দরপতনে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু, তবে মাত্রা কম
Published: 6th, April 2025 GMT
ঈদের দীর্ঘ ৯ দিনের ছুটি শেষে আজ রোববার দেশের শেয়ারবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে। অবশ্য শুরুটা হয়েছে কিছুটা দরপতনে, যা ছিল অনেকটাই প্রত্যাশিত।
গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে বিশ্বের সব দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন, তার প্রেক্ষিতে তাঁর নিজ দেশসহ বিশ্বের প্রায় সব শেয়ারবাজারে দরপতন চলছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারেও দরপতনের আশঙ্কা করছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আশঙ্কার তুলনায় দরপতনের মাত্রা অনেক কম।
সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর আড়াই ঘণ্টা পর দুপুর সাড়ে ১২টায় ৯৬ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৬৪টি দর হারিয়ে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। এ সময় দর অপরিবর্তিত অবস্থায় কেনাবেচা হচ্ছিল ৩০টি।
এতে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২৫ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৯৩ পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে। সূচক পতনের হার ছিল শূন্য দশমিক ৪৮৭ শতাংশ।
এটা স্বাভাবিক সময়েও সূচকে এমন পতন হয়। ফলে আজকের পতনে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না বলে জানান শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।
বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, দরপতন বেশি হচ্ছে বস্ত্র খাতের শেয়ারে। এটা প্রত্যাশিত ছিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য বস্ত্র।
তবে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে এমন তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কম। ফলে শেয়ারবাজারে ট্রাম্পের শুল্কারোপের তেমন প্রভাব পড়ার কারণ দেখছেন না কেউ।
তাছাড়া অতীতের মত এমন সংকটে বাংলাদেশের সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ বাণিজ্যে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে ট্রাম্প বাংলাদেশের তুলনায় অধিক হারে শুল্কারোপ করেছেন।
তাছাড়া শুল্কারোপে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য মূল্য বাড়বে। বিশেষত উচ্চ মূল্যের পণ্যের ক্রয় চাহিদা কমে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে।
এর ফলে বাংলাদেশের উল্টো ব্যবসা বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। কারণ বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যগুলো কম মূল্যের ‘ব্যাসিক প্রোডাক্ট’। ২০০৮ এর মহামন্দায় এমন সুবিধা পেয়েছিল বাংলাদেশ।
এমন ভাবনার প্রতিফলন ছিল আজকের শেয়ারবাজারের লেনদেনে।
দিনের শেয়ার লেনদেন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সকাল ১০টায় দিনের লেনদেনের প্রথম মুহূর্তে প্রি-মার্কেট লেনদেনে ভর করে সূচক নামে কমে উল্টো সামান্য (শূন্য দশমিক ৬৭ পয়েন্ট) বেড়েছিল।
তবে স্বাভাবিক লেনদেন শুরুর প্রথম মিনিটে ১২ পয়েন্ট এবং দ্বিতীয় মিনিটে আরও প্রায় ৮ পয়েন্ট হারায় সূচকটি। এর ১২ মিনিট পর অর্থাৎ সকাল ১০টা ১৪ মিনিটে সূচকটি ৪৪ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৭৪ দশমিক ২০ পয়েন্টে নেমেছিল। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লেনদেনে এটাই ছিল সূচকের সর্বোচ্চ পতন। অবশ্য এর পর সূচক কিছুটা পতন কাটিয়ে উঠেছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মিউচুয়াল ফান্ড খাত ছাড়া বাকি সব খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর হারিয়েছে। তবে তুলনামূলক বেশি দর হারিয়েছে বস্ত্র খাতের শেয়ার।
যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ ইস্যুতে বস্ত্র খাতেই সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক।
দুপুর সাড়ে ১২টায় এ খাতে তালিকাভুক্ত ৫৮ কোম্পানির মধ্যে ৫৬টি দর হারিয়ে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। গড়ে দরপতন হয়েছিল প্রায় ৪ শতাংশ, যা খাতওয়ারি দরপতনের সর্বোচ্চ।
বস্ত্র খাতের বাইরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের দরপতনের হার ছিল ১ দশমিক ৪০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতের শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ, তথ্য-প্রযুক্তি খাতের ১ শতাংশ, চামড়া খাতে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ উল্লেখযোগ্য।
বিপরীতে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের গড় দর ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়েছিল। সিরামিক খাতের দরবৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
একক কোম্পানি হিসেবে দরপতনের শীর্ষে ছিল বস্ত্র খাতের শেয়ার।
সর্বোচ্চ পৌনে ৭ শতাংশ দর হারিয়ে প্রাইম টেক্সের শেয়ার ১৪ টাকায় কেনাবেচা হতে দেখা গেছে।
৬ শতাংশের বেশি দর হারিয়ে এর পরের অবস্থানে থাকা শেয়ারগুলো ছিল- ইভিন্স টেক্সটাইল, এসক্যোয়ার নিট, সাফকো স্পিনিং, জেনারেশন নেক্সট, নিউ লাইন, ড্রাগন সোয়েটার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ।
ঈদের দীর্ঘ ছুটির পর আজ লেনদেনের গতিও কম। প্রথম দুই ঘণ্টায় ডিএসইতে ১৮৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। ঈদের ছুটির আগের শেষ কার্যদিবসে একই সময়ে ২০০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার কেনাবেচা হতে দেখা গেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র দরপতন ল নদ ন শ র শ য় রব জ র দরপতন র র ল নদ ন দর হ র য় পতন র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
সপ্তাহ শেষে ডিএসইর সূচক নেমেছে আবারও ৫ হাজারের নিচে
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ১২৫ পয়েন্ট বা প্রায় আড়াই শতাংশ কমে গেছে। তাতে সূচকটি ছয় মাসের ব্যবধানে আবারও ৫ হাজার পয়েন্টের মাইলফলকের নিচে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৭৩ পয়েন্টে। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ২৮ অক্টোবর ডিএসইএক্স সূচকটি ৪ হাজার ৮৯৯ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।
এদিকে গত ৯ কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের প্রতিদিনই ডিএসইতে সূচক কমেছে। সূচকটি ৫ হাজার পয়েন্টের মাইলফলকের নিচে নেমে আসায় নতুন করে বাজারে আবারও আতঙ্ক ভর করেছে। এ অবস্থায় বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী লেনদেন থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। ফলে লেনদেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহ শেষে ঢাকার বাজারের লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৪ শতাংশ কমেছে। ডিএসইতে গত সপ্তাহ শেষে দৈনিক গড় লেনদেন কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪৪ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহে এই বাজারে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৩৯৯ কোটি টাকার। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ৫৫ কোটি টাকা বা প্রায় ১৪ শতাংশ।
ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ৩৯৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩২৪টি বা ৮২ শতাংশেরই দাম কমেছে। দাম বেড়েছে ৫৭টির বা ১৪ শতাংশের, আর অপরিবর্তিত ছিল ১৫টির বা ৪ শতাংশের। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ছাড়া সব খাতের কোম্পানিরই দরপতন হয়েছে গত সপ্তাহে। ফলে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করে লাভের দেখা পাননি বিনিয়োগকারীরা। সার্বিকভাবে বাজারে রিটার্ন ছিল ২ শতাংশের বেশি ঋণাত্মক।
মন্দা বাজারে গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি শাহজিবাজার পাওয়ার। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৬ টাকা বা প্রায় ১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ৪০ পয়সায়। মূল্যবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল একই খাতের কোম্পানি এনার্জিপ্যাক পাওয়ার। এটির শেয়ারের দাম ৫ দিনে ২ টাকা ৭০ পয়সা বা ১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা ৪০ পয়সায়।
গত সপ্তাহে লেনদেনে শীর্ষ অবস্থানে ছিল বিচ হ্যাচারি। গত সপ্তাহে বাজারের মোট লেনদেনের প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশই ছিল কোম্পানিটির দখলে। প্রতিদিন গড়ে কোম্পানিটির প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যদিও সপ্তাহ শেষে দাম কমার শীর্ষে ছিল কোম্পানিটি। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সাড়ে ৩৮ টাকা বা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৫৮ টাকা ৩০ পয়সায়। আগের সপ্তাহে যার দাম ছিল প্রায় ৯৭ টাকা।
টানা দরপতনের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে রাজধানীর মতিঝিলে বিক্ষোভ করেছেন একদল বিনিয়োগকারী। তাঁরা দরপতন ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের(বিএসইসি) নেতৃত্বেরও অপসারণ দাবি করেন।