রাজধানীর পল্লবী থানার পূর্ব কুর্মিটোলা ক্যাম্প। সারি সারি টিনের ঘরে বসবাস স্বল্প আয়ের মানুষের। প্রধান সড়কসংলগ্ন কাকলী টি-কফি হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে সরু গলি গেছে ক্যাম্পে। গলি ধরে একটু এগিয়ে দেখা গেল, দু’জন নারী-পুরুষ কথা বলছে। মিনিট দুই বাদে নারীর হাতে টাকা গুঁজে কাগজে মোড়ানো বস্তু নিয়ে সটকে পড়ল পুরুষ। একটু দূরে দাঁড়িয়ে ক্যাম্পের এক যুবক বললেন, কিছুক্ষণ দাঁড়ান, অনেককে দেখতে পাবেন। ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। এটা গোপন কিছু নয়। হরহামেশা চলে। তারা মাদক কারবারি শাহাজাদি বেগমের সহযোগী। গলিতেই শাহাজাদির বাড়ি।
শুধু ক্যাম্পের এ গলি নয়, পল্লবী থানা এলাকায় আরও একাধিক স্পটে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করতে দেখা যায়। ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা কেনাবেচায় অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষ। সন্তান নিয়ে তারা চিন্তিত। রয়েছে চুরি-ছিনতাইয়ের শঙ্কা। কারণ, মাদক কেনার টাকা জোগাড়ে চুরি-ছিনতাই করে মাদকাসক্তরা।

স্থানীয়রা বলছেন, সকালে ঘর থেকে বের হলেই চোখে পড়ে মাদক কেনাবেচা। সন্ধ্যায় কিংবা রাতে ঘরে ফেরার সময়েও একই চিত্র। মাঝেমধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ও পুলিশ অভিযান চালালেও কমছে না বিস্তার।

ডিএনসি ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) ডিএনসির ঢাকা উত্তর মহানগর কার্যালয় পল্লবী থানা এলাকায় অন্তত ১০ বার অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে ১১ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১১ গ্রাম হেরোইন, ৪১০ ইয়াবা, ফেনসিডিল ২ বোতল ও ২৭৫ গ্রাম গাঁজা জব্দ করা হয়। অন্যদিকে দুই মাসে পল্লবী থানা পুলিশ মাদক মামলা করেছে ৪৫টি। গ্রেপ্তার করেছে ৭৯ জনকে। তাদের কাছ থেকে ৮৯ গ্রাম হেরোইন, ৮ কেজি ৯৩০ গ্রাম গাঁজা, ২ হাজার ৭০০ ইয়াবা, ৬৭ বোতল ফেনসিডিল ও তিন লিটার চোলাই মদ জব্দ করা হয়।
পুলিশ বলছে, পল্লবী থানা পুলিশ অর্ধশতাধিক স্থানীয় মাদক কারবারির তালিকা করেছে। প্রত্যেকেই একাধিক মাদক মামলার আসামি। পল্লবী এলাকার অন্যতম মাদক কারবারি ফাতেমা খাতুন ওরফে ফতেহ। ফতু নামেই সে বেশি পরিচিত। পল্লবীর বাউনিয়াবাদ বি ব্লকের ৬ ও ৭ নম্বর লাইনে তার মাদক কারবার। এটি মাদকের গলি হিসেবেই পরিচিত। ফতুর পরিবারের প্রায় সবাই মাদক কেনাবেচায় জড়িত। তারা বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে কেনাবেচা করে। নিজের বাড়ির সামনে আরেকটি বাড়ি বন্ধক নিয়েছে শুধুই মাদক কারবারের জন্য।

সম্প্রতি সরেজমিন কুর্মিটোলা ক্যাম্পের গলিতে মাদক কেনাবেচার চিত্র পাওয়া যায়। টিনের ঘরের দরজায় দু’জন তরুণ ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজা নিয়ে দাঁড়িয়ে। বাইরে থেকে লোকজন এসে টাকা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গলির অন্তত তিন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় সমকাল প্রতিবেদকের। তারা জানালেন, ফতু ২৪ ঘণ্টা মাদক কেনাবেচা করে। তাকে এ কারবার বন্ধ করতে বলার মতো দুঃসাহস নেই ক্যাম্পবাসীর। কারণ, ফতু সাঙ্গোপাঙ্গ পোষে। হুকুম দিলেই তারা যে কারও ওপর হামলা করে। বলা চলে, ভয়ে সবাই মাদক কারবার মেনে নিয়েছে।
কালশী মোড়ের অদূরে ২২ তলা নামক এলাকায় ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করে কোহিনুর ও শাহিনুর। তারা পাইকার কারবারি মো.

জসিমের কাছ থেকে এসব সংগ্রহ করে। কালশীর কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পের ই ব্লকের ৫ নম্বর গলিতে ইয়াবা বিক্রি করে টুনটুন, রানা, রাজন, কলিম, মোহাম্মদ আলী ও আরিফ।

পল্লবী থানা পুলিশের কাছে অর্ধশতাধিক মাদক কারবারির তালিকা রয়েছে। শুরুতেই রয়েছে পূর্ব কুর্মিটোলা ক্যাম্পের শাহাজাদি বেগম, সেকশন ১০-এর এ ব্লকের ১৮ নম্বর গলির মফিজ, সেকশন-১১-এর বি ব্লকের লিটন, ১২ নম্বর সেকশনের কুর্মিটোলা ক্যাম্পের ই ব্লকে শাহানাজ, মোহাম্মদ আলামিন, লাইলী, মর্জিনা, ফজর আলী মাতব্বর, রাজ্জাক ও রনি, ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকে মো. রিপন, জামিলা বেগম, সাইমা বেগম, মুন্না, দুলারা, ডলার, মো. আনোয়ার, নওশাদ, মিল্লাত ক্যাম্পে জুম্মন, কাহানা, রহমত, বিজলী, সাব্বো, সনি, বাউনিয়াবাঁধে ফতু, হুমায়ন, রহমান, আমির, মুসা, হারুন ও স্বপন এবং ইরানি ক্যাম্পের দেলোয়ার। তাদের প্রত্যেকর বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।

পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম সমকালকে জানান, বস্তি এলাকায় মাদকের উৎপাত বেশি। তারা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। প্রতিদিনই মাদক কারবারি ও মাদকাসক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ বলেন, গোপনে অনেকে সক্রিয় থাকলেও প্রকাশ্যে বিক্রির তথ্য নেই। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক রব র র এল ক য় হ র ইন স কশন ড এনস

এছাড়াও পড়ুন:

ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে মামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক: ফারুকী

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর মিরপুরে মাহফুজ আলম শ্রাবণ হত্যার অভিযোগে অভিনেতা ইরেশ যাকেরসহ ৪০৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।‎ গত ২০ এপ্রিল নিহতের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন।

ইরেশ যাকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় বিনোদন অঙ্গনের অনেক তারকারাই কথা বলছেন। এবার সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সোমবার (২৮ এপ্রিল) সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এ সময় ইরেশ যাকেরের মামলার বিষয়টি উঠে আসে।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, এখন নিজে সরকারের অংশ; অ্যাক্টিভিসস্ট নই। যে কারণে কথা কম বলে কাজ বেশি করতে হবে। ইরেশ যাকেরকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। জানি, তিনি জুলাইয়ের আন্দোলনেও জড়িত ছিলেন। ফলে তার বিরুদ্ধে এই মামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে করা মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা করেছেন একজন ব্যক্তি। এটি রাষ্ট্রপক্ষ কিংবা সরকারের দেওয়া মামলা না। এখন মামলা করার স্বাধীনতা পেয়েছি সবাই। কেউ কেউ এটার অপব্যবহার করছে। আমি বিশ্বাস করি পুলিশ এটির সঠিক তদন্ত করে, যেটি সত্য সেটির পক্ষে থাকবে আর যেটি মিথ্যা সেটি বাতিল করে দেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ