প্রাচ্যের গ্রেটা গার্বো, সুচিত্রা–রূপকথার শেষ হয় না
Published: 6th, April 2025 GMT
সেদিন কলকাতায় শীতের বেশ দাপট। রেকর্ড ঠান্ডা। স্পষ্ট মনে পড়ছে, অন্য দিনগুলোয় শীতে কাবু মানুষ রাস্তায় কম বের হতেন। কিন্তু কলকাতার গোর্কি সদনের পাশের রাস্তায়, মিন্টো পার্কের সামনে, বেসরকারি হাসপাতাল বেলভিউয়ের সামনের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। সেখানে জনসমুদ্র। কলকাতায় সেদিন একটা গান সারা দিনই শোনা গেছে, ‘আরও কিছুটা সময় না রহিতে…’।
২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারির কথা বলছি। সেদিন সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে পৃথিবীর বাতাসে শেষবারের মতো নিশ্বাস নেন সুচিত্রা সেন, পাড়ি দেন অনন্তলোকে। তবে বলতেই হয়, সেদিন কলকাতায় ফিরে এসেছিলেন উত্তম কুমারের সুচিত্রা; ‘হারানো সুর’-এর রমা, ‘সপ্তপদী’র রিনা ব্রাউন, ‘সাত পাকে বাঁধা’র অর্চনা, ‘উত্তর ফাল্গুনী’র দেবযানী, পান্না বাঈ বা সুপর্ণা। আমাদের পাবনার মেয়ে সুচিত্রা। আজ তাঁর দশম প্রয়াণদিবস।
‘ফিরে এসেছিলেন’ বলার কারণ, তিনি থেকেও ছিলেন না। তিনি ছিলেন, তবে কলকাতা তাঁকে দেখেনি। তাঁকে দেখা যায়নি নন্দনে, নিউমার্কেটে, ধর্মতলায়, সল্টলেক বা পার্ক সার্কাসে। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর তাঁকে দেখেননি কেউ।
তাই বলে কি সুচিত্রাকে জানেন না সেকাল কিংবা একালের বাঙালি? সুচিত্রাকে না জানাটাই বরং অসম্ভব। সুচিত্রা তো প্রজন্মের পর প্রজন্মের ক্র্যাশ। এ যুগে মাধুরীরা গর্ব করে বলেন, তাঁকে দেখতে সুচিত্রার মতো। এখনো শোনা যায়, শিশুরা খেলছে সুরে সুরে—‘আকাশ থেকে নেমে এল ছোট্ট একটা প্লেন/ সেই প্লেনে বসে ছিল লাল–টুকটুক মেম/ মেমকে আমি জিজ্ঞেস করলাম,/ ‘হোয়াট ইজ ইয়োর নেম?’/ মেম বলল, ‘মাই নেম ইজ সুচিত্রা সেন!’ দুই বাংলায় এতটা চর্চা আর কাকে নিয়ে হয়েছে?
এ কথা তো সবাই জানেন, সুচিত্রা তাঁর সম্মোহনী সৌন্দর্যের আগল ভাঙেননি জীবনকালে। নিজের চারদিকে আচমকা তুলে দিয়েছেন আকাশছোঁয়া, দুর্ভেদ্য এক পাঁচিল। যাতে কোনো অসতর্ক মুহূর্তে তিনি ধরা না পড়ে যান পাপারাজ্জির বাড়াবাড়ি কৌতূহলে।
সুচিত্রা সেনের সঙ্গে পরিচিতজনেরা বাসায় দেখা করতে আসতেন। বাসায় তিনি যেভাবে থাকতেন, অনেকটা সেভাবেই দেখা করতেন। বাড়তি সাজগোজ তাঁর থাকত না.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কলক ত
এছাড়াও পড়ুন:
অসীমে শূন্যের ভেতর উড়ে গেলেন কবি দাউদ হায়দার
নির্বাসিত জীবন। ফেরার আকাঙ্ক্ষা ছিল। তা আর হলো না। বিদেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। অসীমে শূন্যের ভেতর উড়ে চলে গেলেন কবি দাউদ হায়দার। স্থানীয় সময় গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় জার্মানির রাজধানী বার্লিনের এক প্রবীণ নিরাময়কেন্দ্রে তাঁর মৃত্যু হয়। কবির অনুজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলার অধ্যাপক আরিফ হায়দার সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দাউদের জন্ম ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, পাবনায়। সত্তর দশকের শুরুতে তাঁর কাব্যপ্রতিভার উন্মেষ। ১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক সংবাদে তাঁর দীর্ঘ কবিতা ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’ প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি ও সংগঠনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন।
ঢাকার এক কলেজ শিক্ষকের মামলায় ১১ মার্চ গ্রেপ্তার হন কবি। কিছু দিন পর মুক্ত হন। ১৯৭৪ সালের ২১ মে তাঁকে উড়োজাহাজে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের সহায়তায় পরে জার্মানিতে বসবাস শুরু করেন। দেশভ্রমণে পাসপোর্টের পরিবর্তে জাতিসংঘের বিশেষ ট্র্যাভেল পাস ব্যবহার করতেন। ১৯৮৯ সাল থেকে জার্মানিতে সাংবাদিকতা করতেন। শেষ বয়সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত কবিতা রচনায় ছেদ পড়েনি। সমকালে ‘ইউরোপের চিঠি’ নামে নিয়মিত কলাম লিখতেন।
তাঁর মৃত্যুতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলা ভাষাভাষীরা শোক জানিয়েছেন। আরেক কবি ফরিদ কবির সমকালকে বলেন, ‘ভাবা যায়, কবিতার একটা পঙ্ক্তির জন্য তাঁকে মাত্র ২২ বছর বয়সে দেশছাড়া হতে হয়েছিল! বাকি প্রায় ৫১ বছর কাটাতে হয়েছে প্রবাসে নিঃসঙ্গ!’
তাঁর প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’, ‘সম্পন্ন মানুষ নই’, ‘যে দেশে সবাই অন্ধ’, ‘সংস অব ডেস্পায়ার’, ‘সমস্ত স্তরে ক্ষতচিহ্ন’ উল্লেখযোগ্য।
কবির অনুজ অধ্যাপক আরিফ হায়দার জানান, রাষ্ট্রীয় প্রতিবন্ধকতার কারণে তাঁর মরদেহ এ দেশে আনা সম্ভব না। বার্লিনে সমাহিত করার আইনি প্রক্রিয়া চলছে। সেটা সম্পন্ন হতে দু-একদিন লাগতে পারে।