মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নাম টেসলা। আর তাই টেসলা নামটির সঙ্গে আমরা অনেকেই বেশ পরিচিত। বিশ্বের অন্যতম বড় এই বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার নামে।

ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার বৈদ্যুতিক প্রকৌশলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সার্বিয়ান-আমেরিকান নিকোলা টেসলা বেশি খ্যাতি পেয়েছেন বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থায় এসি (অল্টারনেটিং কারেন্ট) উদ্ভাবন করে। টেসলার পেটেন্ট ও তাত্ত্বিক কাজ তারহীন যোগাযোগ ও রেডিও উদ্ভাবনের ভিত তৈরি করে দিয়েছে। টেসলা প্রথম বেতারনিয়ন্ত্রিত (আরসি) যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। টেসলাই প্রথম ব্যক্তি, যিনি এক্স-রে ছবি তুলেছিলেন।

জীবদ্দশায় কিছুটা আড়ালে থাকলেও টেসলার উদ্ভাবন আধুনিক পাওয়ার গ্রিডের ভিত্তি হিসেবে রয়ে গেছে। উনিশ শতকের শেষের দিকে টেসলার এসি সিস্টেম আরেক বিজ্ঞানী থমাস এডিসনের ডাইরেক্ট কারেন্টের (ডিসি) সঙ্গে বেশ প্রতিযোগিতা করে। তখন দুই বিজ্ঞানীর মধ্যে বেশ প্রতিযোগিতাও হয়েছিল। বিদ্যুৎ ছাড়াও বেতার শক্তি সঞ্চালনের প্রতি টেসলার আগ্রহ ছিল। এ ক্ষেত্রে তাঁকে কিংবদন্তি বলা হয়। তিনি এমন একটি বিশ্ব কল্পনা করেছিলেন, যেখানে বিদ্যুৎ বাতাসের মাধ্যমে সঞ্চালিত হবে। তিনি ওয়ার্ডেনক্লিফ টাওয়ার নামে একটি পরীক্ষামূলক বেতার শক্তি সঞ্চালন কেন্দ্র চালু করেছিলেন। সেটি ছিল তাঁর সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রচেষ্টার মধ্যে একটি। তবে শেষ পর্যন্ত আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তা সম্পূর্ণ করতে পারেননি টেসলা। স্মার্টফোন ও বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য বর্তমানে ব্যবহৃত ওয়ারলেস চার্জিং প্রযুক্তি টেসলার প্রাথমিক ধারণার ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছে।

বিজ্ঞানী টেসলা বেতার যোগাযোগ, অটোমেশন, রোবোটিকসসহ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো অনেক প্রযুক্তির ধারণা দিয়েছেন। ১৯২৬ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, একদিন মানুষ ছোট যন্ত্র বহন করবে, যা তাদের বিশ্বজুড়ে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগের সুযোগ করে দেবে। টেসলার সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হওয়ায় আমাদের হাতে শোভা পাচ্ছে স্মার্টফোন।

সূত্র: ব্রিটানিকা

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ন্যায্য নগর গঠনে ভূমিকা রাখবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি: ডিএনসিসি প্রশাসক

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, “ন্যায্য নগর গঠনে ভূমিকা রাখবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি।”

শুধু সরকার বা সিটি কর্পোরেশন নয়, নাগরিকদের সঙ্গে নিয়ে ন্যায্য নগর প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) গুলশানের নগর ভবনে অনুষ্ঠিত ডিএনসিসি এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর যৌথ আয়োজনে ‘ন্যায্য নগর গঠনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা’ শীর্ষক একটি পলিসি ডায়ালগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রশাসক।

আরো পড়ুন:

ডিএনসিসি প্রশাসকের সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ 

যত্রতত্র ময়লা না ফেলার আহ্বান ডিএনসিসি প্রশাসকের

স্টেট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকীর সভাপতিত্বে পলিসি ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “ঢাকা শহরের বেশ কিছু পরিকল্পিত এলাকা আছে যেখানে বিল্ডিংগুলোর উচ্চতা কাছাকাছি, ফলে সেই বিল্ডিংগুলোর সোলার ক্লিয়ারেন্স অনেক বেশি। সেই এলাকাগুলোতে পরিকল্পিতভাবে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে নিজস্ব বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব। পাশাপাশি ঢাকার আশপাশের উদ্ধারকৃত নদীর পাড়কে কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব।”

তিনি জানান, রুফটপ সোলার প্যানেল ব্যবহারকারীদের হোল্ডিং ট্যাক্স এর ওপর ৫ শতাংশ কর রেয়াত দেওয়ার কথা ভাবছে সিটি কর্পোরেশন।

পলিসি ডায়ালগের মূল প্রবন্ধে ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, “জীবনের মান সূচকে ঢাকা শহর শেষ দিক থেকে ৪র্থ, বিশ্বের সবচেয়ে ধীর গতির শহর, বায়ু দূষণের তালিকায় শীর্ষে, দূষিত শহরের তালিকায় ৬ষ্ঠ, বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকার ১ম সারিতে, বিশ্বে যানজটের সূচকে ৫ নম্বরে, পৃথিবীর ৪র্থ ঘনবসতিপূর্ণ শহর, শব্দ দূষণেও শীর্ষে ঢাকা এবং স্বাস্থ্য সেবার সূচকে শেষের দিকে। আর এই দূষণগুলো থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায় হতে পারে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি।”

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, পরিবহন ও শিল্প খাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে আমরা একটি সুস্থ ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।”

ডায়ালগে আরো অংশ নেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এবং চেয়ারম্যান ড. এম. শহীদুল ইসলাম, বিআইপি এর উপদেষ্টা বোর্ডের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির সাবেক ডিন ড. ইজাজ হোসে, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ গবেষণা কেন্দ্রের (সিথ্রিইআর) সমন্বয়ক (অপারেশনস) মিসেস রৌফা খানম, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, (ডব্লিউবিবিটি) এর পরিচালক গাউস পিয়ারী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশেদুজ্জামান মজুমদার, ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ, ইয়ুথনেট গ্লোবাল এর সমন্বয়ক সোহানুর রহমান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর রিসার্চ লিড ইঞ্জিনিয়ার মারজিয়াত রহমান, ব্রাইটার্সের চেয়ার ফারিহা সুলতানা অমি, ইকো-নেটওয়ার্ক গ্লোবালের নির্বাহী পরিচালক শামীম আহমেদ মৃধা, ন্যাকমের পরিচালক রাশিদুজ্জামান আহমেদ, পিওর আর্থ বাংলাদেশের কনসালটেন্ট আহমেদ শামীম আল রাজি, সাসটেইনেবল রিসার্চ অ্যান্ড কনসালটেন্সি লিমিটেডের (এসআরসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু জুবায়ের, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের গবেষণা ও বাস্তবায়ন প্রধান মো. ইকবাল ফারুক, ও. ক্রিডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাত হোসেন, সচেতন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, বারসিকের প্রজেক্ট ম্যানেজার কামরুজ্জামান সাগর, ইকিউএমএস কনসাল্টিংয়ের টেকনিক্যাল ম্যানেজার (টেস্টিং) আহমেদ জুবায়ের, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, অ্যাকশন এইডের প্রোগ্রাম অফিসার হামিদুল ইসলাম এবং মিশন গ্রিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান রনি।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ