ফুল বাগানে উদযাপিত হলো মহানায়িকার জন্মদিন
Published: 6th, April 2025 GMT
‘তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার / রাত ঘুম ঘুম ঝিকিমিকি তারা এই মাধবী রাতে আসেনি কেউ কভু আর জীবনে আমার/ এই রাত তোমার আমার শুধু দুজনার'- এরকম মৃদু সুরে গান চলছে সুচিত্রা সেনের ঘরে। অন্যদিকে তারই আঙিনায় ফুলের বাগানে পালিত হচ্ছে জন্মদিনে কেক কাটা ও আলোচনা সভা।
এরকম এক পরিবেশে আজ রোববার পাবনায় বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়েছে । ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিলের আজকের দিনে তিনি পৃথিবীর মুখ আলো করে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন সূিচত্রা সেন।
সকাল ১১টায় পাবনা শহরের হেমাসাগর লেনে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও কেক কেটে জন্মদিন পালন করে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদসহ পাবনার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা.
তৎকালীন বৃহত্তর পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের একতলা পাকা পৈত্রিক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের শিশুকাল, শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। তার বাবা করুনাময় দাশগুপ্ত পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারী ইন্সপেক্টর পদে চাকুরী করতেন। মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ছিলেন গৃহিনী। দু’বোনের মধ্যে সুচিত্রা সেন ছিলেন বড়। ছোট বোন হেনা দাশগুপ্ত। শহরের মহাকালী পাঠশালায় (বর্তমানে টাউন গার্লস হাই স্কুল) পড়ালেখা শেষে সুচিত্রা সেন স্থানীয় পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। পড়ালেখায় খুব একটা মনোযোগী ও মেধাবী না থাকলেও গান, নাটক, অভিনয় প্রিয় ও পছন্দের ছিল সূচিত্রা সেনের। পাবনা শহরের নানা অনুষ্ঠানে গান গাওয়া ও নাটক থিয়েটারে তিনি অভিনয়ে দক্ষতা দেখান।
পাবনার উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রমা বনেদি পরিবারের বধু হয়ে ঘর সংসারের পাশাপাশি সিনেমায় অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েন। বিয়ের আড়াই বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ নামের একটি বাংলা ছবিতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। অজ্ঞাত কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি। এরপর ১৯৫৩ সালে নায়িকা হয়ে তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদি’ ছবিটি মুক্তি পায়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছর সুচিত্রা সেন একটানা বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেন। স্বামী দিবানাথ সেনের প্রবল আপত্তি থাকলেও সুচিত্রা সেন মনের তাগিদে নিজেকে অভিনয়ে জড়িয়ে রাখেন। ‘সাত নম্বর কয়েদি’ ছবির পরিচালক ছিলেন সুকুমার দাশগুপ্ত। তারই একজন সহকারী পরিচালক নীতিশ রায় এ ছবিতে অভিনয় করার পর ছবি মুক্তির সময় রমা নাম বদলে নাম দেন ‘সুচিত্রা সেন’। এরপর থেকেই কিশোরী বেলার বান্ধবীদের রমা বাবা-মায়ের দেওয়া নাম রমা দাশগুপ্ত থেকে স্বামীর পদবী নিয়ে রমা সেন সবশেষে স্বপ্নসুন্দরী সুচিত্রা সেন হয়ে যান। সুচিত্রা সেন বাংলা ৫৬টি ও ৭টি হিন্দি মিলে মোট ৬৩টি ছবিতে নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি হয়ে বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। ১৯৭৮ সালে উত্তম কুমার মারা গেলে সিনেমায় অভিনয় বন্ধ করে দেন।
১৯৬৩ সালে সাত পাকে বাঁধা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন সিলভার প্রাইজ ফর বেষ্ট অ্যাকট্রেস জয় করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ভারত সরকারও তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করেন। ২০০৫ সালে তাঁকে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার দেয়ার প্রস্তার রাখলে তিনি জনসমক্ষে আসতে চাননি বলে তা গ্রহন করেননি। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সব্বোর্চ সম্মান বঙ্গবিভূষণ দেয়া হয়। ১৯৫৫ সালে তিনি দেবদাস ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন, যা ছিলো তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি।
সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ চন্দ্র মধু বলেন, ‘মহানায়িকার জন্মদিনে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে কেক কাটাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া পাবনার আরও কয়েকটি সংগঠন কেক কাটাসহ নানা কর্মসুচি হাতে নিয়েছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অভ ন ত র চলচ চ ত র শহর র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
এনরিকে ও ক্যাম্পোসের পিএসজির চারে চার
প্যারিস স্যান্ট জার্মেইন (পিএসজি) ফরাসি লিগ ওয়ানের শিরোপাটাকে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে। সবশেষ লিলের কাছে ২০২০/২১ মৌসুমে লিগ শিরোপা খুইয়েছিল প্যারিসের জায়ান্টরা। এরপর দলের অবস্থা যাই থাকুক, লিগ ওয়ানের শ্রেষ্ঠত্ব হারায়নি পিএসজি। শনিবার (৫ মার্চ) টানা চতুর্থবারের মতো ফ্রান্সের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করল তারা। তাও আবার ৬ ম্যাচ হাতে রেখে।
সমীকরণটা সহজ ছিল। শনিবার অঁজের বিপক্ষে পিএসজি কেবল ড্র করলেই শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যেত। লুইস এনরিকের দলের অপেক্ষা সহ্য হচ্ছিল না। কোন ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে তারা অঁজেকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে দেয়। ন্যবধান গড়ে দেওয়া গোলটি করেন দেজিরে দোয়ের।
আরো পড়ুন:
পারলেন না মেসি-নেইমার, ফরাসি কাপ থেকে পিএসজির বিদায়
আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানালেন বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক
লিগ ওয়ানের ২৮ রাউন্ডের খেলা শেষে পিএসজি ৭৪ পয়েন্টে পৌঁছে গিয়েছে। এখনও তাদের হাতে ৬টি ম্যাচ আছে। পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা মোনাকো থেকে ২৪ পয়েন্ট এগিয়ে এনরিকের দল। মোনাকো বাকি সব ম্যাচ জিতলেও সর্বোচ্চ ৭১ পয়েন্টে পৌঁছাতে পারবে।
এটি পিএসজির ইতিহাসের ১৩তম লিগ ওয়ান শিরোপা। যা ফ্রান্সে একটি রেকর্ড। তাছাড়া আরব মালিকানার কাছে যাওয়ার পর (২০১২-১৩ মৌসুম থেকে) এটি প্যারিসের জায়ান্টদের ১১তম শিরোপা।
পিএসজির অধিনায়ক মারকুইনহোস ২০১৩ সালে ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন। এই ব্রাজিলিয়ান ইতিহাসে একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি ১০টি লিগ ওয়ান শিরোপায় চুমু খেতে পেরেছেন।
মারকুইনহোস বলেন, “ব্যাপারটা আমার কাছে উত্তজনার, আমি সত্যিই খুশি। এতদিন ধরে একটি শীর্ষ দলের সঙ্গে থাকা একটি চ্যালেঞ্জ। এই শিরোপাগুলি ইতিহাসে লেখা থাকবে। আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে সবকিছু জেতার। যখন ফরাসি চ্যাম্পিয়নশিপ না জিতি, তখন কষ্ট হয়। এটা আমার সাথে দুইবার ঘটেছে।”
"এটা আমাদের ডিএনএ-তে আছে, মাঠে সবকিছু দেওয়ার, একটি আগ্রাসী দর্শন ধারন করার, এবং প্রতিটি ম্যাচে আমাদের জার্সি ভিজিয়ে ফেলার, তা যেই প্রতিপক্ষ হোক না কেন। ছোটবেলা থেকে আমি এমন দলে খেলেছি যাদের এই ডিএনএ ছিল।"
প্রথমার্ধে গোল হয়নি, তবে পিএসজি পুরোপুরি বল নিয়ন্ত্রণ করেছিল। তারা ১১টি শট নিয়েছিল, যার মধ্যে গঞ্জালো রামোস প্রায় অর্ধেক শট নিয়েছিলেন। তবে এই পর্তুগিজ গোলের দেখান পাননি।
বিরতির পর খেলা শুরু হলে ১০ মিনিটের মাঝে পিএসজিকে লিড এনে দেন দোয়ের। এই ১৯ বছর বয়সী উইঙ্গার দারুণ এক ভলি শটে গোল করেন, যা তার এই সিজনে পঞ্চম লিগ গোল। অ্যসিস্টটি করেন জানুয়ারির দলবদলে যোগ দেওয়া খভিচা কভারাতস্কেলিয়া।
এনরিক ২০২৩-২৪ মৌসুমের শুরুতে পিএসজির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মাত্র দুইটি লিগ ম্যাচ হারেছেন। এই স্প্যানিশ কোচ প্রমাণ করেছেন যে, লিওনেল মেসি, নেইমার এবং কিলিয়ান এমবাপে চলে যাওয়ার পরও দলগত শক্তি মোটেই খর্ব হয়নি। শেষ বাঁশি বাজানোর পর এনরিক ছুটে যান পিএসজির স্পোর্টিং ডিরেক্টর লুইস ক্যাম্পোস কাছে। একে অপরকে আলিঙ্গন করেন তাঁরা। কাম্পোস ২০২২-২৩ মৌসুমে যোগ দেন পিএসজিতে। এই পর্তুগিজ স্পোর্টিং ডিরেক্টর এরপর পিএসজি পুনর্গঠনে নিশেষ অবদান রাখেন।
ঢাকা/নাভিদ