উম্মু খালিদ বিনতে খালিদ (রা.) ছিলেন খ্যাতিমান সাহাবি খালিদ ইবনে সাইদ ইবনুল আসের (রা.) মেয়ে। মক্কায় কুরাইশদের নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে দ্বিতীয়বার মুসলিমদের যে-দলটি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন, তার মধ্যে খালিদও ছিলেন। হিজরতে তিনি তাঁর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে নেন। সেখানেই জন্মগ্রহণ করেন আমা বিনতে খালিদ; যিনি উম্মু খালিদ নামে পরিচিত।

খায়বার বিজয়ের পর আবিসিনিয়ায় যাওয়া মুসলিমরা মদিনায় চলে এলে খালিদ ইবনে সাঈদ (রা.

)-ও পরিবার নিয়ে মদিনায় আসেন। উম্মু খালিদ মা-বাবার মুখে রাসুলের (সা.) কথা শুনেছিলেন। এবার তিনি তাঁকে স্বচক্ষে দেখতে পান। ফলে তিনিও হয়ে যান সাহাবি। তখন তাঁর বয়স কতো হবে? ছয় বা সাত বছর।

একদিন রাসুল (সা.)-কে কিছু কাপড় উপহার দেওয়া হলো। একটি ছিল নকশাদার কালো চাদর। তিনি সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই চাদরটি কাকে দেব?’ সাহাবিরা ভদ্রতাবশত কিছু বললেন না। রাসুল (সা.) বললেন, ‘উম্মু খালিদকে আমার কাছে নিয়ে এসো।’

আরও পড়ুনতওবা যেভাবে করা যায়১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাসুলের (সা.) নির্দেশে একজন সাহাবি উম্মু খালিদকে নিয়ে এলেন। নকশাকাটা সুন্দর চাদরটি রাসুল (সা.) নিজ হাতে তাকে পরিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করলেন, ‘ব্যবহার করো এবং পুরোনো করো।’

আরবরা ‘ব্যবহার করো এবং পুরাতন করো’ বাক্যটি ‘দীর্ঘজীবী হও’ অর্থে ব্যবহার করে থাকে।

চাদরটি পরার পর রাসুল (সা.) একনজর দেখে নিলেন উম্মু খালিদকে কেমন মানিয়েছে। চাদরের নকশার দিকে তাকিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ‘সানা, সানা ইয়া উম্মু খালিদ।’ অর্থাৎ, ‘সুন্দর, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে উম্মে খালিদ।’

মজার ব্যাপার হলো, ‘সুন্দর’ বোঝাতে তিনি আরবি শব্দ ব্যবহার করেননি। তিনি বলতে পারতেন ‘জামিল’, বা ‘মা আজমালা’। বরং তিনি হাবশি শব্দ ব্যবহার করে বলেছেন, ‘সানা’। উম্মু খালিদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা আবিসিনিয়ায়, তাই তিনি সেখানকার ভাষা জানেন। রাসুল (সা.) তাঁর সঙ্গে সেই ভাষায় কথা বললেন, যে ভাষার সঙ্গে উম্মু খালিদ পরিচিত।

আরও পড়ুনঅর্থ বুঝে নামাজ পড়ার ফজিলত১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আবিসিনিয়া থেকে ফেরার পথে নাজ্জাশি সবাইকে নৌকায় তুলে দেওয়ার পূর্বে বলেছিলেন, ‘আপনারা আমার সালাম রাসুলের কাছে পৌঁছে দেবেন।’ উম্মু খালিদ (রা.) সেই দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নাজ্জাশির সালাম পৌঁছে দেন রাসুলের (সা.) কাছে।

জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবি জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.) আমা বিনতে খালিদ (রা.)-কে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন ওমর ও খালিদ নামে দুই ছেলে। সেই থেকে আমা বিনতে খালিদ (রা.)-কে ডাকা হতো ‘উম্মু খালিদ’ বা খালিদের মা। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৮৪৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪০২৪)

উম্মু খালিদ (রা.) ৯১ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। নারী সাহাবিদের মধ্যে তিনি সর্বশেষ মৃত্যুবরণকারী সাহাবি। (ইবনে হাজার, আল-ইসাবা: ৮/৩৮৫)

আরও পড়ুনযে কারণে দোয়া ইউনুস পড়া হয় ০৯ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর স ন দর

এছাড়াও পড়ুন:

জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে চলে যেতে বলছে না

‘দেশের জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে চলে যেতে বলছে না, বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে’। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে  কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে। জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এখনও বলছে না।  

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।  

নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা সে সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকে নিতে হবে: নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে। তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।  

একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে এগুতে চাই: সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে এগুতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ