ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা জানাতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে দুটি চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, একটি চিঠি দেওয়া হবে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। আরেকটি চিঠি দেওয়া হবে বাণিজ্য উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআরকে।

আজ রোববার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরে আয়োজিত এক পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে পর্যালোচনা সভাটি বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হয়ে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে। বৈঠকে চারজন উপদেষ্টা, চারজন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি–সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ, ১০ জন সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে চারজন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে যে দুটি চিঠি দেওয়া হবে তাতে কী থাকবে—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বৈঠকে উপস্থিত সবাই তাঁদের মতামত দিয়েছেন। বাংলাদেশ কী কী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করছে, চিঠিতে সেগুলোর উল্লেখ থাকবে।’

প্রেস সচিব আরও বলেন, চিঠিতে যা–ই থাকুক তা হবে ব্যবসাবান্ধব। সেখানে বাংলাদেশের ব্যবসার স্বার্থকে দেখা হবে। দুই দেশ যাতে সমানভাবে লাভবান হতে পারে। শফিকুল আলম বলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে আমাদের ব্যবসা আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ নিয়ে বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা চারটি বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এক.

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে হবে। দুই. বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সক্ষমতা অন্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় আরও বাড়ানো হবে, যাতে করে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ মনে করে বাংলাদেশের পণ্য অন্য দেশের তুলনায় ভালো। তিন. যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুধু পণ্য নয়, অন্য সেবাও আমদানি করা হবে। চার. যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অশুল্ক বাধা দূর করা হবে, সেটি অফিশিয়াল ও নন–অফিশিয়াল (আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক)।

প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেন, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসে কথা বলেছেন। সেখান থেকে যে সংকেত পাওয়া গেছে, তাতে বাংলাদেশের চিন্তাধারার সঙ্গে তাদের সাজুয্য রয়েছে। আগামী এক–দুই দিনের মধ্যে করণীয়গুলো চূড়ান্ত করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, শুল্ক আরোপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিয়েছে, চীনসহ বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তির দেশগুলোও পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাতে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা জানা নেই।

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক যেন রক্ষা পায়, সেই চেষ্টা করা হবে জানিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকের মজুরি সর্বনিম্ন জায়গায় আছে। এর থেকে কমানো যাবে না। শ্রমিকের দিক থেকে খরচ না কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপরে জোর দেওয়া হবে। একই সঙ্গে অশুল্ক বাধা দূর ও বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।’

ব্যবসায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক–কর আরোপের পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তাতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ে স্বস্তি এসেছে। বোঝা যাচ্ছে, সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে বাংলাদেশ আর কী কী জিনিস কিনতে পারে সেই বিষয়ে নজর দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

একই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য পোশাক খাতের বাইরে নতুন অনেক দুনিয়া আছে উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, সেসব খুঁজে বের করতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পদক ষ প ন ব যবস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় নৃশংস হত্যার প্রতিবাদ বাসদের

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
 
সোমবার বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ এক বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের গাজায় মার্কিন মদদে ইসরায়েলি বোমা হামলা ও গণহত্যা অব্যাহত আছে। ৬ এপ্রিল থেকে এই হামলার তীব্রতা ও ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্বর হামলা ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সারা দুনিয়ার শান্তিপ্রিয় মানুষের সঙ্গে আমরাও সংহতি জানাচ্ছি। 

এদিকে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বাসদ মঙ্গলবার বিকেল চারটায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করবে। বাসদের এক বিবৃতিতে এই সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি সফল করার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সকলকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ