শর্ত পূরণ হলেই জুনে পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ঋণের দুই কিস্তির অর্থ। শর্ত পূরণে বাংলাদেশ কতটুকু অগ্রগতি করেছে তা খতিয়ে দেখতে আইএমএফ এর একটি প্রতিনিধিদল এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের উপরই নির্ভর করছে সংস্থাটির সঙ্গে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি আগামী জুনে এক সঙ্গে ছাড় করবে কি না।

শনিবার (৫ এপ্রিল) আইএমএফ মিশনটি দুই সপ্তাহের সফরে ঢাকায় এসেছে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ (রবিবার) সকালে অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করবে প্রতিনিধিদলটি। এর আগে তারা  অর্থ বিভাগের সচিবের  সঙ্গে প্রারম্ভিক একটি সভায় মিলিত হবেন। এ তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ সফরে আইএমএফের দলটির সঙ্গে অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সঙ্গে সভা  হওয়ার কথা রয়েছে। 

এ ছাড়া তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সভা হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড.আহসান এইচ মনসুর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সঙ্গে।

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ঋণ কর্মসূচি চালু হওয়ার পর আইএমএফ থেকে তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। বিপত্তি দেখা দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের আগে। যদিও সরকার আশা করছে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে আগামী জুনে।

ঈদের ছুটির আগে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফের সঙ্গে এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থ উপদেষ্টা বলেছিলেন, বাজেট সহায়তার জন্যই আইএমএফের ঋণ লাগবে। এ কারণেই বাংলাদেশ সরকার ও আইএমএফ যৌথভাবে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের বিষয়ে সম্মত হয়।

জানা গেছে, আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি থেকে দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পেতে বাংলাদেশের সামনে  তিনটি বাধা রয়েছে। এসব বাধা অতিক্রম করতে না পারলে আইএমএফের কিস্তি পাওয়া কঠিন হবে। শর্তগুলো হলো মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়তি রাজস্ব আদায় ও এনবিআরের রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করা।

তবে দাতা সংস্থাটির ঋণ কর্মসূচির কিছু শর্ত পরিপালন নিয়ে এরই মধ্যে সরকারের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। সংস্থাটির শর্তের মধ্যে রয়েছে ভর্তুকি কমিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো। এছাড়াও ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার শর্তও রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের শর্ত পরিপালন করা সরকারের জন্য খুবই কঠিন। এক্ষেত্রে সরকার আরো সময় নিতে চায়।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পাশাপাশি ব্যাংক খাত সংস্কারে বেশকিছু শর্তও রয়েছে আইএমএফের পক্ষ থেকে। যদিও দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার না কমে উল্টো অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্ত পরিপালনে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। আর রাজস্ব আদায়ের শর্ত পূরণে এনবিআরের অবস্থান ভালো নয়। চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যদিও আইএমএফকে জানানো হয়েছে, এসব শর্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করার পদক্ষেপ ছাড়া বাকি দুটির বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। শর্ত পূরণে বাংলাদেশ ও আইএমএফ যদি নিজ নিজ অবস্থানে অনমনীয় থাকে, তাহলে আর কোনো কিস্তি নাও মিলতে পারে। তখন বাংলাদেশের জন্য দেখা যাবে নতুন জটিলতা।  এর ফলে  অন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোও তখন বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে রক্ষণশীল হয়ে যেতে পারে।

জানা গেছে, সফরের শেষ দিন ১৭ এপ্রিল অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের আরও একটি সভা হবে। সভা শেষে সেদিন সংবাদ সম্মেলন করবে সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিদল। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আইএমএফের প্রতিনিধিদল সফর শেষ করবে। তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আগামী জুনে আইএমএফ’র বোর্ড সভায় ঋণের কিস্তি অনুমোদনের বিষয়টি উত্থাপিত হবে।

উল্লেখ্য, চতুর্থ কিস্তির জন্য দেওয়া শর্তের বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখতে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ঢাকা সফরে আসে আইএমএফের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল। গত ৫ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের সভায় এ প্রস্তাবগুলো উঠার কথা ছিল। পরে তারিখটি পিছিয়ে করা হয় ১২ মার্চ। ওই তারিখেও প্রস্তাবটি ওঠেনি। তা আবার  পিছিয়ে আগামী জুন করা হয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/টিপু  

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইএমএফ র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাড়তি রাজস্ব আদায়, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণ কমানো নিয়ে মূল আলোচনা

অনলাইন—আইএমএফ মিশনের সফর/ বাড়তি রাজস্ব আদায়, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণ কমানো নিয়ে মূল আলোচনা

অনলাইন—আইএমএফ মিশনের সফর/ বাড়তি রাজস্ব আদায়, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণ কমানো নিয়ে মূল আলোচনা

আইডি: ০৩০৫৩

সেকশন:

মেটা:

ট্যাগ: ।

ছবি: বাংলাদেশ সরকার ও আইএমএফের লোগো।

চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের আগে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের নানা দিক পর্যালোচনা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি মিশন এখন ঢাকার পথে রয়েছে। মিশনটি আগামীকাল রোববার লাগাতার বৈঠক শুরু করবে। দুই সপ্তাহ ধরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক চলবে। মার্কিন ডলার অর্থাৎ মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা আদায়, ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে আনা—এ বিষয়গুলো এবারের আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, আইএমএফ মিশন প্রথম দিন বৈঠক করবে সাতটি। সচিবালয়ে সকাল সোয়া ৯টায় প্রথম বৈঠকটি হবে অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও তাঁর দলের সঙ্গে। এতে আইএমএফ মিশন তাদের সফরের উদ্দেশ্য তুলে ধরবে। এরপরের বৈঠকটি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। এ বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানেরও যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

এরপর অর্থ বিভাগের সঙ্গে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট, সামষ্টিক অর্থনীতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংক খাতের তারল্যপ্রবাহ ও ঋণ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করবে আইএমএফের দলটি। অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নররা এসব বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন।

জানতে চাইলে আইএমএফের ঢাকা কার্যালয়ের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে আজ শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইএমএফ মিশন আজ আসবে। এ মিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।’ মিশনপ্রধান ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হো’স হো পদকজয়ী অর্থনীতিবিদ।

আইএমএফের এবারের মিশন আগামীকাল শুরু হয়ে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। বৈঠকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের পাশাপাশি এনবিআর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ এসব দপ্তরের সঙ্গে হবে বলে জানা গেছে।

সব বৈঠক শেষ করে ১৭ এপ্রিল প্রেস ব্রিফিং করবে আইএমএফের মিশন। সেদিন তারা আবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও বৈঠক করবে।

আইএমএফের সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচিটি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তিতে পাওয়া গেছে ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে মোট ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। কর্মসূচিটির আওতায় এখন বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। বিপত্তি দেখা দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় নিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য আশা করছে, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ আগামী জুনে একসঙ্গে পাওয়া যাবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনবিআরের বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার পাশাপাশি মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পক্ষে আইএমএফ। আবার ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দামও বৃদ্ধির পক্ষ নেবে সংস্থাটি। মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হতে পারে। তবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির উপযুক্ত সময় এখন নয়। আইএমএফের উচিত বাংলাদেশের বাস্তবতা বোঝা। উভয় পক্ষ ছাড় দিয়ে হলেও ঋণ কর্মসূচিটি বজায় রাখলে ভালো হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল, আইএমএফের সন্তোষ প্রকাশ: অর্থ উপদেষ্টা
  • ভ্যাট সিঙ্গেল রেটে একবারে আনা সম্ভব নয়: অর্থ উপদেষ্টা 
  • রাজস্ব পরিস্থিতি ও খারাপ ঋণ নিয়ে উদ্বেগ আইএমএফের
  • ভ্যাট সিঙ্গেল রেটে একবারে আনা সম্ভব না: অর্থ উপদেষ্টা 
  • চলমান ঋণের শর্ত পর্যালোচনায় বৈঠক আজ
  • বাড়তি রাজস্ব আদায়, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণ কমানো নিয়ে মূল আলোচনা
  • আজ ঢাকা আসছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল
  • জুনেই ঋণের দুই কিস্তি ছাড়ের আশায় সরকার
  • শনিবার ঢাকায় আসছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল