কক্সবাজারে আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করা তালিকাভুক্ত ৮ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত নিতে দেশটির জান্তা সরকারের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা। গতকাল শনিবার আশ্রয়শিবিরের অন্তত ১০ জন রোহিঙ্গা নেতা ও ধর্মীয় শিক্ষক, উখিয়া ও টেকনাফের তিনজন জনপ্রতিনিধি এবং দুজন রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা বলেছেন, আরাকান আর্মি যারা রাখাইনের ৮০ শতাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিরোধ আছে। তাদের সম্মতি ছাড়া রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরতে পারবে না।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। আরাকান আর্মির হামলার মুখে গত বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে।

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে গত শুক্রবার বৈঠক করেন মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ইউ থান শিউ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান। বৈঠকে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া তালিকাভুক্ত ৮ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার যোগ্য বলে জানিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। এর বাইরে আরও সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাইয়ের কাজ জরুরি ভিত্তিতে করবে জান্তা সরকার।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য সরকার প্রস্তুত আছে জানিয়ে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, ১ হাজার ১০০ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য ২০২৩ সালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে তিনটি ও টেকনাফের কেরনতলীতে একটিসহ মোট চারটি ট্রানজিট কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল।

মিজানুর রহমান বলেন, ‘২০১৮ সালে আমরা মিয়ানমারকে ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছিলাম। সম্ভবত ওই তালিকা থেকে যাচাই-বাছাই করে জান্তা সরকার ১ লাখ ৮০ হাজারের একটা সংখ্যা বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে। সরকারের সঙ্গে যেহেতু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে একটা বোঝাপড়া হচ্ছে, আমরাও প্রস্তুত আছি প্রত্যাবাসনের বিষয়ে।’

গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উখিয়ার আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের সময় আমরা জানিয়েছি, রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগে সেফ জোন গঠন ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।রোহিঙ্গা নেতা জালাল আহমদ

প্রত্যাবাসনের পরিবেশ নেই

গত বছরের মাঝামাঝি জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় ধরনের সাফল্য পায় আরাকান আর্মি। এরপর বুথিডং, মংডুসহ কয়েকটি এলাকায় রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার খবর আসে। এমন অস্থিতিশীল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে সেখানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন মোটেও সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের। তিনি বলেন, আশ্রয়শিবিরে থাকা সব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরতে রাজি; কিন্তু সেটা হতে হবে টেকসই ও নিরাপত্তার সঙ্গে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য আগে নিরাপদ অঞ্চল (সেফ জোন) গড়ে তুলতে হবে। আরাকান আর্মি সে সুযোগ দেবে মনে হয় না।

উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জালাল আহমদ বলেন, ‘গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উখিয়ার আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের সময় আমরা জানিয়েছি, রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগে সেফ জোন গঠন ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।’

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। আরাকান আর্মির হামলার মুখে গত বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে।

রোহিঙ্গা নেতারা জানান, গত ১৪ মার্চ বিকেলে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে প্রধান উপদেষ্টার আগামী বছর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ঈদ করার ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত ছিলেন রোহিঙ্গারা। কিন্তু রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ এখন নেই।

একই কথা জানান টেকনাফের লেদা আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আলম। তিনি বলেন, ২০২৩ সালে আশ্রয়শিবির থেকে ১ হাজার ১০০ জন রোহিঙ্গাকে রাখাইন রাজ্যে ফেরত পাঠানোর সব কার্যক্রম দুদেশের পক্ষ থেকে সম্পন্ন করা হলেও সেটা সম্ভব হয়নি। রোহিঙ্গাদের বসতি এলাকাগুলো এখন আরাকান আর্মির দখলে। উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক—এই স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু মিয়ানমার রোহিঙ্গাকে তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করেনি এত দিন। এখন জান্তা সরকার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত চাইছে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রত্যাবাসনকৃত রোহিঙ্গাদের তারা কোথায় রাখবে? আবার আরাকান আর্মি প্রত্যাবাসনে রাজি হলেও তারা তো রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে পারবে না। তারা নিজেরাও অবৈধ সশস্ত্র বিদ্রোহী। আরাকান আর্মির উঠানে গিয়ে কোনো রোহিঙ্গা শান্তিতে থাকতে পারবে না।

জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়ার বাসিন্দা শাহজাহান চৌধুরী জানান, ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সরকারের ফেরত নেওয়ার কথা তিনি গণমাধ্যমে দেখেছেন। প্রধান উপদেষ্টা যদি মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ নিতে পারেন, সেটা হবে কক্সবাজারবাসীর জন্য সবচেয়ে খুশির খবর।

একই মত প্রকাশ করেন জেলা জামায়াতে ইসালামীর আমির ও টেকনাফের বাসিন্দা অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১ ল খ ৮০ হ জ র র হ ঙ গ আর ক ন আর ম র র খ ইন র জ য সরক র র র জন য পর ব শ বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

চলছে মহড়া, আলোর পথে যাত্রার আহ্বান থাকবে রমনার বটমূলে

আঁধার কাটিয়ে আলোর পথে যাত্রার আহ্বান নিয়ে এবারও নতুন বছরের শুরুতে রমনার বটমূলে হবে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী নববর্ষের অনুষ্ঠান। এবার অনুষ্ঠানের মূলভাব নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট বাংলা নববর্ষের সকালে এই অনুষ্ঠানের প্রথম আয়োজন করেছিল ১৯৬৭ সালে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সুচারু করে তুলতে দীর্ঘ প্রস্তুতি থাকে ছায়ানটের। অনুষ্ঠানের মূলভাব নির্ধারণ করা হয় প্রথমে। তারপর সেই ভাবনাকে পরিস্ফুটিত করে তুলতে চলে গান, আবৃত্তির জন্য কবিতা ও পাঠের জন্য লেখা নির্বাচন পর্ব। এরপর শুরু হয় মহড়া। এবারেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রতিপাদ্য নির্ধারণ, গান কবিতার বাছাই সব শেষ, চলছে নিয়মিত মহড়া।

আজ শনিবার বিকেলে ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে গিয়ে দেখা গেল রমেশ চন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনায়তনে পুরোদমে চলছে সম্মেলক গানের মহড়া। মেঝেতে মাদুর পাতা। সম্মেলক দলের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা বসে একের পর গেয়ে যাচ্ছিল, ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’, ‘মোরা সত্যের পরে মন আজি করিব সমর্পণ,’ ‘জয় হোক তব জয়’ গানগুলো। পরিচালনা করছিলেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী লাইসা আহমদ লিসা। সুরে, তালে বা উচ্চারণে ভুল হলে শুধরে দিচ্ছিলেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এবারের অনুষ্ঠানের মহড়া শুরু হয়েছিল তিন মাস আগে। তখন সপ্তাহে দুই দিন মহড়া হতো। ঈদের ছুটির পর থেকে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহড়া চলছে। মহড়ায় আরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, রেজাউল করিম ও সত্যম কুমার দেবনাথ।

এবার অনুষ্ঠানে শতাধিক শিল্পী অংশ নেবেন। তাঁদের মধ্যে শিশু-কিশোরের সংখ্যাই থাকবে বেশি। বিশিষ্ট শিল্পীদের কণ্ঠে থাকবে একক গান, পাঠ ও আবৃত্তি। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০টির মতো পরিবেশনা থাকবে। তবে সংখ্যা চূড়ান্ত করা হয়নি। যুগ্ম সম্পাদক পার্থ তানভীর নভেদ জানালেন, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, লোকসংগীত ও গণসংগীত থাকবে অনুষ্ঠানে। সম্মেলক গানের মধ্যে ‘ও আলোর পথযাত্রী’, ‘এই বাংলা রবি ঠাকুরের, এই বাংলা নজরুলের’, ‘আজ আইল বছর ঘুরে’ এই গানগুলো থাকবে।

রমনার বটমূলে নববর্ষের সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠান শুরু হবে সুপ্রিয়া দাসের পরিবেশনায় ভোরের রাগসংগীত দিয়ে। একক শিল্পীদের মধ্যে থাকবেন খায়রুল আনাম শাকিল, চন্দনা মজুমদার, লাইসা আহমদ লিসা, আবুল কালাম আজাদ, সেঁজুতি বড়ুয়া, সুমন মজুমদার প্রমুখ। আবৃত্তি করবেন জয়ন্ত রায়। অনুষ্ঠান বিরতিহীনভাবে চলবে দুই ঘণ্টা।

রমনার বটমূলে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হবে ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে। মঞ্চে চূড়ান্ত মহড়া হবে ১৩ এপ্রিল রোববার বিকেলে। এবার অনুষ্ঠানে পুরুষের পোশাক থাকবে সাদা পায়জামা ও মেরুন পাঞ্জাবি আর নারীদের মেরুন পাড়ের অফ হোয়াইট শাড়ি।

রমনার বটমূলে এবারও ছায়ানটের আয়োজনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হবে। এই অনুষ্ঠানের জন্য ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে চলছে মহড়া। ঢাকা, ৫ এপ্রিল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের প্রতি ‘ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল’ পুনর্বিবেচনার আহ্বান বিএনপির
  • বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে ‘মৌলবাদ’ শব্দ নিয়ে আপত্তি
  • শিশুদের ঝগড়ায় জড়ালেন বড়রা, সংঘর্ষে আহত ২০
  • চলছে মহড়া, আলোর পথে যাত্রার আহ্বান থাকবে রমনার বটমূলে
  • ‘৩২৯ উপজেলায় হচ্ছে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’
  • ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছাড়েন ১ কোটি ৭ লাখ সিমধারী
  • ঈদের ছুটিতে ১ কোটি ৭ লাখ সিমধারী ঢাকা ছেড়েছেন
  • ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছেড়েছেন ১ কোটি ৭ লাখ সিমধারী
  • ঈদের ছুটিতে ৭ দিনে ঢাকা ছাড়েন ১ কোটি ৭ লাখ সিমধারী