ছাত্রলীগের কোন্দল: ৫১ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ৭ খুন
Published: 6th, April 2025 GMT
৫১ বছর আগের কাহিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বড় খুনের ঘটনা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া আর কখনো ঘটেনি। নৃশংসতা ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, ঘটনায় সারা বাংলাদেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়। ঘটনাটি সেভেন মার্ডার বা সাত খুন নামে পরিচিতি পায়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগে সৃষ্টি হয় গভীর ক্ষত।
৪ এপ্রিল, ১৯৭৪ সাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাশাপাশি দুটি হল—মাস্টারদা সূর্য সেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল। আজও যেমন আছে, ৫০ বছর আগেও মোটামুটি তেমনই ছিল। গভীর রাতে সূর্য সেন হলের সাত ছাত্রকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মুহসীন হলে। টিভি রুমের সামনে সাতজনকেই গুলি করে খুন করা হয়। যাঁরা খুনে অংশ নিয়েছিলেন, প্রত্যেকে ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মী। যাঁরা খুন হয়েছিলেন, তাঁরাও প্রত্যেকে ছিলেন ওই সংগঠনের কর্মী বা অনুসারী।
গুলি দুই দফায় হয়েছিল। প্রথমে প্রত্যেকের মাথায় গুলি করা হয়। তারপর ব্রাশফায়ার করা হয়। বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস এম বাহালুল মজনুনসময়টি ছিল অস্থির। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাবলম্বী ছাত্রদের কাছে ছিল অস্ত্র। আগের বছর, অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন ভন্ডুল হয়ে হয়েছে। ক্যাম্পাসের বাইরে ঢাকা শহর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই নিয়মিত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে চলেছে। সাত খুনের ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোতে ছিলেন। তিনি গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। অন্যদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালও সঙ্গে ছিলেন।
সাত খুনের ঘটনায় বিচার হয়েছিল। বিচার শুরু হয়েছিল পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের আগেই। দোষী ব্যক্তিদের ২২ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে সবাইকে সাধারণ ক্ষমা দেখিয়ে মুক্ত করে দেওয়া হয়। মুক্ত হয়ে কেউ কেউ জিয়াউর রহমানের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন, কেউ তৈরি করেন নতুন রাজনৈতিক দল।
মাস্টারদা সূর্য সেন হল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন হল হয় ছ ল র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকানে স্বাধীন রাজ্য চায় জামায়াত
মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যকেন্দ্রিক সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গাদের এলাকায় স্বাধীন মুসলিম রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা সফররত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা এ প্রস্তাব দেন। রোববার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
জামায়াতে ইসলামীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের পেং জিউ বিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘বাংলাদেশে ১১ বা ১২ লাখ রোহিঙ্গা আছে; তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের খাদ্য, কাপড় ইত্যাদি দেওয়া কোনো সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া ও পুনর্বাসন করতে হবে। সে জন্য আমরা আরাকানকেন্দ্রিক সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গাদের এলাকায় “ইন্ডিপেনডেন্ট আরাকান স্টেট” করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
চীনকে কেন এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা। তিনি বলেন, চীন এখানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ, মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের বড় ধরনের সম্পর্ক আছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদল এই প্রস্তাব তাদের দেশের সরকারকে জানাবে বলে জানিয়েছে।
বৈঠকে চীনা প্রতিনিধিদলকে তিস্তা ব্যারাজ, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু এবং গভীর সমুদ্রবন্দরে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান আবদুল্লাহ মো. তাহের। তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
চীনের এই প্রতিনিধিদল তাদের দেশের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জামায়াতকে দাওয়াত দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানান জামায়াতের নায়েবে আমির। জামায়াতের পক্ষ থেকেও শিগগিরই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘তারা আমাদের দেশের জাতীয় নির্বাচন কখন, কীভাবে হতে পারে, তা জানতে চেয়েছে। আমরা জানিয়েছি, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জুনে নির্বাচনের কথা বলেছেন, আমরাও এ বিষয়ে একমত। তারা এই নির্বাচনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপে বিশ্বাস করে না বলে আমাদের জানিয়েছে।’