সর্বনিম্ন জায়গায় আছি, এর থেকে আর কমানো যাবে না এখানে। কাজেই করের বাড়তি বোঝা অন্য জায়গাতেই শিফট হবে। আমাদের ওপর আর বেশি বোঝার চাপানো যাবে না এটা সবাই বুঝবেন, আমেরিকার যারা পলিসি ঠিক করেন তারাও জানেন আমাদের দিক থেকে এর থেকে বেশি শ্রমিকদের খরচ কমানো যাবে না।

তিনি আরো বলেন, আমরা উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা করব। আমাদের অনেক তৈরি পোশাক শিল্প আছে যেটা বিশ্বমানের উৎপাদনশীলতা সক্ষম এবং সেখানে আমরা অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবো বলে আমরা মনে করি।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সহায়ক এবং এটাকে এপ্রোপ্রিয়েটলি যুক্তরাষ্ট্রকে আমরা কীভাবে উপস্থাপন করব। সে লক্ষ্যে আজকে আমাদের আলোচনা।

তিনি বলেন, আমাদের ট্যারিফ রিলেটেড মানে নন ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা যেগুলো রয়েছে, যেগুলো আমাদের বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সহায়ক আমরা সেগুলোকে রোহিত করার বা পুনর্মূল্যায়ন করার পদক্ষেপ নিচ্ছি। 

প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের স্বার্থ বজায় রেখেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বেশ বাড়ানো সম্ভব। আমরা তার উপায়গুলো খুঁজছি। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব যাতে করে এই বিষয়টি দ্রুত আমরা নিষ্পত্তি করতে পারি। 

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আজকে যে আলোচনাটি হয়েছে সেখানে আমরা সকলেই এক সমতলে আছি। গতকালকে যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের যে রাষ্ট্রদূত আছেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজনটিভ অফিসে কথা বলেছেন। সেখান থেকেও আমরা যে সংকেত পাচ্ছি সেটা আমাদের চিন্তা ধারার সঙ্গে সাযুজ্য আছে। সুতরাং আমরা মনে করছি আগামী এক দুই দিনের মধ্যে আমাদের প্রজেকশনগুলো চূড়ান্ত করে ফেলতে পারবো। এই কথাগুলো অনেক দিন ধরে আলোচনা হয়ে আসছে আমাদের ভেতরে। যা আপনারা আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এর একটা প্রতিফলন দেখতে পারবেন। 

ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন য ন য দ র ওপর উপদ ষ ট প রস র আম দ র আম র ক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে তিন দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পুতিনের

 রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে তিন দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন।

তিন বছর দুই মাস আগে বেসামরিকীকরণ ও নাৎসিমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে ইউক্রেনে যে সামরিক অভিযান শুরু করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন, তারপর এই দ্বিতীয়বার তার পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলো। 

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধে নামে ইউক্রেন। দুই দেশের রক্তক্ষয়ী ও বিভৎস এই যুদ্ধে হাজার হাজার সেনা ও বেসামরিক মানুষের প্রাণ গেছে; ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের বাইরে।

এত দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের সঙ্গে একাট্টা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়ে ফের ক্ষমতায় বসার পর যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ধারায় রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘোষণা এলো।

বিবিসি লিখেছে, পুতিনের ঘোষণা অনুযায়ী ৮ মে থেকে শুরু হয়ে ১১ মে পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চলবে। এক টেলিগ্রাম বার্তায় পুতিনের পক্ষে এই ঘোষণা দিয়েছে ক্রেমলিন। 

অবশ্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া এখনো জানা যায়নি। কী শর্তে ইউক্রেন এই যুদ্ধবিরতি মানবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

এর আগে ইস্টার সানডে উপলক্ষে মাত্র ৩০ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতির কথা বলেছিল রাশিয়া; যদিও তা উভয় দেশ লঙ্ঘন করে হামলায় লিপ্ত হয়।

যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টার সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি করার জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয় দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে শান্তি চুক্তির শর্তগুলো নিয়ে কথা বলছেন। পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে অংশ নিতে রোমে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। ওই দিন ট্রাম্প বলেছিলেন, চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। 

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার দিনই সোমবার রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। হতাহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। 

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ