জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে জমা রাখা আমানতের টাকা ফেরত পেতে বিক্ষোভ করেছেন গ্রাহকেরা। আজ রোববার দুপুরে তাঁরা লাঠি ও ঝাড়ুমিছিল করে থানা চত্বরে অবস্থান এবং জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন। ‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’—ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

বেলা ১১টার দিকে শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কয়েক হাজার গ্রাহক জড়ো হন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে থানা গেটের সামনে এসে অবস্থান নেয়। পরে তাঁরা থানার সামনের সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা দুইটা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে।

একই দাবিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও, ২৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি ও ২৩ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কের পাশে কর্মসূচি পালন করেন।

আজকের কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসার পথে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ফাতেমা বেগম (৬০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার ভাংবাড়ী এলাকার হাসেম মিয়ার স্ত্রী। দুটি সমিতিতে তিনি ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন। বাড়ি থেকে কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় মিলন বাজার এলাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে গৃহকর্মী, ভ্যানচালক, প্রবাসী, কৃষক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রয়েছেন। তাঁরা জানান, লাভের আশায় তাঁরা ২৩টি সমবায় সমিতিতে কেউ এককালীন, কেউ মাসে মাসে টাকা জমা রাখতেন। এখন মূল টাকা ফেরত পাওয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা প্রায় দুই বছর ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন।

গ্রাহকদের অভিযোগ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে মাদারগঞ্জসহ জামালপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সমিতিগুলোর মালিকেরা।

সমাবেশে বক্তব্য দেন আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী। তিনি বলেন, ‘দেড় হাজার কোটি টাকা নিয়ে মালিকেরা আত্মগোপনে থাকলেও ওই অর্থে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রয়েছে। আমরা বারবার দাবি জানিয়ে আসছি, এসব প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হোক। প্রশাসন লোকদেখানো আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।’

কমিটির সদস্য মাহবুব আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকেরা বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়ে আসছেন। মামলা হয়েছে থানায় ও আদালতে। যখন কর্মসূচি পালিত হয়, তখন প্রশাসনের লোকজন টাকা উদ্ধারে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু বাস্তবায়ন কিছুই হয়নি। বাধ্য হয়ে তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন।

জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সমিতিগুলোর অধিকাংশই নিবন্ধিত। গ্রাহকের অন্তত ৭৩০ কোটি টাকা এই সমিতিগুলোতে জমা রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধুন উল্লেখযোগ্য। কেবল এই ছয়টি সমিতির কাছেই জমা রয়েছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি।

২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি হুমায়ুন আহম্মেদ, শতদল সমিতির মো.

মোস্তাফিজ, স্বদেশের আনিছুর রহমান ও নবদীপ সমিতির ইব্রাহিম খলিল দীর্ঘদিন আত্মগোপনে রয়েছেন। তাঁদের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান আল মামুন বলেন, সমিতিগুলোর গ্রাহকেরা থানার সামনে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, যাতে তাঁরা সড়ক ছেড়ে দেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম দ রগঞ জ কর মকর ত র গ র হক গ র হক র অবস থ ন র স মন

এছাড়াও পড়ুন:

ভিউ ব্যবসায়ী সাংবাদিক পরীমণিকে রুটিরুজির অংশ বানিয়েছে: শেখ সাদী

ভিউ ব্যবসায়ী সাংবাদিক পরীমণিকে তাদের রুটিরুজির অংশ বানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কণ্ঠশিল্পী শেখ সাদি।  সম্প্রতি পরীমণির বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলেছেন পিংকি আক্তার নামের এক গৃহকর্মী। এ নিয়ে ঢাকার ভাটারা থানায় অভিযোগও করেছেন সেই গৃহকর্মী। পরীমণি ও গৃহকর্মীর এই ইস্যুতে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। এমন অবস্থায় নায়িকার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর কথিত প্রেমিক তরুণ গায়ক শেখ সাদী। পিংকি আক্তারকে তিনি মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়ে  ভিউ ব্যবসায়ী সাংবাদিকদের সমালোচনা করেছেন এই গায়ক। 

বেশ কয়েক মাস ধরেই নায়িকা পরীমণির সঙ্গে নাম জড়িয়েছেন শেখ সাদী। প্রায় সময় তাদের একসঙ্গে দেখা মেলে।  দুজনের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, তাঁরা দুজন প্রেমের সম্পর্কে আছেন। পরীমণি ও শেখ সাদীর প্রসঙ্গটি প্রথম আলোচনায় আসে কয়েক মাস আগে, ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। এদিন পরীমণি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে এলে জামিনদার হন শেখ সাদী। এর পর থেকে পরীমণি ও শেখ সাদী দারুণভাবে চর্চায় আসেন। 

শেখ সাদী নিজের ফেসবুক পোস্টে কয়েকটি প্রশ্ন রেখে লিখেছেন, ‘একটু ভাবেন তো, অনলাইনে আপনার ছবি পোস্ট করে একজন জানাল, আপনি একজন রেপিস্ট! যার কোনো প্রমাণ নেই এবং ঘটনাটা অবাস্তব। এটা দেখার পর নিশ্চয়ই আপনার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠবে। ধরুন, এই পরিস্থিতিতে আপনি কোনোভাবেই সে পোস্ট সরাতে পারছেন না। মানুষ আপনার বাবা-মাকে ট্যাগ করছে। আপনার আত্মীয়স্বজনকে ট্যাগ করছে। আপনার পাশের বাসায় থাকা লোকটাও তা শেয়ার করে ছি ছি করছে। কিন্তু আপনার কিচ্ছু করার নাই। আপনি কয়জনকে বোঝাবেন? মিডিয়ার এই ভিউ ব্যবসার ফাঁদে বন্দী হয়ে যদি আপনার সম্মানহানি হয়, আপনার করারও কিছু থাকে না। তখন আসলে আপনার পরিস্থিতিটা কী হতে পারে, একবার কি ভেবেছেন?’

পরীমণির সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করে ফেসবুক পোস্টে শেখ সাদী লিখেছেন, ‘আপনাদের জীবনে এমনকি কখনো হয় নাই যে আপনি কোনো কাজ ঠিকমতো করার পরও আপনার প্রতি ক্ষোভ বা জেদের বশবর্তী হয়ে মিথ্যা ছড়ানো হয়েছে? সত্য জানার আগেই মিডিয়ার কিছু ক্ষোভ বা বানোয়াট গল্পকে আপনি সত্য ধরে নিয়ে পরীকে বুলিং করছেন। একবারও কি মনে হলো না, সে একজন প্রতারক বা বড় মাপের মিথ্যাবাদী? সেটা যাচাই ছাড়াই সস্তা ভিউয়ের জন্য এসব প্রচার করলেন। এখানে তো আমার বা সৌরভের কথা আসার প্রশ্নই আসে না। তাই এটা পরিষ্কার যে উক্ত ঘটনার মূল উদ্দেশ্য পরীকে হেয় করা। আর পরীর সঙ্গে আমি ও আমার পরিবার, মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি, যেটা আমি আর আমার পরিবার ডিজার্ভ করি না। পরী আপনাদের ভালোবাসার জন্যই আজ একজন সুপারস্টার। কিন্তু তার উপহারস্বরূপ যেকোনো বিষয়ে তার ব্যক্তিগত জীবনকে টেনে তাঁকে হেয় করার চেষ্টা করা হয়! কিছু ভিউ ব্যবসায়ী সাংবাদিক পরীর জীবনের খবরকে বানিয়েছে তাদের রুটিরুজি অংশ! তারা ভুলে যায়, নায়িকা চরিত্রের বাইরেও পরী একজন নারী, একজন মা ও সবার ঊর্ধ্বে সে একজন মানুষ।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ