ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, গত ২৩ মার্চ দক্ষিণ গাজায় ১৫ জন জরুরি স্বাস্থ্যকর্মী হত্যার ঘটনায় তাদের সেনারা ভুল করেছে। শনিবার (৫ এপ্রিল) ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের ভুল স্বীকার করে একটি বিবৃতি দিয়েছে। 

রবিবার (২৬ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৩ মার্চ রাফাহ শহরের কাছে প্যালেস্টাইনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস)-এর অ্যাম্বুলেন্স বহর, জাতিসংঘের একটি গাড়ি ও গাজার সিভিল ডিফেন্সের একটি ফায়ার ট্রাক লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনারা।  

আরো পড়ুন:

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন ১০০ শিশু হতাহত: জাতিসংঘ

কলকাতায় ঈদের দিন স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে মিছিল

প্রথমে ইসরায়েল দাবি করে, গাড়িগুলো আলো বা ফ্ল্যাশিং লাইট ছাড়াই সন্দেহজনকভাবে রাতের অন্ধকারে এগিয়ে আসছিল। এছাড়া তাদের চলাচল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত ছিল না।

তবে নিহত এক প্যারামেডিকের মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়িগুলোর আলো চালু ছিল এবং তারা আহতদের সাহায্য করতে যাচ্ছিল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, কমপক্ষে ছয়জন চিকিৎসক হামাসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এর কোনো প্রমাণ দেয়নি। তারা স্বীকার করেছে, সেনারা যখন গুলি চালায় তখন তারা নিরস্ত্র ছিল।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের শেয়ার করা মোবাইল ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, ভোর হওয়ার ঠিক আগে যখন গুলি শুরু হয়, যানবাহনগুলো রাস্তায় কোনো সতর্কতা ছাড়াই দাঁড়িয়ে ছিল।

ফুটেজটি পাঁচ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চলে। এতে রেফাত রাদওয়ান নামে স্বাস্থ্যকর্মীকে তার শেষ প্রার্থনা করতে শোনা গেছে এবং ইসরায়েলি সেনাদের গাড়ির দিকে এগিয়ে আসার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

শনিবার সন্ধ্যায় আইডিএফের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, এর আগে সেনারা হামাসের তিনি সদস্য বহনকারী একটি গাড়িতে গুলি চালিয়েছিল।

পরে অ্যাম্বুলেন্সগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আকাশ থেকে নজরদারি চালানো বাহিনী জানায়, গাড়িগুলো ‘সন্দেহজনকভাবে’ এগিয়ে আসছে’।

অ্যাম্বুলেন্সগুলো যখন হামাসের গাড়ির পাশে থামে, তখন সেনারা ধরে নেয় যে তারা হুমকির মুখে এবং গুলি চালায়। যদিও কোনো প্রমাণ ছিল না যে জরুরি দলটি অস্ত্রধারী ছিল।

ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায়, গাড়িগুলো ছিল চিহ্নিত এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিফলকযুক্ত পোশাক পরেছিলেন।

ইসরায়েল স্বীকার করেছে যে, গাড়িগুলো আলো ছাড়া এসে পৌঁছানোর দাবি করা তাদের পূর্বের বক্তব্য ভুল ছিল এবং প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট সেনাদের দায়ী করা হয়েছে।

আইডিএফ জানায়, ১৫ জন নিহত স্বাস্থ্যকর্মীর মরদেহ বন্যপ্রাণীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য বালিতে চাপা দেওয়া হয়েছিল এবং রাস্তাটি পরিষ্কার করতে পরদিন গাড়িগুলো সরিয়ে ও পুঁতে ফেলা হয়েছিল।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এলাকাটিতে নিরাপদ প্রবেশ নিশ্চিত করতে না পারায় এবং ঘটনাস্থল শনাক্ত করতে না পারায় মরদেহগুলো এক সপ্তাহ পর উদ্ধার করা হয়। নিহত রেফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোনে পুরো ঘটনার ফুটেজ পান উদ্ধারকারীরা।  

ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা মৃত্যুর আগে কোনো চিকিৎসককে হাতকড়া পরানো হয়নি বলে দাবি করেছেন এবং বলেছেন যে তাদের খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়নি, যেমনটি কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এই সপ্তাহের শুরুতে, একজন জীবিত স্বাস্থ্যকর্মী বিবিসিকে বলেছিলেন যে অ্যাম্বুলেন্সগুলোর আলো জ্বলছিল এবং তার সহকর্মীদের কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।

আইডিএফ ‘ঘটনার পূর্ণ তদন্ত’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এবং বলেছে, ঘটনার ধারাবাহিকতা ও এর ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছে।

রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল স ব স থ যকর ম স ব ক র কর ছ ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভিটামিনসমৃদ্ধ ভোজ্যতেল পাওয়ায় বাধা খোলা ড্রাম

আগামী প্রজন্ম রোগমুক্ত রাখতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেলপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ড্রামে খোলা তেল বাজারজাত করা একটি বড় বাধা। একই সঙ্গে তেলে ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।

গতকাল সোমবার রাজধানীর বাংলামটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত ‘সবার জন্য ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।

গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এই কর্মশালা আয়োজন করে। কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন-এ এবং দু’জন শিশু ভিটামিন-ডির ঘাটতিতে ভুগছে। যদিও ভোজ্যতেলে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ করতে ২০১৩ সালে আইন করেছে সরকার। আইন অনুযায়ী, ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ।

কর্মশালায় বলা হয়, আইসিডিডিআরবি,র এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশ ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে ভিটামিন-এ নেই, আর ৩৪ শতাংশে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রা। ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন-এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালট্যান্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার, ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথের অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ প্রমুখ।

কর্মশালায় আরও জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়, যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের ড্রামে রাখা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কা থাকে। পুরোনো ড্রামগুলোতে লেবেল না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জুলাই ২০২২-এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২-এর পর থেকে খোলা পাম অয়েল বাজারজাত বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বক্তারা জানান, ভিটামিন-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুর কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন-ডি-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে ভোজ্যতেলে ভিটামিন-এ ও ডি সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজে এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ