রহস্যঘেরা পারভিন ববির জীবনের অজানা ১০ তথ্য
Published: 6th, April 2025 GMT
অনেক চলচ্চিত্র সমালোচকের মতে পারভিন ববি ভারতীয় চলচ্চিত্রে পশ্চিমা হাওয়া এনেছিলেন। আশির দশকে খ্যাতির শীর্ষে ছিলেন। শরীরী ভাষা ও পোশাকে নিজের সময় তথা সমসাময়িক নায়িকাদের থেকে অনেক এগিয়ে ছিলেন তিনি। সহজ স্বাচ্ছন্দ্যে পর্দায় রোমাঞ্চ করতে পেরেছিলেন সে সময়ের শীর্ষ সব নায়কদের সঙ্গে। কিন্তু একসময় ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কের জটিলতা পারভিনকে ঠেলে দেয় নেশা আর মানসিক রোগের অন্ধকারে। ৪ এপ্রিল ছিল পারভিন ববির জন্মদিন।
১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল গুজরাটের জুনাগড়ে জন্ম পারভিন ববির। মা–বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। পারভিনের বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন বাবাকে হারান তিনি।
আহমেদাবাদের মাউন্ট কারমেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে স্কুলের পাঠ শেষের পর সেখানে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক শেষ করেন পারভিন।
অবশ্য পারভিন ববির জন্মদিন নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সে অর্থে তেমন লেখালেখিও হয়নি।
বরং তাঁর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুই যেন বেশি চর্চিত। দিনটি ছিল ২০০৫ সালের ২০ জানুয়ারি। মৃত্যুর দিন তিনেক পর পচন ধরা নিথর দেহটা উদ্ধার করা হয়েছিল। নিঃসঙ্গ পারভিন এভাবেই চলে গিয়েছিলেন। না জানি কত অজানা কথা সঙ্গে নিয়ে গেছেন তিনি।
টাইম ম্যাগাজিনেপারভিন ববিই প্রথম বলিউড তারকা, যিনি টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে মডেল হয়েছেন। ১৯৭৬ সালের ১৯ জুলাই সাময়িকীটির ইউরোপীয় সংস্করণের প্রচ্ছদে দেখা যায় তাঁকে।নায়কের পাশাপাশি১৯৭২ সালে মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন পারভিন। তখনই সুযোগ পান অভিনয়ের। পরের বছর মুক্তি পায় তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘চরিত্র’। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘দিওয়ার’। অমিতাভ বচ্চন ও শশী কাপুরের সঙ্গে এই ছবিতে অনিতা চরিত্রে দেখা গিয়েছিল পারভিনকে। এই ছবির হাত ধরেই বলিপাড়ার প্রথম সারির নায়িকা হিসেবে নিজের জায়গা করে নেন। ‘দিওয়ার’, ‘নমক হালাল’, ‘ওমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘শান’-এর মতো সুপারহিট ছবির সাফল্যের বড় অংশীদার ছিলেন তিনিও।সাবেক প্রেমিক পরিচালক মহেশ ভাট যদিও চলচ্চিত্র কিংবা সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পারভিনের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানিয়েছেন, কিন্তু এরপরও রহস্যেই থেকে গেছে পারভিন ববির জীবন।
ইকোনমিক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রয়াত সাবেক প্রেমিকা সম্পর্কে বলেন, ‘বলিউড রূপকথার গল্পের মতো। শিক্ষা পেলেই তুমি আর কখনো কষ্ট পাবে না। এই মদ, গোলাপ এবং পারভিনের সঙ্গে চোখের জল ফেলা, সত্তরের দশকের এই সুপারস্টার মেয়েটি ছিল ম্যাগাজিন গার্ল। গুজরাটের জুনাগড়ের মেয়েটি বিশ্বব্যাপী ফ্যাশনকে খুব সাধারণভাবেই তুলে ধরেছেন।’
পারভিনের প্রেমপ্রথমে অভিনেতা-পরিচালক ড্যানি ডেনজংপার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন পারভিন। তবে কখনোই এই সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেননি ড্যানি। ড্যানির পর অভিনেতা কবির বেদির প্রেমে পড়েছিলেন পারভিন, তবে সেই প্রেমও টেকেনি। কবির বেদির সঙ্গে ‘বিচ্ছেদে’ বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন ববি। এমনকি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তাঁর প্রেমের খবরও চাউর হয়েছিল সে সময়। পরিচালক মহেশ ভাটের সঙ্গে শেষমেশ প্রণয়ে জড়ান। ১৯৭৭ সালে বিবাহিত মহেশের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। মহেশ ও পারভিনের প্রেমকাহিনি বলিপাড়ার অন্যতম চর্চিত বিষয় ছিল। মহেশ সেটা বরাবরই স্বীকার করেছেন।পারভিন ববি.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈঠকের উভয় সংকট
ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তিনি একতরফাভাবে কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে এই চুক্তিটি হয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের। এর সঙ্গে যুক্ত হয় জার্মানি। দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ট্রাম্প ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে ইরানের ওপর জোর খাটান।
আল-আকসা ফ্লাডের পর ইরান তার রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তির অনেক কিছুই খুইয়েছে। ইরানের ক্ষমতা খর্ব হওয়ার কারণ তিনটি। প্রথমত, ইরানের আঞ্চলিক প্রধান মিত্র সিরিয়ার বাথ পার্টি ক্ষমতা হারিয়েছে। সিরিয়ার বিরোধী দল গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে এবং সেখানে ইরানের প্রভাব কমে যায়। দ্বিতীয়ত, ইসরায়েল হিজবুল্লাহকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবাননে হিজবুল্লাহ ছিল প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি, যারা ওই অঞ্চলে ইরানের প্রক্সি শক্তি। তৃতীয়ত, ইসরায়েল সরাসরি ইরানকে এবং মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা ইরানি বাহিনীকে নিশানা করে।
ফলস্বরূপ ইরান এক নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। বর্তমানে ইরানের কৌশল হলো আত্মরক্ষামূলক। ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের ফলে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়। গত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে চিঠি পাঠান, যেখানে ইরানের সঙ্গে সরাসরি পারমাণবিক আলোচনা শুরুর আহ্বান আছে। ওমানের মাধ্যমে চিঠির জবাব দেয় ইরান। এভাবে ১২ এপ্রিল ওমানের রাজধানী মাসকটে প্রথম দফায় পরোক্ষভাবে পারমাণবিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের দিক থেকে বলা হয়, আলোচনা ছিল ‘ইতিবাচক ও গঠনমূলক’।
দ্বিতীয় দফায় উভয় পক্ষ ১৯ এপ্রিল ইতালির রাজধানী রোমে আলোচনায় বসে। সেখানে ইরানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি; যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অংশ নেন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক ট্রাম্পের বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোমে বৈঠকের সময় বলেন, ‘আমরা কিছু নীতি ও লক্ষ্যের ব্যাপারে ভালো বোঝাপড়ার মধ্যে পৌঁছেছি।’ ২৬ এপ্রিল ওমানের মাসকটে তৃতীয় দফার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ইরানের জন্য সমস্যাজনক এই জন্য যে, এ পদক্ষেপ ইরানের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক বয়ানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যা মূলত আমেরিকাবিরোধী মনোভাবের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ইরান বর্তমানে বড় ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় এটা স্পষ্ট– রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে হয়েছে। এ অবস্থা ইরানি শাসন ব্যবস্থার জন্য আরও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
স্পষ্টতই ইরান উভয় সংকটের মধ্যে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করলে ইরানের যেমন অনেক সুবিধা, তেমনি অনেক অসুবিধাও আছে। ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছালে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হতে পারে এবং ইরান তার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে পারবে। এমনকি ইরান যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বিনিয়োগও আকর্ষণ করতে সক্ষম হতে পারে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে দেশীয় রাজনৈতিক চাপও কমাতে পারে। বিপরীতে, দুই দেশের চুক্তির মাধ্যমে দেশীয় প্রেক্ষাপটে ইরানি শাসন ব্যবস্থা দুর্বল হতে পারে। ইরান অস্তিত্ব সংকটেও পড়তে পারে। ইরানি জনগণের একটি বড় অংশের দৃষ্টিতে তখন শাসন ব্যবস্থা বৈধতার সংকটে পড়বে। কারণ ইরানের শাসন ব্যবস্থা মূলত তার পশ্চিমাবিরোধী রাজনৈতিক বক্তব্যের মাধ্যমে বৈধতা পায়।
চুক্তিতে না পৌঁছার সংকটও কম নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছতে না পারলে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল উভয়কে মোকাবিলা করতে হবে। ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ালে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের নিশানায় পরিণত হতে পারে, যা তার শাসন ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা আরও নড়বড়ে করে দিতে পারে।
তবে দৃশ্যত মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের চূড়ান্ত চূক্তিতে পৌঁছা অসম্ভব। কারণ উভয় দিকের প্রত্যাশা ভিন্ন। একদিকে ট্রাম্প চান ইরানের পারমাণবিক শক্তি পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে। অন্যদিকে ইরান সীমিত পর্যায়ে তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে নিতে চায়। পাশাপাশি ইরান এই ঘোষণাও দিয়েছে, তারা পারমাণবিকের বাইরের বিষয়ে আলোচনা করবে না। অধিকন্তু উভয় দেশের মধ্যকার অবিশ্বাসও চুক্তি সফল হওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
মুহিত্তিন আতামান: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, সোশ্যাল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি অব আঙ্কারা; ডেইলি সাবাহ থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক