শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে মেলায় জুয়ার আসরে অভিযানের সময় হামলায় পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাইকুড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন ঝিনাইগাতী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. মনিরুজ্জামান, কনস্টেবল তাজুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও ফরহাদ আলী। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর পাইকুড়া বাজারে স্থানীয়ভাবে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। এবার মেলায় ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ভাই সুলতান, ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি সদস্য আসাদ আলী ও স্থানীয় ছাত্রদল নেতা আনন্দের তত্ত্বাবধানে জুয়ার আসর বসছে। খবর পেয়ে গতকাল সন্ধ্যায় থানার পুলিশ সদস্যরা সেখানে অভিযান চালাতে যান। এ সময় আসাদ আলী ও আনন্দর নেতৃত্বে স্থানীয় ২০ থেকে ৩০ জন পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করেন। এ ঘটনায় এসআই হারুন অর রশীদ, এএসআই মনিরুজ্জামানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন। হামলার ঘটনার পরপরই সুলতান ও আসাদ আলী পালিয়ে যান।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য সাবেক ইউপি সদস্য আসাদ আলীর মুঠোফোনে কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া সুলতানও পলাতক থাকায় তাঁদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় ছাত্রদল নেতা আনন্দ মুঠোফোনে বলেন, জুয়ার আসর বা পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন।

ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল আমিন গতকাল রাত ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, পাইকুড়া বাজারে হামলায় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা প্রদান ও পুলিশ সদস্যদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগে থানায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আটক করতে অভিযান অব্যাহত আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল শ সদস য জ য় র আসর

এছাড়াও পড়ুন:

আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে দুটি চিঠি দেবে বাংলাদেশ

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এরপর সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা জানাতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে দুটি চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। খবর বাসসের

রোববার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরে আয়োজিত এক পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। আরেকটি চিঠি দেওয়া হবে বাণিজ্য উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআর’কে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে পর্যালোচনা সভায় চারজন উপদেষ্টা, চারজন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলী-সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ, ১০ জন সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। 
বৈঠক শেষে চারজন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে যে দুটি চিঠি দেওয়া হবে তাতে কী থাকবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বৈঠকে উপস্থিত সবাই তাদের মতামত দিয়েছেন। বাংলাদেশ কী কী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করছে, চিঠিতে সেগুলোর উল্লেখ থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, চিঠিতে যাই থাকুক, তা হবে ব্যবসাবান্ধব। সেখানে বাংলাদেশের ব্যবসার স্বার্থ দেখা হবে। দুই দেশ যাতে সমানভাবে লাভবান হতে পারে।

প্রেস সচিব বলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে আমাদের ব্যবসা আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ নিয়ে বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা চারটি বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এক. যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে হবে। দুই. বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সক্ষমতা অন্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় আরও বাড়ানো হবে, যাতে করে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ মনে করে বাংলাদেশের পণ্য অন্য দেশের তুলনায় ভালো। তিন. যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুধু পণ্য নয়, অন্য সেবাও আমদানি করা হবে। চার. যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অশুল্ক বাধা দূর করা হবে। আর সেটি আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেন, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসে কথা বলেছেন। সেখান থেকে যে সংকেত পাওয়া গেছে, তাতে বাংলাদেশের চিন্তাধারার সঙ্গে তাদের মিল রয়েছে। আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে করণীয়গুলো চূড়ান্ত করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক যেন রক্ষা পায়, সেই চেষ্টা করা হবে জানিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকের মজুরি সর্বনিম্ন জায়গায় রয়েছে। এর চেয়ে কমানো যাবে না। শ্রমিকের দিক থেকে খরচ না কমিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপরে জোর দেওয়া হবে। একই সঙ্গে অশুল্ক বাধা দূর ও বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।’

ব্যবসায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ককর আরোপের পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে; তাতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ে স্বস্তি এসেছে। বোঝা যাচ্ছে, সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে বাংলাদেশ আর কী কী জিনিস কিনতে পারে সেই বিষয়ে নজর দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

একইসঙ্গে বাংলাদেশের জন্য পোশাক খাতের বাইরে নতুন অনেক দুনিয়া আছে উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, সেসব খুঁজে বের করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ