পশ্চিমবঙ্গে রামনবমীতে বিজেপি-তৃণমূলের মিছিল
Published: 6th, April 2025 GMT
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রামনবমী উপলক্ষে আজ রোববার মিছিল বের হয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টিসহ (বিজেপি) বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের উদ্যোগে এই মিছিল হয়। এদিকে এ উপলক্ষে মিছিল বের করেছে তৃণমূল কংগ্রেসও।
রামের জন্মদিন উপলক্ষে এই রামনবমীর মিছিলে অস্ত্র হাতে, বিশাল বিশাল সাউন্ড বক্স বাজিয়ে জয়ধ্বনি করে রামভক্তদের হাঁটতে ও নাচতে দেখা যায়। কয়েক জায়গায় পুলিশ মিছিল আটকালে বিজেপির রাজনৈতিক নেতাসহ ভক্তরা পথে বসে পড়েন।
তৃণমূল কংগ্রেসও এদিন পাল্টা পথে নেমেছে। তাঁদের নেতা-নেত্রীরাও রামনবমী পালন করতে পথে নেমেছেন। দলের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রামনবমী উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীরা বলেন, তাঁরা বিজেপির মতো অস্ত্র নিয়ে নয়, অস্ত্র ছাড়া রামের পূজা করছেন।
হুগলি জেলার তৃণমূলের সংসদ সদস্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি উপোস করে পথে মিছিল করতে নেমেছি। ওদের দিকে (বিজেপি) একজনও কেউ দেখাতে পারবেন যে উপোস করে নেমেছেন? আমরা পূজা করি পূজার মতো করে। ওদের মতো বাঁদরামি করি না।’
বীরভূমের সংসদ সদস্য অভিনেত্রী শতাব্দী রায় বলেন, ‘বিদ্বেষ ভুলে, পারস্পরিক সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে আমরা পথে নেমেছি। আমরা সীতা-রামকে মানি অর্থাৎ রামের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী সীতাকেও আমরা মানি। তাঁকে ভুলে গেলে হবে না। আর আমরা মনে করি যে অস্ত্র ছাড়াই ভগবানকে ডাকা সম্ভব, আমরা সেটাই করি।’
এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম অঞ্চলে একটি নতুন রামমন্দিরের শিলান্যাস করেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী। ওই মন্দির নির্মাণের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজ চলছে জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হিন্দুবিরোধী রাজনীতির বিরুদ্ধে আজ হিন্দু ঝড় উঠেছে, রাম হিন্দুদের ভগবান। আর আজ হিন্দুরা পীড়িত, সে কারণেই আজ এখানে আমরা সমাবেশ করলাম। রামমন্দির নির্মাণের কথা ঘোষণা করলাম, কারণ এখানে অনেক হিন্দু শহীদ হয়েছেন।’
কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই এদিন প্রথমবার বেশ বড় করে রামনবমী পালিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগে এদিন পূজা হয়।
তবে হুগলির কেষ্টপুর অঞ্চলে বিজেপির সাবেক সংসদ সদস্য লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। সেখানে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। হাওড়া জেলায় ১৬টি মিছিল এদিন বেরোনোর কথা, যার কয়েকটি ইতিমধ্যেই বেরিয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘অঞ্জনি পুত্র সেনা’ নামের একটি হিন্দু সংগঠন। মিছিল ঘিরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মালদায় স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ রামভক্তদের মিষ্টি খাওয়ান। সেখানকার বিজেপির সংসদ সদস্য খগেন মুর্মুকেও মিষ্টিমুখ করান মুসলমান বাসিন্দারা। মুর্মু বলেন, এটাই বাংলার ঐতিহ্য, যেখানে সবাই মিলেমিশে থাকেন।
শহরের কেন্দ্রে অবস্থান চাকরিহারা ব্যক্তিদেরঅন্যদিকে কলকাতায় ধর্মতলা অঞ্চলেও বড় ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশে বসেছেন কয়েক হাজার মানুষ। এরা সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে চাকরি হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে আজ কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গ বিক্ষোভ ও মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
শহীদ মিনারে আজ অবস্থান শুরু করেছেন বেশ কয়েক হাজার চাকরি হারানো মানুষ। গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার স্কুলশিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি গেছে। চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল।
আগামীকাল সোমবার শহরের নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে চাকরিহারা ব্যক্তিদের বড় সমাবেশ আছে। সেখানে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চাকরি হারানো মানুষদের কথা শুনবেন বলে আগেই জানিয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন দ য প ধ য য উপলক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
সংবিধান অর্থবহ করতে বিচার আরও সহজলভ্য করতে হবে: প্রধান বিচারপতি
দেশ-জাতি নির্বিশেষে সাধারণ নাগরিকের জীবনে সংবিধানকে আরও কার্যকর ও অর্থবহ করে তুলতে হলে বিচার প্রক্রিয়াকে আরও সহজলভ্য, স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
শুক্রবার ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত তুরস্কের সাংবিধানিক আদালতের ৬৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ অধিবেশনে এ কথা বলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে তুরস্কের সাংবিধানিক আদালতকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, তুরস্কের সাংবিধানিক আদালতের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই আয়োজন শুধু একটি ঐতিহাসিক উপলক্ষ নয়, বরং এটি সাংবিধানিক আদর্শ ও ন্যায়বিচার রক্ষার প্রতিশ্রুতির একটি প্রতীকী উদযাপন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের সাংবিধানিক পথচলা ভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠলেও দুই দেশের অভিন্ন লক্ষ্য ন্যায়বিচার, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধান বিচারপ্রতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের উচ্চ আদালত বিভিন্ন স্বপ্রণোদিত উদ্যোগের পাশাপাশি জনস্বার্থ মামলার মাধ্যমে যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে, তা বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তিনি বলেন, বর্তমান যুগে সাধারণ মানুষের অধিকারের সুরক্ষায় সাংবিধানিক আদালতগুলোর আরও বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, জলবায়ু ন্যায়বিচার, ডিজিটাল অধিকার ও তথ্য সুরক্ষা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আন্তঃদেশীয় বৈষম্য মোকাবিলায় বিশ্বের প্রতিটি দেশে এমন একটি ন্যায়বিচার কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা জরুরি- যা একদিকে নিজস্ব বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, তেমনই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়ও প্রাসঙ্গিক ভূমিকা পালন করবে।
প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্যে তুরস্কের সাংবিধানিক আদালতের প্রতি আমন্ত্রণ ও আতিথেয়তার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও গভীর করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।