গরমে ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস খাওয়া কি ঠিক
Published: 6th, April 2025 GMT
বাজারে অহরহ পাওয়া যাচ্ছে ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস। বিদেশে অনেক আগে থেকে এর প্রচলন থাকলেও আমাদের দেশে সাম্প্রতিক কালে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই গরমের সময় এসব পানীয় গ্রহণ করছেন, অনেকেই আবার শক্তি জোগানের উৎস হিসেবে এগুলো নিয়মিত পান করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন খুব সহজেই আকর্ষণ করছে সাধারণ জনগণকে। কিন্তু আসলেই কি এসব ড্রিংকস বা পানীয় শরীরের জন্য নিরাপদ?
‘ইলেকট্রোলাইট’ কীশরীরের বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজ নিয়ন্ত্রণ ও সম্পন্ন করতে ‘ইলেকট্রোলাইট’ বা লবণ খুব জরুরি। যেমন শরীরে পানি ও অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য বজায় রাখা, বিভিন্ন কোষের মধ্যে পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেওয়া এবং সেখান থেকে বর্জ্য অপসারণে সহায়তা করা, স্নায়ু, পেশি, হৃদ্যন্ত্র ও মস্তিষ্কের কার্যক্রম অক্ষুণ্ন রাখা, বিভিন্ন কোষের ক্ষয়পূরণ করা ইত্যাদি।
‘ইলেকট্রোলাইট’ ড্রিংকস কীসহজ ভাষায় যদি বলতে হয়, ‘ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস’ হলো খনিজ উপাদানের সমষ্টি, যা পানিতে দ্রবীভূত হয়ে খনিজ শক্তি বহন করে। যে খনিজ লবণগুলো সাধারণত পাওয়া যায়, সেগুলো হলো—সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকসে পানি ও বিভিন্ন ইলেকট্রোলাইট, যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও চিনি থাকে। ইলেকট্রোলাইট পানীয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো আপনাকে রিহাইড্রেট (পানিশূন্যতা পূরণ) করতে সাহায্য করা। তাই এ ধরনের পানীয়গুলোর বেশির ভাগেরই মূল উপাদান পানি। পানীয়র উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন পরিমাণে চিনি ও ইলেকট্রোলাইট যোগ করা হয়।
ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস খাওয়া কি নিরাপদযাঁরা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন ও শক্তি বাড়াতে চান, তাঁদের কাছে ‘ইলেকট্রোলাইট’যুক্ত পানীয় বেশ জনপ্রিয়। কারণ, শারীরিক পরিশ্রম ও ঘামের কারণে দেহ থেকে খনিজ লবণ বেরিয়ে যায়। অনেকে মনে করেন, এ ধরনের ঘাটতি পূরণে এনার্জি ড্রিংকসের বিকল্প নেই। বিজ্ঞাপনগুলোতেও এসব পানীয় কোম্পানিগুলো সে রকম ইঙ্গিত দিয়েই এর প্রচারণা করে।
আবার আমাশয় কিংবা ডায়রিয়া হলেও শরীর থেকে ইলেকট্রোলাইট বের হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রেও অনেকে নরমাল স্যালাইন না খেয়ে ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস খেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কারণ, এগুলো তুলনামূলকভাবে স্বাদের দিক থেকে মজাদার। এসব পরিস্থিতিতে দেহের খনিজ উপাদানের ঘাটতি পূরণের জন্য ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস খাওয়া যেতে পারে।
আপনি যদি পর্যাপ্ত পানি পান করেন এবং প্রস্রাব স্বাভাবিক থাকে, তবে নিয়মিত ইলেকট্রোলাইট পানীয় খাওয়ার প্রয়োজন নেই। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের যে পরিমাণ পানি গ্রহণ করা দরকার, এর চেয়ে বেশি তরল হারালে এবং ডিহাইড্রেটেড (পানিশূন্য) হয়ে গেলে এর সঙ্গে সঙ্গে শরীর থেকে ইলেক্ট্রোলাইটও কমে যায়। ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে গাঢ় হলুদ রঙের প্রস্রাব, চরম তৃষ্ণা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা ও বিভ্রান্তি। প্রচণ্ড গরমে ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এই সময়ে ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস খেতে পারেন।
প্রচণ্ড গরমে থাকা, ব্যায়াম করা, বমি বা ডায়রিয়া হলে সাধারণ পানির পাশাপাশি প্রয়োজন অনুসারে ইলেকট্রোলাইট পানীয় খাওয়া যেতে পারে।
তবে কোনো প্রকার ঘাটতি ছাড়া বা এমন কোনো পরিবেশ, যেখানে শরীর থেকে পানি বা লবণ যাওয়ার সুযোগ নেই, তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকস খাওয়ার দরকারই নেই। প্রয়োজনের বাড়তি ইলেকট্রোলাইট বরং শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
তা ছাড়া কিছু মানহীন কোম্পানির এসব ড্রিংকস তৈরি করার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। সাম্প্রতিক কালে এ রকম কিছু অনুমোদনহীন কোম্পানির পানীয় নিষিদ্ধ হয়েছে।
সুতরাং, এসব ড্রিংকস গ্রহণ করার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অনুমোদিত ও মানসম্মত কি না, তা বাছাই করে নিতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক: ডা.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ দ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন
নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮০০-৯০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে শুধু স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোকে মূলধন জোগান দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটের স্টার্টআপ কানেক্ট সেশনের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। এ বিষয়ে শিগগির একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও জানান গভর্নর। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আজ সোমবার চারদিনব্যাপী বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মলেন শুরু হয়েছে।
এদিন ‘এমপাওয়ারিং ইনোভেশন কানেক্টিং অপরচ্যুনিটি’ শিরোনামে স্টার্টআপ কানেক্ট সেশনের মাধ্যমে চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সেশনে দেশি-বিদেশি তরুণ ও উদ্ভাবনী উদ্যোক্তারা অংশ নেন।
সেশনে শেয়ারট্রিপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও সাদিয়া হকের সঞ্চালনায় একটি উচ্চ স্তরের প্ল্যানারি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, আইসিটি বিভাগের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তাইয়্যেব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, আইসিটি বিভাগের সচিব এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান শিশ হায়দার চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনা তুলে ধরেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তানভীর আলী। প্রবন্ধে বলা হয়, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে উদ্ভাবনী স্টার্টআপ উদ্যোগের চাহিদা বাড়ছে। তবে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় দেশে এখনো এই খাতে বিনিয়োগ কম।
সেশনে আহসান এইচ মনসুর বলেন, নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে তার অর্থ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।
এ সময় নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ব্যবসা করার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স পাওয়াসহ সরকারি লালফিতার দৌরাত্ম্য বেশি। প্রতিবছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।
তিনি আরও বলেন, ৪০ দেশের ৫ শতাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। এসব বিনিয়োগকারীকে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরিয়ে দেখানো হবে।
বাংলাদেশে উদ্ভাবনী উদ্যোক্তার অভাব নেই বলে মন্তব্য করেন বিডার চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, স্টার্টআপ তহবিলের সংকটে নতুন উদ্যোক্তারা ব্যবসা শুরু করতে পারেন না। এ কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংক ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার স্টার্টআপ তহবিল গঠন করতে যাচ্ছে।
এর আগে গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সম্মেলনের বিস্তারিত জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
তিনি জানান, প্রথম দিন দুটি ট্র্যাকে অনুষ্ঠান হবে। প্রথম ট্র্যাকে ৬০ জনের বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীকে নিয়ে একটি স্পেশাল ফ্লাইট চট্টগ্রাম যাবে। সেখান থেকে কোরিয়ান ইপিজেড ও মিরসরাইতে স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শন শেষে রাতে ফিরে আসবেন তারা।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও জানান, যারা যাচ্ছেন তারা হলেন; সেই সব উদ্যোক্তা যারা মনে করছেন, তাদের সেখানে একটি কারখানা স্থাপন করতে হবে। তাদের জায়গা-জমি লাগবে। তাদের জন্য আমরা কী ধরনের সাপোর্ট বা সিস্টেম তৈরি করতে পারি, তা তারা সরেজমিনে দেখবেন। অন্যদিকে, আজ সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টার্টআপ কানেক্ট নামে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি রয়েছে। সেখানে যেসব আরলি স্টেজ স্টার্টআপ এবং ভেঞ্চার বিনিয়োগকারী আসছেন তাদের মধ্যে ম্যাচ মেকিং ইভেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও প্যানেল হবে। সারাদিন স্টার্টআপ ইভেন্টকে ফোকাস করা হবে।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকালের দিকে বিনিয়োগকারীরা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে যেখানে জাপানি ইকোনমিক জোন রয়েছে সেখানে সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। তারা সেখানের কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে কী ধরনের কর্মকাণ্ড হচ্ছে- তা বুঝে তাদের বিনিয়োগের জন্য কতটুকু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা দেখবেন। দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বব্যাংক ও আইএলওর সঙ্গে কিছু অ্যানগেজমেন্ট রয়েছে। তাদের এফডিআই সম্পর্কিত কিছু ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। বুধবার (৯ এপ্রিল) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও সারাদিন একাধিক (৩-৪টা) প্যারালাল অনুষ্ঠান চলবে।