ক্যাম্পাসের কুকুরগুলো কি জনিকে মিস করবে
Published: 6th, April 2025 GMT
বছরের শেষ দিনে অনেকে যখন ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে দেখা গেল কুকুরের জন্য তহবিল (ফান্ড) সংগ্রহ করতে। জানা গেল, বছরের শেষ দিনে ক্যাম্পাসের কুকুরগুলোকে ভালোমন্দ খাওয়াতে চান তিনি। একটা দিন ওদের সঙ্গে কাটাতে চান। এই উদ্যোগে শামিল হয়ে গেলেন অনেকে। টাকাপয়সা যা উঠল, তা দিয়ে ছয় কেজি মুরগি ও আট কেজি চালের খিচুড়ি রান্না হলো। কুকুরগুলো যে আনন্দ পেল, আয়োজকদের আনন্দও কি তার চেয়ে কম?
এ রকম অসংখ্য উদ্যোগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী জনি রায়ের নাম। কীভাবে তিনি প্রাণী প্রেমে উদ্বুদ্ধ হলেন? জানতে ফিরে যেতে হবে জনির শৈশবে। ‘যখন ছোট ছিলাম, বাসায় একটা কুকুর পুষতাম। একদিন এক দুর্ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি হই। সে সময় এক লোক কুকুরটিকে পিটিয়ে কোমর ভেঙে ফেলে। এসবের কিছুই জানতাম না আমি। বাসায় এসে দেখি, এই অবস্থায়ও ও আমার কাছে এসে বসে আছে। এর কিছুদিন পর কুকুরটি মারা যায়। এই ঘটনা আমার মনে দাগ কেটে যায়। কুকুর বা প্রাণী নিয়ে কাজ করার আগ্রহ তখন থেকে তৈরি হয়’, বলছিলেন জনি।
ক্যাম্পাসে যেভাবে শুরুতখন কোভিডকাল। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, ক্যাফেটেরিয়া ও বেশির ভাগ খাবারের দোকান বন্ধ থাকায় কুকুরগুলোর বেহাল দশা। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একত্র হন। গড়ে তোলেন প্রাণী কল্যাণভিত্তিক সংগঠন চিটাগং ইউনিভার্সিটি অ্যানিমেল লাভারস সোসাইটি। জনি এই সংগঠনে যুক্ত হন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, আশপাশের হোটেল থেকে উচ্ছিষ্ট এনে খাওয়াবেন তাঁরা। কিছুদিন চলল এভাবে। পরবর্তী সময়ে জোগানের স্বল্পতা দেখা দিলে শিক্ষার্থীরা খাবার রান্না করে, দোকান থেকে রুটি কিনে, মুরগির উচ্ছিষ্ট অংশ সংগ্রহ করে কুকুরকে দেন। সে যাত্রায় প্রায় দেড় শ কুকুরের প্রাণ রক্ষা হয়।
খাবারের বন্দোবস্ত করা জনির একমাত্র কাজ নয়। সঙ্গে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, প্রতিষেধক (র্যাবিশ ভ্যাকসিন) দেওয়া, উদ্ধার অভিযান পরিচালনাও করেন তিনি। জনি রায় জানালেন, এখন পর্যন্ত ২৭টির বেশি কুকুরকে উদ্ধার, ৬০টির বেশি কুকুরকে প্রতিষেধক প্রদান ও ৮০টির বেশি কুকুরকে চিকিৎসা দিয়েছেন তিনি। আছে বিড়াল, শূকর ও শজারু নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতাও। এসব কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের লাসানি আরফিন, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের রেহেনুমা হক, পালি বিভাগের পিয়া মনি চাকমা, ইতিহাস বিভাগের কবির হাসান, উৎস মাহমুদ ও সাকিবুর রহমানও যুক্ত ছিলেন।
প্রয়োজনে প্রতিষেধক ও চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেন জনি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ক রগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করবে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন’
ক্যাম্পাসে মানবাধিকার সুরক্ষা ও সচেতনতা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন’। রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রার কথা জানানো হয়।
‘রাইজ ফর রাইটস (অধিকারের জন্য জাগো)’ স্লোগানকে সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার সংগঠনটির ২৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। রোববার সংবাদ সম্মেলনে ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নতুন এই সংগঠনের আহ্বায়ক হয়েছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদ সাকিব। সদস্যসচিব করা হয়েছে ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার বিভাগের শিক্ষার্থী পত্র নন্দিতাকে। এ ছাড়া ইসমাঈল নাহিদ যুগ্ম আহ্বায়ক আর রুকাইয়া রচনা যুগ্ম সদস্যসচিব হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে গণরুম, গেস্টরুম সংস্কৃতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আর কখনো এই সংস্কৃতি যেন ফেরত না আসে, সেই লক্ষ্যে কাজ করবে সংগঠনটি।
সংগঠনের আহ্বায়ক তাহমিদ সাকিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, সংখ্যালঘু অধিকারও জাতিগত সম্প্রীতি রক্ষা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সহায়তা ও প্রয়োজনে আইনি পরামর্শ প্রদানসহ ক্যাম্পাসে মানবাধিকার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করবে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন’। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটলে সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করবে বলেও জানান তিনি।
তাহমিদ সাকিব বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থী নিপীড়নের ঘটনাগুলো আমরা দেখেছি। বিভিন্ন সময় যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেগুলোর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা আমরা দেখিনি। নারী শিক্ষার্থীরা এখনো ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। অসংখ্য নারী নিপীড়নের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের ঘটনা আমরা দেখি না। এই সংগঠনটি এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্যসচিব পত্র নন্দিতা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কম নয়, বরং অহরহ ঘটে। বিশেষ করে রাজনৈতিক পরিসরে। এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতেও এটা বিদ্যমান। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি, ডকুমেন্টেশন এবং অধিকার আদায়ে কাজ করবে তাঁদের এই সংগঠন।
আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে আরও আছেন তাপসী রাবেয়া, হুরে জান্নাত, তাজফিহা উখরোজ, সামিয়া মাসুদ, সুরমি চাকমা, নাফিসা নুজহাত, ইসরাত জাহান, আবদুল্লাহ আজিমসহ আরও অনেকে।