ঈদে সরকারি হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসক থাকেন ছুটিতে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের গর্ভবতী নারীরা ডেলিভারি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। কিন্তু এবার নয় দিনের টানা ছুটিতে সিলেট বিভাগের ১৫০টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবায় বিঘ্ন ঘটেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা জানিয়েছেন এবার ঈদের ছুটিতে ৩২৮টি নরমাল ডেলিভারি করা হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ওই সময়ে ১ হাজার ৩১৭ জন নারীকে গর্ভকালীন ও প্রসবোত্তর সেবা দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়। শনিবার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ঈদের ছুটি গতকাল শনিবার শেষ হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসহ ১৫০টি কেন্দ্রে ৩২৮ জন নারী নরমাল সন্তান প্রসব করেছেন। 
তাছাড়াও গর্ভকালীন সেবা ৭৩৯টি, প্রসবোত্তর সেবা ৪১৪ টিসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিশোর কিশোরী ও সাধারণ রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে।

বিভাগীয় পরিবার কল্পনা অফিসের সহকারী পরিচালক আবুল মনসুর আসজাদ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জানিয়েছেন এবার ছুটি লম্বা ছিল। মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ছুটিতে বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়েছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ঈদের ছুটিতে সেবা প্রদানও অব্যাহত রাখা হয়েছে। এবার নরমাল ডেলিভারি বেশি হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কল য ণ ক ন দ র ঈদ র ছ ট পর ব র নরম ল

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ট্রেলিয়ায় লেবারই টিকে যাবে না নতুন কেউ আসবে

অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তপ্ত বাতাবরণ তৈরি করেছে আগামী ৩ মের ফেডারেল নির্বাচন। এই নির্বাচন শুধু একটি সরকার পরিবর্তনের প্রশ্ন নয়, বরং দেশটির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। নির্বাচনী প্রচারের শেষ পর্যায়ে এসে লেবার ও লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে। অবশ্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজের নেতৃত্বাধীন লেবার সরকার তাদের প্রথম মেয়াদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেছে। স্বাস্থ্য খাতে রেকর্ড পরিমাণ ডলার বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে ২৩ শতাংশ অগ্রগতি এবং সর্বনিম্ন মজুরি বৃদ্ধি তাদের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। তবে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা আছে। অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে গৃহঋণের চাপ ৪০ শতাংশ বেড়েছে, যা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলাকে তাদের প্রধান এজেন্ডা হিসেবে তুলে ধরেছে। তাদের প্রস্তাবিত আয়কর কমানোর পরিকল্পনা ও অভিবাসন কোটায় ২০ শতাংশ কাটছাঁটের ঘোষণা কিছু ভোটারকে আকর্ষণ করছে। বিশেষ করে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া ও কুইন্সল্যান্ডের গ্রামীণ এলাকায় তাদের ঐতিহ্যগত শক্ত অবস্থান রয়েছে। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বাতিলের ঘোষণা কিছুটা বিপাকে ফেলেছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।

সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন নির্বাচনী গবেষণায় দেখা গেছে, ‘এবারের নির্বাচনের ফলাফল নির্ভর করবে মূলত ১৮টি দোদুল্যমান আসনের ভোটারদের সিদ্ধান্তের ওপর। এই আসনগুলোর মধ্যে ১২টিতেই বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে লেবার পার্টির ভোটের ব্যবধান সামান্য।’ নিউজপোলের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দুই দলের মধ্যে পছন্দের ভিত্তিতে লেবার ৫১ শতাংশ ও কোয়ালিশন ৪৯ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উত্থান এবারের নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ২০২২ সালের তুলনায় তাঁরা বেশি সংগঠিত হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও রাজনৈতিক স্বচ্ছতার বিষয়গুলো নিয়ে তাঁদের তৎপরতা শহুরে শিক্ষিত ভোটারদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। অভিবাসন আইনজীবী মোহাম্মদ নিজামউদ্দিনের মতে, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কোয়ালিশনের চেয়ে বেশি আসনে লেবারকে চ্যালেঞ্জ করছেন, যা সরকার গঠনের সমীকরণকে জটিল করে তুলতে পারে।’

জীবনযাত্রার ব্যয়সংকট নিয়ে ব্রিজবেনে বসবাসরত মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ী থমাস এল্ডারসন বলেন, ‘সপ্তাহে ২০০ ডলার বেশি খরচ হচ্ছে শুধু মুদিপণ্যের জন্য। আমরা এমন সরকার চাই, যারা শুধু কথা নয়, কাজ দেখাবে।’ এই ধরনের সাধারণ মানুষের হতাশা বিরোধী দলকে সুবিধা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে তরুণ ভোটারদের একটি বড় অংশ জলবায়ুনীতিকে প্রধান ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করছে। সিডনি ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারিয়া খানের মতে, ‘আমাদের প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে পরিবেশবান্ধব নীতির ওপর। লেবার এ ক্ষেত্রে কিছু ভালো কাজ করেছে, কিন্তু আরও বেশি প্রয়োজন।’

নির্বাচনী প্রচারণার শেষ পর্যায়ে এসে উভয় দলই নারী ভোটারদের আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। লেবার পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে অতিরিক্ত ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে, অন্যদিকে কোয়ালিশন কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য নতুন কর রেয়াতের প্রস্তাব রেখেছে।

ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর বদরুল আলম খানের বিশ্লেষণ হলো: লেবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে, তবে তা খুবই সীমিত আসনে। আবার ঝুলন্ত সংসদের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনী ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অর্থনৈতিক সংকটের সময় ভোটারেরা সাধারণত সরকার পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকে থাকে।

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় প্রেসক্লাবে ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ২০২৫ সালের ফেডারেল নির্বাচনের সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরেন। ‘২০২৫ সালের নির্বাচনের চাবিকাঠি- বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক এই আলোচনায় অংশ নেন অস্ট্রেলিয়ার তিন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। জেসিকা এলগুড, যিনি বিশ্ব বিখ্যাত গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইপসোসের অস্ট্রেলীয় শাখার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কোস সামারাস একজন প্রখ্যাত রাজনৈতিক কৌশলবিদ এবং রেডব্রিজ গ্রুপের কৌশলগত পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন, যিনি পূর্বে লেবার পার্টির নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনা করেছেন। তৃতীয় বক্তা শন র‍্যাডক্লিফ অ্যাকসেন্ট রিসার্চের প্রধান গবেষক হিসেবে ভোটার আচরণ ও রাজনৈতিক প্রবণতা বিশ্লেষণে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন।

এই বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী নির্বাচনে বেশ কয়েকটি বিষয় মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। তরুণ ও প্রবীণ ভোটারদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিভাজন নির্বাচনী ফলাফল নির্ধারণে বিশেষ প্রভাব ফেলবে বলে তাঁরা মনে করেন। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি বর্তমানে ভোটারদের প্রধান উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন, নারী ও তরুণ ভোটারদের অবস্থান এবং বিভিন্ন প্রান্তিক আসনের ভোটারদের মনোভাব নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তাঁদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বর্তমান পরিস্থিতিতে লেবার পার্টি কিছুটা এগিয়ে থাকলেও এখনো অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোটার এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশেষ করে আবাসন–সংকট এবং অর্থনৈতিক চাপ সামাল দেওয়ার সক্ষমতা এই নির্বাচনের মূল ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই নির্বাচন শুধু সরকার পরিবর্তনের প্রশ্নই নয়, বরং অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে নতুন এক প্রজন্মের উত্থানেরও সাক্ষী হতে চলেছে। সঙ্গে নারী, তরুণ ও অভিবাসীদের ভোটও ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

একটি বিষয় নিশ্চিত, অস্ট্রেলিয়ার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আবারও প্রমাণ করবে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর সম্ভব। নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং সামাজিক সংহতি রক্ষা করা হবে নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে এই লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, শেষ মুহূর্তে ভোটারদের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে মসনদে কে বসবেন। যে দল জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে পারছে, তারাই এগিয়ে থাকবে ভোটের মাঠে, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

কাউসার খান প্রথম আলোর সিডনি প্রতিনিধি ও অভিবাসন আইনজীবী

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ